চিকিৎসকরা আগেই জানিয়েছেন, প্রাথমিক উদ্বেগ কাটিয়ে আপাতত ভালো আছেন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। রাতে ভালো ঘুম হয়েছে তার।
এবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'জি নিউজ' জানিয়েছে, সৌরভের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করতে সোমবার (৪ জানুয়ারি) কলকাতায় আসছেন প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী। অবশ্য তিনি এবং তার দল আগেই জানিয়েছেন, সৌরভের বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন নেই।
শনিবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে এনজিওপ্ল্যাস্টি হয় প্রিন্স অব ক্যালকাটার। বসানো হয় একটা স্টেন্ট। তারপর তিনি ক্রমে ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে হার্টে ৯০ ভাগ ব্লকেজ থাকায় আরও দুটো স্টেন্ট বসতে পারে বলে জানানো হয়েছে। তবে তা নিয়ে সোমবার (৪ জানুয়ারি) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আট সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। আর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন দেবী শেঠী।
এর আগে শনিবার সৌরভের করোনা টেস্ট করা হয়। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। রাতে জ্বরও আসেনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পরের রাতটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে গত রাত একেবারে ঘটনাবিহীনভাবে কেটেছে। ভালোভাবে ঘুমিয়েছেন সৌরভ। সকালে প্রাতরাশ সেরেছেন। শনিবার রাতে হালকা ডিনারও করেছেন তিনি।
সকালের রুটিন ইসিজি রিপোর্টে কোনো অস্বাভাবিকত্ব ধরা পড়েনি। রক্তচাপের মাত্রা এবং রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেলও স্বাভাবিক। তবে প্রতি মিনিটে ২ লিটার করে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে।
সৌরভের ব্যক্তিগত চিকিৎসক সপ্তর্ষি বসু জানিয়েছেন, চিকিৎসায় ভালোভাবেই সাড়া দিচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। গল্প করছেন। সকালে কাগজ পড়েছেন। তবে সৌরভের বাকি যে দুটি ধমনীতে ব্লকেজ আছে, তাতে বাইপাস সার্জারি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল। তাতে স্টেন্ট বসানো হবে।
চিকিৎসক স্বরোজ মণ্ডল জানান, খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছেন সৌরভ। তবে আরও সপ্তাহখানেক হাসপাতালে থাকতে হবে। তারপর একমাসের মতো বাড়িতে টানা বিশ্রামে থাকতে হবে। সেই বিশ্রাম পর্ব কাটিয়ে আবারও নিজের দৈনন্দিন কাজ শুরু করতে পারবেন তিনি।
শনিবার (০২ জানুয়ারি) বেলা ১টায় বুকে ব্যথা নিয়ে আচমকা হাসপাতালে ভর্তি হন সৌরভ গাঙ্গুলী। তাকে দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি উডল্যান্ডস হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার শারীরিক ব্যাপারে বিস্তারিত খতিয়ে দেখে জানান ‘মাইল্ড কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়েছে সৌরভের। ভর্তির সময় সৌরভের পালস ছিল মিনিটে ৭০ এবং প্রেসার ছিল ১৩০ বাই ৮০। ইকোকার্ডিওগ্রাম ও এনজিওগ্রাম করে তার ধমনিতে ব্লকেজ ধরা পড়ে। তার চিকিৎসায় গঠন হয়েছে ৫ সদস্যের টিম। এই দলকেই পরামর্শ দেবেন ডা. দেবী শেঠী।
ডা. দেবী শেঠী বাংলাদেশেও অনেক পরিচিত নাম। তিনি ভারতের নারায়ণা ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। ২০১৯ সালের জুনে তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বিশ্বমানের ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সেবা চালু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ। ইতোমধ্যে বিভাগটির নামকরণ করা হয়েছে ইম্পেরিয়াল-নারায়ণা কার্ডিয়াক সেন্টার। একই বছর মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় ঢাকায় এসেছিলেন দেবী শেঠী। এছাড়া দেশে করোনা মহামারি শুরুর প্রাক্কালে বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরামর্শও দিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২১
এমএইচএম