শুরুটা হয়েছিল গত অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগে। এত বড় বৈশ্বিক আসরের আগে হুট করেই ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ঘরানার নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন বিরাট কোহলি।
আজ শনিবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক বিবৃতি প্রকাশ করে নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন কোহলি। এর আগে ধাপে ধাপে বাকি দুই ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। এর মধ্যে ওয়ানডে ফরম্যাটের নেতৃত্ব থেকে তাকে একপ্রকার সরিয়েই দেয় ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। অবশ্য এই দুই ফরম্যাটেই ভারতকে কোনো শিরোপা এনে দিতে পারেননি 'অধিনায়ক' কোহলি।
সংক্ষিপ্ত দুই ফরম্যাটে কোহলির নেতৃত্ব ছাড়ায় কোনো আড়ম্বর ছিল না। তার বদলে ছিল বিতর্ক। দক্ষিণ সফরের আগে বিসিসিআই জানিয়ে দিয়েছিল, যেহেতু সাদা বলের ক্রিকেটে দুইজন অধিনায়ক রাখা সম্ভব নয়, তাই ওয়ানডেতেও রোহিত শর্মাকেই অধিনায়ক করা হলো। এরপর বিষয়টি নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে। বিতর্কে জড়িয়েছেন কোহলি ও বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলীও। বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কোহলিকে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছাড়তে বারণ করা হয়। কিন্তু রাজি না হওয়ায় তাকে নাকি সাদা বলের ক্রিকেটে দুই অধিনায়ক রাখা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোহলি নাকি নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।
এরপর বোর্ডের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দেন কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগে তিনি দাবি করেন, বোর্ডের পক্ষ থেকে নাকি কোনো অনুরোধ করা হয়নি। তার সিদ্ধান্ত নাকি এককথায় মেনে নিয়েছিলেন বোর্ড কর্তারা। কিন্তু বোর্ড সভাপতি গাঙ্গুলীর বক্তব্য ছিল, তিনি নিজেই এ ব্যাপারে কোহলির সঙ্গে কথা বলেছেন। কোহলি নিজেও নাকি আপত্তি জানাননি। কিন্তু কোহলি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, দল নির্বাচনের মাত্র দেড় ঘণ্টা আগে তাকে ওয়ানডে নেতৃত্ব হারানোর খবর জানানো হয়।
আজ কোহলি তৃতীয় ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণাও দিয়ে দিলেন। তবে এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে প্রথম ম্যাচ জিতেও তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারে ভারত। ফলে প্রোটিয়াদের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায় তাদের। এরপরই কি তাহলে কোহলি বুঝতে পেরেছিলেন এই ফরম্যাটের নেতৃত্ব হারাতে যাচ্ছেন তিনি? তাই হয়তো বোর্ডের অপেক্ষায় না থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেলন তিনি।
বাকি দুই ফরম্যাটে যেমন-তেমন, টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে কোহলির সাফল্য কিন্তু অনেক। ২০১৪ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে সেসময়ের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওই সিরিজ চলাকালীন হুট করে ধোনি টেস্ট ক্রিকেট থেকেই অবসর নেন। আর এরপরই টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন কোহলি। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ধারাবাহিক সাফল্য পাওয়ায় ধীরে ধীরে ধোনির তিন সাম্রাজ্যই তার দখলে চলে যায়।
ধোনিও উত্তরসূরিকে জায়গা ছেড়ে দেন। একসময় ধোনির টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে পাওয়া সাফল্যকে পেরিয়ে যান কোহলি। তার অধীনে টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানে উঠে আসে ভারত। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজ (২০১৮-১৯) জয়েও নেতৃত্ব দেন তিনি। এর দুই বছর পর ফের একবার অজিদের তাদের মাটিতেই হারায় ভারত। এর মাঝে ভারতকে টেস্ট ক্রিকেটের জায়ান্টে পরিণত করেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটেও তাদের বাকি দুই ফরম্যাটের 'মুডে' দেখা যায়। এতে সাফল্যও আসে অনেক। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে কোহলির নেতৃত্বে ভারত ইংল্যান্ডের মাটিতে স্থগিত টেস্ট সিরিজেও ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। সিরিজের শেষ টেস্ট এখনও বাকি। তবে সেখানে দেখা যাবে না 'অধিনায়ক' কোহলিকে।
ব্যাট হাতে বোলারকে শাসন করা কোহলির নেতৃত্বে ভারত প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছিল। তবে ফাইনালে তারা নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। সবমিলিয়ে ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ৪০ ম্যাচে জয় পেয়েছেন। তার আগে আছেন শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক দুই অধিনায়ক রিকি পন্টিং এবং স্টিভ ওয়াহ। ফলে ভারতের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক যে কোহলি, সে কথা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু বাকি দুই ফরম্যাটের ব্যর্থতা, বোর্ডের সঙ্গে বিতর্ক এবং ব্যাটে 'ফর্মহীনতা', সবমিলিয়েই একে একে পুরো সাম্রাজ্য হারালেন কোহলি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২২
এমএইচএম