ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

শূন্য চোখে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন আমানের

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
শূন্য চোখে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন আমানের

সামনে বিশাল এক মাঠ। পিচ, আউটফিল্ড সবকিছুই দারুণ।

বড় ভাইরা লড়ছেন স্কুল ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন হতে। এনামুর রহমান আমান তখন বসে ড্রেসিং রুমের ঠিক পাশের একটা চেয়ারে।

চোখে তার এত বড় মাঠ, মানুষ আর হই-হুল্লোড় দেখার মুগ্ধতা। মুখে আনন্দের রেখা ফুটে উঠছে দল ভালো করলেই। এর আগে কখনো যে ঢাকাতেই আসা হয়নি আমানের। এত বিশাল আয়োজনে মুগ্ধতা তাই স্বাভাবিক।

রংপুরের ব্যবসায়ী বাবার ছেলে আমানের বয়স কেবল ১৪। এবার মাত্র সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছে। ক্রিকেটে হাতেখড়ি অবশ্য সেই ৮ বছর বয়সেই। প্রথম দিন থেকেই লেগ স্পিনে শুরু, এখন অবধিও তাই।

এত এত মানুষের ভিড়ে আমানের দিকে দৃষ্টি পড়ার কথা ছিল না। গায়ে প্র্যাকটিস কিট দেখেই প্রথমে জানতে চাওয়া, ‘তুমিও কি খেলছো?’ বুঝতে খানিকটা সময় লাগলেও পরে জবাব এলো, ‘হুম, স্কোয়াডে আছি কিন্তু একাদশে নেই। ’

একাদশে অবশ্য তার থাকার কথাও না। ছোটখাটো গড়নের চেহারাতেও বয়সটা স্পষ্ট, এখনও ক্রিকেট বলটা সঙ্গী হওয়ারই কথা ছিল না ঠিকঠাক। তবুও, এত বড় একটা ম্যাচ খেলতে না পারার আফসোস কী আছে?

আমানের জবাব, ‘ছোটবেলা থেকে খেলা শিখতেছি। এখন একটা জায়গায় এসেছি। ম্যাচ খেলতে না পারলেও সমস্যা নেই। প্রথমবার ঢাকায় খেলতে এসেছি, এটাই অনেক বড় পাওয়া। ’

স্কুল ক্রিকেটের এবারের আসরে দুইটা ম্যাচ খেলেছে আমান, পেয়েছে কেবল এক উইকেট। ওকে নিয়ে লেখাটা কি তাহলে বাড়াবাড়ি? রংপুরের শিশু নিকেতন স্কুলকে চ্যাম্পিয়ন বানানো কোচ নাসির খান আকাশের কথা শুনলে অবশ্য তেমন মনে হবে না একবারের জন্যও।

তখন কেবলই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, দলের কোচ হিসেবে তাকে নিয়ে আগ্রহও অনেক। এখানে ছবি তুলছেন, ওখানে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। এর মধ্যে একরকম আমতা আমতা করেই বলতে হলো, ‘আমানের ব্যাপারে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম...’

কথাটা পুরো শেষও হয়নি। সব ব্যস্ততা যেন আকাশের কাছে তুচ্ছ। বুক ভরা আশা আর উচ্ছ্বাস নিয়ে তিনি বলতে শুরু করলেন, ‘ও একদিন বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে, ১০০ ভাগ নিশ্চিত আমি। ফ্লিপার, ফ্লিক, সোজা, বাইরে; ও ব্যাটার রিড করতে পারে এই বয়সেই!’

এত ছোট একটা ছেলেকে দলে নিতে ভয় করল না? আকাশ প্রশ্নের জবাব দেন এরপর, ‘ও বাংলাদেশ দলে খেলার মতো যোগ্যতা রাখে! দুই-তিন বছর পরেই খেলতে পারবে। ওকে না খেলালে, ওর সঙ্গে অবিচার করা হবে। ’

এতই যখন উচ্ছ্বাস, তাহলে তো আজকেও খেলাতে পারতেন! কেন খেলালেন না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আজকে ও এত বড় একটা ম্যাচের চাপ নিতে পারত না। তবে আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে ওর নেতৃত্বে আমি পুরো বাংলাদেশে চ্যাম্পিয়ন হবো...’

জাতীয় দল এখনও বহু দূরের পথ, তবে স্বপ্ন দেখতে তো আর বারণ নেই! আমান জানিয়েছেন তার স্বপ্নটা অনেক লম্বা। ইউটিউবে প্রায়ই শেন ওয়ার্নের ভিডিও দেখা হয়, ভালোও লাগে; তবে সবচেয়ে প্রিয় রশিদ খান। আমানকে কানে কানে কথাটা মনে করিয়ে দিতে ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিল- ওয়ার্ন কিংবা রশিদ না, তুমি এনামুর রহমান হয়ে আলো ছড়ালেও ব্যাপারটা মন্দ হয় না!

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।