হার কি স্বস্তির হয়? হয় না। তবে কোনো দল প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে অলআউট হয়েও ইনিংস না হারলে আলাপটা ভিন্ন।
কিন্তু বহুদূরের বাংলাদেশের অবস্থাটা তো একদমই আলাদা। এখানে ক্রিকেটে খারাপ করলে মানুষের ভীষণ অস্বস্তি লাগে। রাত বাড়লেও কমে না স্ট্রিমগুলোর দর্শক সংখ্যা। ক্রিকেটটা এখানে ভীষণ সিরিয়াস একটা ব্যাপারই।
তবে প্রশ্ন এটা হতে পারে ক্রিকেটারদের কাছে কতটা? তারা পেশাদার ক্রিকেটার, এ নিয়ে সন্দেহের সুযোগ অবশ্য তেমন নেই। কিন্তু ধৈর্যের দৈর্ঘ্য কিংবা একই ভুল বারবার করতে দেখলে সন্দেহ তো একটু জাগেই!
অ্যান্টিগায় বাংলাদেশ হারবে, এটা যেন নিয়তি হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের প্রথম দিনের কয়েক ঘণ্টার ভেতরই। চতুর্থ দিনে এসে কেবল ব্যবধানটাই নিশ্চিত হলো, ৭ উইকেটে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১০৩ রানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ২৬৫ রান। এরপর বাংলাদেশ আবার ২৪৫ রান করেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেটা ছুঁয়েছে ২২ ওভারে। স্কোরবোর্ডের গল্প এটুকুই।
এর বাইরে? সাকিব আল হাসানের কথা বলা যেতে পারে। নতুন নেতৃত্ব পাওয়া এই অলরাউন্ডার নিজের স্বর্বস্বটা দিয়েই লড়েছেন। ৯ বছর পর একই ম্যাচের দুই ইনিংসে হাঁকিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। নুরুল হাসান সোহানের কথাটা না বললেই নয়।
প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় বলেই উইকেটটা দিয়ে এসেছিলেন। সেটাও কোনো শট না খেলে এলবিডব্লিউ হয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি সাকিবকে সঙ্গ দিয়ে করেছেন ৬৪ রান, এটাই ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
ম্যাচটা যে চতুর্থ দিন অবধি এলো, এর পুরো কৃতিত্বটাও চাইলে সাকিব ও সোহান দাবি করতে পারেন। তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে তারা একটি উইকেটও ফেলতে দেননি, তুলেছিলেন ৯৫ রান। বাংলাদেশও তাতে লিড পেয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এখানেও ভর করেছিল অস্বস্তি!
লক্ষ্যটা কেবল ৮৪ রানের। বোলারদের লড়াই করার জন্য পুঁজিটা সামান্যই। একটু একটু আশা যদি মনে ভর করেও, সেটাও বড় করার উপায় নেই। ক্ষীণ আশাটা অবশ্য আরেকটু বাড়িয়েছিলেন খালেদ আহমেদ।
পুরো প্রথম ইনিংসজুড়েই তার লাইন-লেন্থের ঠিকানা বোঝা মুশকিল ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে এসে তিনিই কি না হয়ে উঠলেন ভয়ঙ্কর। কে জানে, আফসোসটা আরেকটু বাড়াতেই কি না!
নিজের প্রথম ওভারে এসেই তিনি দুই উইকেট তুলে নিলেন! পরের ওভারে যখন আবার এলেন- ফেরালেন এনক্রুমাহ বোনারকে। ৬ বলে ০ রান করে এই ব্যাটার সাজঘরে ফেরার পর দেখা গেল- ৯ রানেই তিন উইকেট নেই স্বাগতিকদের!
মনের কোণে তখন স্বপ্ন উঁকি দেওয়া নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি নয়। কিন্তু ওই যে, রানটা এতটাই কম...; তুলতে আর একটা উইকেটও হারাতে হলো না ক্যারিবীয়ানদের। তাদের জয়ের গন্তব্যে পৌঁছে দিলেন জন ক্যাম্পবেল আর জারমান ব্ল্যাকউড। প্রথমজন করলেন ৫৮ রান, দ্বিতীয়জন ২৬।
তাদের জয় যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ততটা নিশ্চয়ই হওয়ার কথা ছিল না। এমনিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ডিউক বলে করা পেসারদের বল খেলা সহজ হবে না, এটা জানা কথাই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য এতই কঠিন হয়ে গেল- প্রথম ইনিংসে ছয় ব্যাটার ফিরলেন ডাক মেরে।
মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত আরও একবার ফর্মহীনতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন। তামিম ইকবাল আর মেহেদী হাসান মিরাজ কি না খোঁচা দিলেন লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে!
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বেশি রানও করতে দিলেন না বাংলাদেশের বোলাররা, আবার আটকানো গেল না অল্পতে। মেহেদী হাসান মিরাজ চার উইকেট নিয়ে রান পাহাড়ে চড়ার সম্ভাবনাটাকে মাটিচাপা দিলেন। স্বাগতিকরা অলআউট হলো ২৬৫ রানে।
এরপর বাংলাদেশ আবার ব্যাটিংয়ে নামল। সেই একই দশা! কখনো কখনো ভালো বল হলো বটে, কিন্তু মাহমুদুল হাসান জয়ের মতো কেউ কেউ ব্যাট চালালেন অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে। অবস্থাটা এমন- টেস্টে সবচেয়ে জরুরি বল ছেড়ে দেওয়াটাই যেন তাদের জন্য মানা!
কী আর করা। আরও একবার বাংলাদেশকে ‘অল্প একটু‘র আফসোসে পুড়তে হলো। যদি প্রথম ইনিংসে ৫০টা রান বেশি হতো, যদি তামিম আরেকটু ভালো করতেন, যদি শান্ত-মুমিনুল টানা ব্যর্থ হতেন, লিটন যদি একটু রয়েসয়ে খেলতেন...।
এমন অনেক যদির সমীকরণ মিলল না। তবুও প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে অলআউট হওয়ার পর যেমন হারের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল- হারটা শেষ অবধি তেমনও হয়নি। ক্ষীণ আশা শেষ হওয়ার আফসোস থাকলেও জয়টা তাই একদিকে স্বস্তির!
বাংলাদেশ সময় : ২০৩১, জুন ১৯, ২০২২
এমএইচবি