ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

সাবেক পাকিস্তানি আম্পায়ার আসাদ এখন জুতা বিক্রেতা!

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
সাবেক পাকিস্তানি আম্পায়ার আসাদ এখন জুতা বিক্রেতা!

একসময় নিয়মিত আম্পায়ারিং করেছেন। ছিলেন আইসিসি অ্যালিট আম্পায়ার প্যানেলের সদস্য।

আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে পরিচালনা করেছেন ১৭০ ম্যাচ। কিন্তু ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে নির্বাসিত হন তিনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগও তোলা হয়। পাকিস্তানের সেই আম্পায়ার আসাদ রউফ এখন লাহোরের বাজারে জুতো বিক্রি করছেন।

২০০০ সাল থেকে শুরু করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪৯টি টেস্ট, ৯৮টি ওয়ানডে ও ২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন রউফ। কিন্তু বর্তমানে জুতোর দোকানেই কাটে তার দিনের বেশিরভাগ সময়। এমনকি যে ক্রিকেট খেলার সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্ক, সেই খেলাটির প্রতিও আর আগ্রহ নেই তার। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম 'পাক টিভি'-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে রউফ বলেন, 'জীবনে অনেক ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছি। ফলে নতুন করে আর কিছু দেখার নেই। ২০১৩ সালের পর থেকে ক্রিকেটের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই আমার। কারণ, আমি যে কাজ ছেড়ে দেই তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখি না। '

ঝলমলে আম্পায়ারিং ক্যারিয়ার ছিল রউফের। আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোর পাশাপাশি আইপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগেও দেখা যেত তাকে। কিন্তু ২০১৩ আইপিএলে তার বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানো এবং জুয়াড়িদের কাছ থেকে দামি উপহার নেওয়ার অভিযোগ উঠে। এই অভিযোগে ২০১৬ সালে তাকে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বিসিসিআই। এর আগে ২০১২ সালে তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন এক মডেল। অভিযোগ উঠেছিল, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই মডেলকে ধর্ষণ করেন রউফ। যদিও তিনি নিজে অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তবে পরের বছর আইপিএলে আম্পায়ারিং করতে দেখা যায় তাকে।  

মূলত ২০১৩ সাল থেকেই ক্রিকেটের মূল ধারা থেকে সরে যেতে শুরু করেন রউফ। পরে তো আসে সেই নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু রউফের চোখে আইপিএলের ওই ঘটনার জন্যও তিনি দায়ী নন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, 'আমি আইপিএলে সেরা সময় কাটিয়েছি। কিন্তু এরপর আসে ওই ইস্যু। এসবের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। অভিযোগ উঠে বিসিসিআইয়ের তরফ থেকে এবং তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়। '

রউফ জানান, আইসিসির পক্ষ থেকেই তাকে আম্পায়ারিংয়ে আনা হয়। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সাবেক প্রধান নির্বাহী মজিদ খানকে নাকি আইসিসি বলেছিল, ভালো মানের আম্পায়ার তুলে আনার জন্য। সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে আম্পায়ারিং শেখা শুরু করেন রউফ এবং এক সময় পেশাদার আম্পায়ার হয়ে যান। শুরু করেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা। তার দাবি, খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। এমনকি খেলোয়াড়দের পরিবারের সদস্যরাও নাকি তাকে বেশ পছন্দ করতেন।

লাহোরের নাডা বাজারে এখন জুতোর দোকান চালান রউফ। এই বাজারে সস্তায় কাপড়চোপড়, জুতা ও অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়। এমনকি কিছু দোকানে পুরনো পণ্যও বিক্রি করা হয়। নিজের দোকানেও পুরনো জুতা-কাপড় বিক্রি করেন রউফ। তবে তিনি জানিয়েছেন, দোকানটা নিজের জন্য নয়, বরং তার দোকানের কর্মচারীদের জন্য চালাতে হয় তাকে। তিনি বলেন, 'এটা (দোকান চালানো) আমার কাজ নয়। আমি কর্মচারীদের জন্য এই কাজ করি। ওদের সংসার চলে দোকানের আয়ে। আমার কোনো লোভ নেই। জীবনে অনেক দেখেছি। আমার এক সন্তান বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। আরেক সন্তান আমেরিকা থেকে স্নাতক শেষ করে ফিরেছে। আমি ও আমার স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। আমার স্বভাব, যে কাজে হাত দেবো, তার শীর্ষে উঠবো। আমি ক্রিকেট খেলেছি এবং শিখরে পৌঁছেছি। আম্পায়ারিংয়েও তাই। এখন দোকানী হিসেবেই সবার উপরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। '

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২২
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।