জয় তখনও নিশ্চিত হয়নি, তবুও হারারের মাঠটিতে শুরু হয়েছে উৎসব। গ্যালারির বেশির ভাগ অংশেই চেয়ার নেই, সেদিকটাতেই যেন একটু বেশি।
সিকান্দার রাজা কিংবা ইনোসেন্ট কাইয়া সেঞ্চুরি করেন, ড্রেসিং রুমে হাততালি দেন সতীর্থরা। দর্শকরা দাঁড়িয়ে জানান অভিবাদন, তাদের মুখে হাসি ফুটে, আনন্দ হয়, ভীষণ ভালো লাগা চলে আসে প্রকাশ্যে। ওই আনন্দ যেন হারারে থেকে ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। বাংলাদেশ তাদের চেনা প্রতিপক্ষ, তবুও।
ওয়ানডে সুপার লিগ চলছে, তামিম ইকবালদের অবস্থান দ্বিতীয় সেখানে। সিকান্দার রাজারা? এখনও ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের ১৫তে, বাংলাদেশ সাতে। কিন্তু সেসব ভুলে কী অসাধারণ এক জয়ই না তুলে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। হারারেতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে জিতেছে ৫ উইকেটে। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ দিয়েছিল ৩০৪ রানের লক্ষ্য, জিম্বাবুয়ে টপকে গেছে ১০ বল হাতে রেখে।
এই জয়ে ইতি টানা গেছে ৯ বছর আর ১৯ ম্যাচের অপেক্ষার। সেই ২০১৩ সালের ৮ মে ওয়ানডে বাংলাদেশের বিপক্ষে এসেছিল শেষ জয়টি, এলো আবার ২০২২ সালের ৫ আগস্ট। হারারেতে উৎসব না হলে কোথায় হবে?
জিম্বাবুয়ের উৎসবের দিনে বাংলাদেশ মুখোমুখি হলো নির্মম বাস্তবতার। ব্যাটিংয়ে আরেকটু বেশি রান করার তাগিদ স্পষ্ট হওয়ার কথা, যেটা দেখা যায় না বেশির ভাগ ম্যাচেই। বোলিং আর ফিল্ডিং হতাশ করল পুরোটা সময়।
এমনিতে প্রতিপক্ষকে ৩০৪ রানের লক্ষ্য দিয়ে শুরুটা একদম খারাপ হয়নি। প্রথম ওভারেই অধিনায়ক রেজিস চাকাভাকে বোল্ড করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৬ বলে ২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। এরপর তারিসা মুসাকান্দাও আউট হন ৫ বলে ৪ রান করে।
৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলা জিম্বাবুয়েকে এরপর কক্ষপথে ফেরাতে পারেননি ওয়েসলি মাদাভিরাও। ২৭ বলে ১৯ রান করে রান আউট হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। এরপরই যেন দিশা খুঁজে পায় জিম্বাবুয়ে, আদতে খুঁজে দেন সিকান্দার রাজা ও ইনোসেন্ট কাইয়া।
ব্যথা পেয়েছেন, তবুও দমে যাননি। হাঁটতে কষ্ট হয়েছে, তবুও দৌড়েছেন সময়ের প্রয়োজনে। কখনো শুয়ে পড়েছেন মাঠেই, চিকিৎসা চলেছে, দলের প্রয়োজনে আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন তারা। মাঝে জীবন পেয়েছেন ইনিংসে, কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন শতভাগ। দুজনেই পরে পেয়েছেন সেঞ্চুরি।
১৯২ রানের জুটির পর কাইয়া যখন মোসাদ্দেক হোসেনকে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে আউট হয়েছেন; ততক্ষণে ১১ চার ও ২ ছক্কায় তিনি করে ফেলেছেন ১২২ বলে ১১০ রান। তার বিদায়ের পরও মূল নেতা থেকে গেছেন, রাজা মাঠ ছেড়েছেন দলকে জিতিয়ে। ৮ চার ও ৬ ছক্কার ইনিংসে অপরাজিত থেকেছেন ১০৯ বলে ১৩৫ রান করে।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে বেশ ভোগান্তিতেই পড়তে হয় বাংলাদেশকে। হারারের উইকেটে সকালের দিকে মুভমেন্ট পাচ্ছিলেন পেসাররা। সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তবুও তারা অনেক্ষণ হারাতে দেননি কোনো উইকেট।
দুজনের জুটিতেই ১০০ পাড় করে বাংলাদেশ। তামিম-লিটনের উদ্বোধনী জুটিতে এ নিয়ে চতুর্থবার ঘটে এমন ঘটনা, দেশের হয়ে এটা যৌথভাবে সর্বোচ্চবার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৪তম হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে তামিম স্পর্শ করেন দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই ফরম্যাটে ৮ হাজার রানের মাইলফলক।
এরপর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তামিম। ৯ চারে ৮৮ বলে ৬২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। দলের রান তখন ১১৭। শুরুতে কিছুটা অস্বস্তিতে ছিলেন লিটন। জীবন পেয়েছিলেন, রান করতে পারছিলেন না, খেলছিলেন ডট বল। তবে হাফ সেঞ্চুরি তোলার পরই খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন এই ব্যাটার।
৭৫তম বলে এসে ফিফটি পেয়েছিলেন লিটন। পরে ১৪ বল ক্রিজে ছিলেন, তুলেছেন ২১ রান। কিন্তু যখনই উইকেটে টিকে থাকার ফায়দা তুলতে যাবেন, তখনই লিটন টান পান পেশিতে। ৮৯ বলে ৮১ রান করে মাঠ ছাড়তে হয় রিটায়ার্ড হার্ড হয়ে।
এতে একরকম সুযোগই আসে এনামুল হক বিজয়ের কাছে। লিস্ট-এ ক্রিকেটে হাজারের ওপর রান করে রেকর্ড গড়েছিলেন, তাতেই ডাক আসে জাতীয় দলে। টেস্ট, টি-টোয়েন্টি খেলে ফেললেও বিজয় সুযোগ পাচ্ছিলেন না ওয়ানডেতেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্কোয়াডে থাকলেও তিন ম্যাচই থাকতে হয়েছে সাইড বেঞ্চে বসে।
বিজয়ের কাছে সুযোগটা এসেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে। তিনি কতটা কাজে লাগাতে পেরেছেন? অনেকটাই। ইনসাইড এজ হয়েছে, ক্যাচও তুলেছেন। কিন্তু বিজয়কে দেখা গেছে আত্মবিশ্বাসী, খেলেছেন দারুণ কিছু শটও। যদিও সবকিছুতে পূর্ণতা দিতে পারেননি সেঞ্চুরি করে।
৬ চার আর ৩ ছক্কায় ৬২ বলে ৭৩ রান করেছিলেন। ভিক্টর নিউয়াচির বল তুলে মারতে গিয়ে তিনি ক্যাচ তুলে দেন লং অফে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়েলিংটন মাসাকাদাজার হাতে। বাংলাদেশের ইনিংসটা পরে আর এগোয়নি ঝড়ের গতিতে। মুশফিকুর রহিম ক্রিজে ছিলেন, পরে এসেছিলেন আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও।
ইনিংসের ৪৯তম ওভারেই যেমন, এসেছে কেবল ৭ রান। তবুও অবশ্য দলীয় সংগ্রহ ছাড়িয়েছে তিনশ। মাহমুদউল্লাহ ১২ বলে ২০ ও মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৫২ রানে।
বাংলাদেশ সময় : ২১২৬, আগস্ট ৫, ২০২২
এমএইচবি