রায়ান বার্লের সেই টুইটের কথা মনে আছে? দিনের পর দিন ছেঁড়া জুতো পরে খেলার কষ্টের কথা জানিয়েছিলেন জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডার। জিম্বাবুয়ে থেকে তিনি শুনিয়েছেন সেই টুইটের পেছনের গল্প।
ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে হারানোর কারণ, তাদের নতুন ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট’ ব্যাখ্যা করেছেন বার্ল। নাসুম আহমেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, গত বছর সাকিব আল হাসানের এক ওভারে ৩০ রান নেওয়ার পর তার ভাষার ‘কিংবদন্তির’র সঙ্গে কথোপকথন; এমন অনেক বিষয়েই বার্ল কথা বলেছেন। মুঠোফোনে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মাহমুদুল হাসান বাপ্পি...
বাংলানিউজ: শুরুতেই অভিনন্দন। বাংলাদেশকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারানোর পর কেমন লাগছে?
বার্ল: অবশ্যই খুব ভালো লাগছে। আমাদের জন্য গত কয়েক সপ্তাহ রেকর্ড ভাঙা যাচ্ছে। আমাদের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে র্যাংকিংয়ে এগিয়ে আছে, এমন দলকে অনেকদিন ধরে হারাতে পারছিলাম না। এই জয়টা তাই খুব রোমাঞ্চকর ছিল। আমরা খুব খুশি। আশা করি এই উর্ধ্বমুখী যাত্রাটা চালিয়ে যেতে পারব। আর জয়ের এই মোমেন্টাম বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে পারবো।
বাংলানিউজ: বিশ্বকাপের কথা যখন বললেনই। গত বছর তো আপনারা খেলতে পারলেন না। এবার খেলবেন। মাঝের সময়গুলো কেমন ছিল?
বার্ল: কিছুটা হতাশাজনক তো অবশ্যই ছিল। আমরা নিষিদ্ধ হলাম, এমন আরও কিছু বিষয় ঘটল। এসব বিশেষত সমর্থকদের জন্য খুব খারাপ লাগার ছিল। অস্ট্রেলিয়াতে আমি নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলবো, আপাতত এ নিয়েই খুব রোমাঞ্চিত আছি।
বিশ্বকাপ অনেক বড় মঞ্চ- আমাদের প্রতিভা, ক্লাস, স্কিল, সামর্থ্য এসব দেখানোর জন্য। আমি যেমনটা বলেছি, এই বিশ্বকাপের জন্য আমাদের পুরো দল কঠোর পরিশ্রম করছে। আশা করি ভালো করতে পারবো।
বাংলানিউজ: বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করলেন। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন জয়। এটা কী জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটকে নতুন জীবন দিলো?
বার্ল: হারারের পরিবেশটাই আসলে অন্যরকম ছিল। দেশের মানুষ ক্রিকেটটা এখন সত্যিই আবার ভালোবাসতে শুরু করেছে। আমাদের নতুন কোচ এসেছে আপনারা জানেন। আমরা নতুন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছি, খুব রোমাঞ্চকর এটা।
আশা করি জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারবো। দেখেছেনই তো কীভাবে দর্শক এসেছে। তারা খুব উপভোগও করেছে। এটাও আমাদের সাহায্য করছে। আমরা জিতছি, দর্শকরা আসছে। সব মিলিয়ে দারুণ একটা অবস্থা। আমার মনে হয়, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার সময় চলে এসেছে।
বাংলানিউজ: ইদানীং ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট’ কথাটা একটু বেশিই শোনা যায়। আপনাদেরটা কেমন, একটু কী ব্যাখ্যা করবেন?
বার্ল: আমাদের কোচের সঙ্গে অনেক কথা হয় অবশ্যই। ডেভ (হটন) আমাদের বলে- ব্যাটার হিসেবে তোমার কাজ হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব রান করা আর বোলার হলে অনেক কম রানে প্রতিপক্ষকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা। যদি সেটা না হয়, বেশি জটিল করবে না।
সবকিছু সাধারণ রাখো। হ্যাঁ, অবশ্যই তোমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবে ম্যাচের অনিশ্চিত মুহূর্তে। কিন্তু সবকিছু সাধারণ রাখার চেষ্টা করবে, জটিল করা যাবে না। এটা করলেই হয়তো তুমি খেলতে পারবে এমন সেরা ব্র্যান্ডের ক্রিকেট। তার কথা মতোই খেলার চেষ্টা থাকে।
বাংলানিউজ: এই ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট’ খেলার পর আপনার কী মনে হচ্ছে আধুনিক ক্রিকেটে সফল হতে এমনই খেলতে হবে?
বার্ল: আমার একশ ভাগ এমন মনে হয়। এর কোনো বিকল্প নেই। আপনি যদি সাদা বলের ক্রিকেট দেখেন এখন- ওয়ানডেতে ৩০০ রান করতে না পারলে জেতার সম্ভাবনা তেমন থাকেই না, টি-টোয়েন্টিতে এটা অন্তত ১৮০ রান। যদি আপনি ডিফেন্সিভ অ্যাপ্রোচে খেলেন, তাহলে ওই রানটা পাবেন না।
যখন আপনি ভয়ে ও নেগেটিভ থাকবেন, বল ঠিকঠাকভাবে লাগবে না, আউট হয়ে যাবেন। যখন আপনি আক্রমণাত্মক মনোভাবে খেলবেন, দেখবেন অদ্ভূত জিনিস ঘটবে। ব্যাটের কানায় লেগে হয়তো কিপারের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারি হয়ে গেছে বা এমন। এসব কিছুই আক্রমণাত্মক ও পজিটিভ থাকার অংশ।
তবে অবশ্যই পজিটিভ ও আক্রমণাত্মক হওয়া আর বেপরোয়া থাকার মধ্যে একটা তফাৎ আছে। আমরা ভারসাম্যটা রাখার চেষ্টা করি। ছেলেরা সবাই গেম প্ল্যানটা ঠিক রাখতে চায়। আরও কিছু বিষয়ে উন্নতির চেষ্টা চলছে। দেখা যাক সামনে কী হয়।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজের আগে আপনাদের মানসিক অবস্থানটা কেমন ছিল?
বার্ল: এই সিরিজের আগেই কিন্তু বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব খেলে এসেছি। আমরা পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতে জিতেছি সেখানে। খুব আনন্দিত ছিলাম বিশ্বকাপে খেলতে পারবো এটা ভেবে। মানসিক অবস্থা সবসময় ভালো ছিল। মাথাটা পরিষ্কার ছিল সবার। আর ঘরের মাঠে খেললে একটা বাড়তি সুবিধা তো থাকেই। ছেলেরা শান্ত ও খুশি ছিল। আমার মনে হয় এটা দরকার ছিল, নিজেদের সেরাটা খেলতে।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশ কী মানসিক দিক থেকে আপনাদের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে ছিল?
বার্ল: দেখুন, তাদের মানসিক অবস্থা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারি না। এটা তাদের ক্রিকেটারদের ব্যাপার। আমি শুধু আপনাকে এটা বলতে পারি, আমাদের ড্রেসিংরুম কেমন ছিল।
আমি জানি, আমাদের কাছে হেরে তারা কিছুটা হতাশ। কিন্তু দিনশেষে, ক্রিকেট বা এমন খেলায় একজন জিতবে, অন্যজন হারবে; এটাই নিয়ম। হেরে যাওয়াটা কঠিন তাদের জন্য, বুঝতে পারি তাদের মাথায় কী চলছে। কিন্তু বলতে পারি শুধু নিজেদেরটা।
বাংলানিউজ: নাসুমের এক ওভারেই ৩৪ রান নিলেন। ওই ওভারটা নিয়ে কী একটু বলবেন...
বার্ল: নাসুম...? ও তো আমার খুব ভালো বন্ধু। বিপিএল যখন খেলেছি, একই দলে খেলতাম। ও খুব ভালো ছেলে, হৃদয়টাও বড়। আমার মনে হয় বাঁহাতি অফস্পিনারের সঙ্গে বাঁহাতি ব্যাটারে আদর্শ ম্যাচ আপ হয়েছে। আমাদের রান রেটটাও বাড়ানো দরকার ছিল তখন। আমার মনে হয় ওইটা ১৪ বা ১৫তম ওভার ছিল।
ও যখন বোলিংয়ে এলো, তখনই ভেবেছি এই ওভারটা কাজে লাগাতে হবে। প্রথম বলটা যখন ছক্কা হলো, আমি নিশ্চিত ছিলাম ও ফুল লেন্থে বল করবে না। শর্ট লেন্থে একটু জোরে করবে। আমি ব্যাক ফুটে চলে গিয়েছিলাম আর পজিটিভ থাকতে চেয়েছি। ভালো লেগেছে যখন পরিকল্পনায় কাজ হয়েছে।
কিন্তু হয়তো পরের বার যখন আবার দেখা হবে, প্রথম বলেই দেখা গেল ক্যাচ আউট হয়ে গিয়েছি। আপনি বলতে পারবেন না কখন কী হয়। এটাই ক্রিকেট, অনিশ্চয়তার খেলা। ওই দিনটা আমার ছিল, হয়তো পরেরটা ওর হবে। আপনি বা আমি কেউই কিন্তু জানি না।
বাংলানিউজ: গত বছর সাকিবকেও তো এভাবেই মারলেন। তিনটা ছক্কা আর সমান চারে ৩০ রান। তখনও কী অবস্থাটা একই রকম ছিল?
বার্ল: অনেকটাই। আমাদের রান রেট কম ছিল। পাঁচ উইকেট বোধ হয় পড়ে গিয়েছিল। বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে বাঁহাতি ব্যাটার ছিল, আদর্শ ম্যাচ আপ যেমনটা বললাম।
বাংলানিউজ: আপনাকে সাকিব কী ওই ওভারের পরে কিছু বলেছিলেন?
বার্ল: সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার আগে কথা হয়েছিল ওই ম্যাচের পর। সে খুশি ছিল না অবশ্যই। কিন্তু সাকিব খুব ভদ্রলোক, আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমরা কিছু কথা বলেছি, পরের ম্যাচগুলো নিয়ে। এরপরও তো কয়েকবার দেখা হয়েছে, ভালো কথাই হয়েছে। জিম্বাবুয়ে-বাংলাদেশ অতীতে অনেক দারুণ ম্যাচ খেলেছে, আশা করি সামনেও খেলবে।
বাংলানিউজ: সাকিবকে কতটা মিস করলেন এই সিরিজে?
বার্ল: সাকিব আল হাসান তো কিংবদন্তি, তাকে মিস করাই স্বাভাবিক না? তিনি বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন এবং সেটা যোগ্যভাবেই। তাকে জিম্বাবুয়েতে খেলতে না দেখে খারাপ লেগেছে। তিনি খুব ভালো মানুষ। অনেক ভালো ক্রিকেটার। আশা করি উনি দ্রুতই মাঠে ফিরে দর্শকদের আবারও বিনোদিত করবেন।
বাংলানিউজ: এই সিরিজেও বড় বড় ছক্কা হাঁকালেন। পেছনের রহস্য আসলে কী?
বার্ল: আমি প্রকৃতিগতভাবেই বিগ হিটার ব্যাটার। মাঠে গিয়ে নিজেকে প্রকাশ করা, মারতে পারা, এটা খুব আনন্দের। এখানে কোনো সিক্রেট নেই। ছোটবেলায় বেশ কয়েকটা খেলাই খেলতাম, হয়তো সেগুলো সাহায্য করে থাকতে পারে।
কিন্তু দিনশেষে অনুশীলনে এত ঘণ্টা পার করলেন এবং সুযোগ এলে, যদি সেটা কাজে লাগাতে পারেন ভালো লাগবেই। এই অবস্থায় থাকাটা দারুণ। তবে সামনে অনেক খেলা আছে, আশা করি ভালো করা চালিয়ে যেতে পারবো।
বাংলানিউজ: অনুশীলনেও ‘আউট অব দ্য বক্স’ কিছু করেন না?
বার্ল: আমি ল্যান্স ক্লুজনারের সঙ্গে অনেক কাজ করি। সবাই জানে সে কত বড় লিজেন্ড এই খেলাটার। আমাকে উনি তথ্য দেন। আমি কিছু জিনিস চেষ্টা করি, রেঞ্জার বা এমন কিছু। যেমনটা বলেছি, অনুশীলনের কঠোর পরিশ্রমই সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে।
বাংলানিউজ: অনুশীলনেও নিশ্চয়ই এখন নতুন জুতোই পরেন? (হাসি)
বার্ল: আমি আসলে পুমাকে যথেষ্ট কতৃজ্ঞতা জানাতে পারবো না কখনোই। ওরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। গত কয়েক বছর আমার যাত্রার সঙ্গী। আমি খুব রোমাঞ্চিত ও খুশি তাদেরকে পেয়ে। তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। পুরো বিশ্বে ঘুরেই তারা অনেক মানুষকে সাহায্য করছে। আমিও তাদের একজন, এটা আমার ভাগ্য।
বাংলানিউজ: টুইটটা করার আগে আপনার কি আসলে মনে হয়েছিল যে স্পন্সর পেয়ে যাবেন এটার মাধ্যমে?
বার্ল: একদমই না। আসলে স্পন্সর পাওয়ার চিন্তা ছিলই না। শুধু এটুকু চেয়েছি মানুষ জানুক পেশাদার ক্রিকেটারদের পেছনের অবস্থাটা। সবাই তাদের ব্যাট, বুট ঠিক করতে থাকে। আমি মানুষকে এটাই দেখাতে চেয়েছি। এর বাইরে আর কোনো চিন্তা ছিল না।
বাংলানিউজ: জিম্বাবুয়ের মতো দেশে ক্রিকেট খেলাটা কি একটু বেশিই কঠিন?
বার্ল: নাহ, কঠিন কিছু তো অবশ্যই না। আমরা উপভোগ করি এখানে ক্রিকেট খেলা। জিম্বাবুয়ের মানুষরা ক্রিকেট পছন্দ করে, আমরাও। আপনারা দেখেছেন কত দর্শক হয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও। আমরা উপভোগ করি। মজার সঙ্গেই ক্রিকেটটা খেলি।
বাংলানিউজ: আপনি তো ছোট বেলায় স্কোয়াশ, হকিও খেলতেন। ক্রিকেটটাই বেছে নিলেন কেন?
বার্ল: হ্যাঁ, বেশ উচ্চ পর্যায়েই ওইগুলো খেলেছি। আন্তর্জাতিক যুব পর্যায়ে বা এমন। কিন্তু শেষ অবধি ব্যক্তিগত খেলার চেয়ে ক্রিকেটের প্রতিই আমার ঝোঁক বেশি ছিল। আমি ক্রিকেটকে বেশি ভালোবাসতাম। আসলে সব খেলাই ভালোবাসি, কিন্তু ক্রিকেটটা এক নম্বর।
দলীয় খেলায় হয় কী, যখন আপনি জেতেন, এটা জাতীয় গর্ব হয়ে যায়। আনন্দটা শুধু এগারোজন মাঠে খেলে তাদের সঙ্গেই না, পেছনে আরও অনেকে থাকে, কোচ বা এমন অনেকের সঙ্গেই ভাগ করে নেওয়া যায়। এই আনন্দটা ব্যক্তিগত খেলায় থাকে না। হয়তো আপনি বা আপনার কোচ থাকবেন। আমি তাই দলীয় খেলাটা বেশি উপভোগ করি।
বাংলানিউজ: কিন্তু স্কোয়াশটা তো ক্রিকেটের চেয়েও নাকি ভালো খেলতেন...
বার্ল: হ্যাঁ, হয়তো। স্কোয়াশটা ১৮-১৯ বছর বয়স পর্যন্ত খেলেছি। কিন্তু আমার প্যাশন সবসময় ক্রিকেটেই ছিল। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব একটা কঠিন হয়নি।
বাংলানিউজ: ওই খেলাগুলো কি আপনাকে ক্রিকেটেও সাহায্য করলো? আপনি যেই স্কুলটাতে পড়েছেন, ওখান থেকে তো অন্য খেলার অনেক তারকাও বেরিয়েছে...
বার্ল: হ্যাঁ, আমার এই সৌভাগ্যটা হয়েছে ভালো স্কুলে যাওয়ার। ওখান থেকে খেলার জগতের অনেক তারকাও বেরিয়েছে। গ্যারি ব্যালেন্স, সুবেস্তিয়ান নেগ্রি ইতালি ও ডেভিড ডেন্টন স্কটল্যান্ডের হয়ে রাগবি খেলে। সুখর লাল আছে, যারা জিম্বাবুয়ের খেলার কিংবদন্তি। আরও অনেকেই আছে, সবার নাম তো আর মনে নেই। আমি খুবই ভাগ্যবান ওই স্কুলে যেতে পেরে, খুশিও।
বাংলানিউজ: জাতীয় দলের ব্যস্ততা যখন থাকে না, জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া লিগ খেলে নিজেকে ধরে রাখা নিশ্চয়ই কঠিন...
বার্ল: আমরা যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলি না তখন কোনো একটা কিছু খেলে তো নিজেকে ধরে রাখতে হয়। কিছুটা অনুশীলন, মাঠে সময় কাটানো, এসব দরকার হয়। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট অন্তত ওই সুযোগটা তো দিচ্ছে। জাতীয় দলের হয়ে তৈরি হওয়ার জন্য মঞ্চ ঠিক করছে। এতেই খুশি আছি।
বাংলানিউজ: আপনি একবার বলেছিলেন- ব্যাটিং, বোলিং বা ফিল্ডিং যাই হোক খেলায় ইম্প্যাক্ট রাখাটাই জরুরি। এখন অবধি কতটুকু পেরেছেন?
বার্ল: অলরাউন্ডার হিসেবে আপনি ব্যাট বা বল হাতে অবদান রাখতে চাইবেন। আর ফিল্ডিং তো এমন একটা বিষয়, সবার নিয়ন্ত্রণ আছে। আমি খুব পছন্দও করি এটা। আমি কিন্তু অনুশীলনে ফিল্ডিং নিয়ে অনেক কাজ করি। অলরাউন্ডার হওয়ার একটা বাড়তি সুবিধা আছে।
ধরেন, ব্যাটিংয়ে পারলাম না বোলিংয়ে এক-দুইটা উইকেট নিয়ে পুষিয়ে দেওয়া যায়। বল হাতে ব্যর্থ হলে আবার ব্যাট হাতে ফেরা যায়। এটাই সুবিধা। যদিও কাজ একটু বেশি করতে হয় বাকিদের তুলনায়। তবে এটা ভালো। আমি নিজের খেলাটাকে ভালোবাসি। কষ্ট হয়, কিন্তু ঘুম থেকে উঠে মুখে একটা হাসি নিয়ে আবার অনুশীলন শুরু করি।
বাংলানিউজ: ফিল্ডিং ভালোবাসেন বলেছেন, এটা আধুনিক ক্রিকেটে কি একটু বেশিই জরুরি হয়ে গেছে?
বার্ল: অনেক, অনেক মানে আসলেই অনেক। আপনি এখনকার দিনে ফিল্ডিং দেখলেই বুঝতে পারবেন। ছেলেরা কত দূর অবধি লাফাচ্ছে, ড্রাইভ দিচ্ছে, এক হাতে কিংবা বাউন্ডারিতে অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ ধরছে। আসলেই অসাধারণ এসব। সম্ভবত ফিল্ডিংয়ে ক্রিকেট এখনই সেরা সময় পার করছে। আপনাকে সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এখনকার ফিল্ডিং খুব অ্যাথলেটিক।
বাংলানিউজ: নিজের খেলাটাকে কোথায় থামাতে চান?
বার্ল: এটা বলা আসলে কঠিন। আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা ভাবি না। প্রতিটা দিনে ওই অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করি। নিজের জন্য সেরা সুযোগ তৈরি ও সেটা কাজে লাগানোর জন্য কাজ করি। নিজেকে সবসময় বলি তোমাকে সেরাটা দিতে হবে। কঠোর পরিশ্রম আর ঠিক কাজ করতে চাই। নিজের জন্য কোনো লেভেল ঠিক করতে চাই না। কারণ আমরা জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। কিন্তু যেমন বলেছি, প্রতিটা দিন তার মতো করে আসতে দিতে হবে। যদি ক্রিকেটটা উপভোগ করি, এমনিতেই এগিয়ে যাবো।
বাংলানিউজ: যখন অবসরে যাবেন, জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটটা কোথায় রেখে যেতে চান?
বার্ল: অবশ্যই চেষ্টা করব সম্ভাব্য সেরা জায়গায় রাখতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আমার বয়স এখন মাত্র ২৮। আশা করি আরও কয়েক বছর ভালো মতো খেলতে পারবো। ক্যারিয়ার শেষে, আমার হাতে যেটা আছে সেটাই করতে চাই; জিম্বাবুয়ের হয়ে ম্যাচ জেতা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২২
এমএইচবি/এমএইচএম