এমন চাওয়া দেশের সংবাদকর্মীদের বরাবরই থাকে। সাকিব আল হাসান দেশের সবচেয়ে বড় তারকা, কথায়ও তিনি ভীষণ পাকা।
তার ‘মুডে থাকা’ সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারটা আলাদা। রসিকতা করবেন, হাসবেন, পাল্টা প্রশ্ন করবেন, সেন্স অব হিউমারের প্রমাণ দেবেন; দিনশেষে তা নিয়ে খবরের ছড়াছড়ি হবে। সব মিলিয়ে উপভোগ্য একটা সময় কাটবে।
সোমবার তেমনই এক সংবাদ সম্মেলনের দেখা মিলল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর কথা খুব একটা বলেননি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে দু-চার কথা বলেছেন; কিন্তু তাতে কারোই মন ভরেনি।
আজই ছিল প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। সাকিব দেরি করবেন, এমন আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। তাড়াহুড়োও তাই খুব একটা ছিল না সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। কিন্তু তিনি এলেন ঠিক সময়ে। তখনও কিছু একটা খাচ্ছেন, মুখটা নড়ছে। ক্যামেরার লাইট, ফোকাস ঠিক হতে হতে তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত হলেন।
ঘোষণা দেওয়া সংবাদ সম্মেলন, তাই শত শত ক্যামেরা, বুম আর সাংবাদিক। তাদের আশা, সাকিব আজ মুডে থাকবেন। তিনি থাকলেন। প্রমাণ দিলেন শুরুতেই। নির্মম সত্যটা বলে দিয়ে অবশ্য; সাকিব বললেন, ‘আমরা কেউ ক্লাস ফোর-ফাইভের ছাত্র না যে শিখিয়ে দিতে হবে...। ’
এরপর এলো নেতৃত্বের প্রশ্ন। কবে প্রস্তাবটা পেলেন? সাকিব বললেন, ‘অনেক আগে...’। আপনি কি তৈরি ছিলেন? উত্তর শুরু করলেন ‘কঠিন প্রশ্ন...’ বলে। সময় যত গড়ালো, সাকিব ততই খোলস ছেড়ে বের হলেন।
কখনও বাউন্সারও ধেয়ে গেল, তিনি লিভ করলেন দারুণভাবে। নেতৃত্ব পাওয়ার ক’দিন আগেই বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি করে দেশজুড়ে তুলকালাম লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তাকে আর প্রশ্ন করা যায়নি এ নিয়ে। আজ সুযোগটা পাওয়ার পর হাতছাড়া করলে কীভাবে হয়!
‘সাকিব, আপনি এই কাণ্ডটার শুরু করলেন কীভাবে? আর শেষটাকেই বা কীভাবে দেখেন?’ প্রশ্নটা করার পর সাকিব চাইলে সরাসরি এড়িয়ে যেতে পারতেন। গেলেন না। উত্তরও দিলেন না। বললেন, ‘আপনারা যেভাবে শুরু ও শেষ দেখেছেন; আমিও ওইভাবেই দেখেছি। ’ দুই বাক্যে অনেক কথার উত্তর দেওয়ার চেষ্টায় সাকিব কি সফল হলেন? ওই উত্তরটাও তিনি যেন অন্যদের কাছেই ছেড়ে দিয়ে বাঁচতে চাইলেন।
ইয়র্কারও সাকিবের দিকে ছোঁড়া হয়েছে। তিনি দারুণভাবে সামলেছেন, বোল্ড হননি। ‘দেশের সবচেয়ে বড় সেলেব্রিটি আপনি নির্দ্বিধায়, অনেক তরুণ আপনাকে অনুসরণ করে; ওই হিসেবে কিছু দায়িত্বও থাকে। আপনি কী পালন করতে পারছেন?’ সাকিব জবাব দিলেন, ‘সেটা তো আমি বিচার করতে পারি না। ’
এতক্ষণ পড়ে যারা সিরিয়াসনেসে ক্লান্ত হয়ে গেছেন, সাকিব তাদের জন্য রসিকতাও করেছেন। হাসতে হাসতে এক সাংবাদিকের কাছে প্রশ্ন করেছেন, ‘আপনিও কি ইউটিউবার?’ বলে।
তিনি ভুলে গেছেন কি না কে জানে, এই ইন্টারনেটের দুনিয়ায় এসবের বাইরে থাকার উপায় খুব একটা নেই। তার নিজেরও যে একটা ইউটিউব চ্যানেল আছে, তাতে সাবসক্রাইবারও কম না; লাখের কাছাকাছি।
‘কিছু একটা বললেই তো ভাইরাল কন্টেন্ট হয়ে যাবে’ কিংবা ‘সব কন্ট্রোভার্শিয়াল প্রশ্ন’ বলে সাকিব বোঝালেন, তিনি পুল আর হুঁকটা খারাপ পারেন না; সেটা সংবাদ সম্মেলনেও। তবে কক্ষপথ থেকে ছিটকে গেলেন না, প্রশ্নের উত্তরে বাইরে সরলেন না প্রায় কখনওই।
‘আমি অত ভিডিও-টিডিও পোস্ট করি না...’ বলে সাকিব অট্টহাসির রোল ফেললেন ঠিক, তবে বুঝিয়ে দিলেন বাস্তবতা। সম্ভবত মনেও করিয়ে দিলেন অনেককে। এরপর অবশ্য বললেন, ‘কেউ কম অনুশীলন করলেও দোষের কিছু না, বেশি করলেও; আসল ব্যাপার হচ্ছে ওই ক্রিকেটারের বুঝতে পারা। ’
শেষে আবার ঢাল হলেন সতীর্থদের জন্য, বিশেষত যাদের নিয়ে সমালোচনার পাল্লাটা একটু ভারি। বড় স্বপ্ন বাধ টেনে নামিয়ে আনলেন পৃথিবীতে। বললেন উন্নতির ছাপ রাখতে চাওয়ার ইচ্ছের কথাও। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে ক্রিকেটার না আসার আফসোস; নতুনদের দ্রুত বিচার করার প্রবণতা। সাকিব আদতে বাদ রাখলেন কী?
প্রতিটা সেকেন্ড, মিনিট উপভোগ্য হয়ে থাকল একটা সংবাদ সম্মেলনের; বারবার তিনি যেন বুঝিয়ে দিলেন, কেন সাকিব আলাদা। অনুশীলনের মতো কথাও তিনি কালেভদ্রেই বলেন; কিন্তু যখন বলেন, ‘টু দ্য পয়েন্টে’। আর মুডে থাকলে? সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের সংখ্যা প্রায় ৩০ ছুঁয়, ৩১ মিনিট দীর্ঘও হয়। এবং অবশ্যই উপভোগ্য সময় কাটে সবার।
সাকিব কি এজন্যই আলাদা? প্রশ্নটা করলে তিনি কী উত্তর দিতেন, এমন ভাবনায় থেকে তার আরেকটা ‘মুডে থাকা সংবাদ সম্মেলনের’ অপেক্ষাই করা যাক বরং।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২২
এমএইচবি/এমএইচএম