চট্টগ্রাম: সাতকানিয়ায় ডলু বালু মহাল-৪ আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এ ইজারা বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন অনেকেই।
ডলু বালু মহাল-৪ আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলছেন, অবিলম্বে জনবিরোধী এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ও বিতর্কিত বালু মহাল ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে ইজারা বন্ধের আবেদন করেছি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কোনো মহাল থেকে যদি বালু উত্তোলনের সুযোগ থাকে তখন সেটি ইজারা দেওয়া হয়। আর যদি কোনো মহালে জনগণের অভিযোগ থাকে সেটি আমরা বন্ধ রাখি। ডলু বালু মহালে যদি অভিযোগ থাকে সেটি আমরা দেখবো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ করিম বলেন, আমরা অনেক বালু মহালের ইজারা বন্ধ রেখেছি। উপজেলা প্রশাসনের সুপারিশের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন ইজারা প্রক্রিয়া শুরু এবং সম্পন্ন করে। তবু বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আপত্তি উঠেছে তা আমাদের বিবেচনায় থাকবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডলু নদীর ৩ ও ৪ নম্বর বালু মহাল ইজারার কারণে নদীর দুই তীরে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে অনেকে বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অসংখ্য পরিবার একমাত্র সহায় সম্বল হারিয়ে পথে বসেছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন গত বছর ডলু নদীর ৩ ও ৪ নম্বর মহালের ইজারা বাতিল করে। ওই সময় ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. প্রফেসর আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভীর প্রচেষ্টায় জেলা প্রশাসন বালু মহাল দুটির ইজারা স্থাগিত করে। কিন্তু হঠাৎ জেলা প্রশাসন ডলু নদীর বালু মহাল-৪ এর ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্যান্য বালু মহালের সঙ্গে। তবে ৩ নম্বর বালু মহালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি এবার প্রকাশ করা হয়নি।
তাদের অভিযোগ, ৪ নম্বর বালু মহাল ইজারা নেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র তৎপর। তারা দীর্ঘদিন থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করেছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না কেউ। তাদের বিরুদ্ধাচারণ করলেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। এর ফলে নদীর দুপাড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। অথচ এলাকাবাসীর বাড়ি ঘর রক্ষায় শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজাহান পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে এটিও ঝুঁকির মুখে। এবার ডলু মহাল-৪ ইজারা দেওয়া হলে ভাঙনে এটিও বিলীন হতে পারে। এমন আশঙ্কা স্থানীয়দের।
নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়া ইজারা প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় জনমত উপেক্ষা করে কেউ হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নালিশ করব। বন্ধ বালু মহাল আবার ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীও ডলু নদীর ৪ নম্বর বালু মহালের ইজারা বন্ধের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন জেলা প্রশাসকের কাছে। ওই আবেদনে সুপরিশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামউদ্দীন নদভী।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার ডলুর ভাঙন রোধে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। এছাড়া বালু মহালের ইজারা নিয়ে পুরো এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তার হবে।
তিনি বলেন, ডলুর বালু উত্তোলন ও বিক্রি নিয়ে এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে। অতীতে এমন ঘটনার নজির রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এলাকার হাজারো মানুষ ভাঙনে তাদের বাপ দাদার ভিটেমাটি হারাবে। বিলীন হবে শত শত একর কৃষি জমি।
তাই তিনি অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে ডলুর ৪ নম্বর বালু মহালের ইজার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
বিই/টিসি