ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শিশু নিখোঁজ ডায়েরি 

বাংলানিউজে সংবাদ, তদন্তে দোষী এসআই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৩
বাংলানিউজে সংবাদ, তদন্তে দোষী এসআই শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী

চট্টগ্রাম: নগরের পাহাড়তলী এলাকায় ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী আবিদা সুলতানা আয়নীর নিখোঁজ ডায়েরির তদন্তে গাফিলতি, অবহেলা ও অসদাচরণ করায় পাহাড়তলী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপির) অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি।  

গত ২৯ মার্চ ভোরে নগরের পাহাড়তলী থানার মুরগী ফার্ম আলম তারারপুকুর পাড় থেকে আবিদা সুলতানা আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো।

এ সময় আয়নীর মায়ের আকুতি নিয়ে ‘পুলিশ চেষ্টা করলে মেয়েকে জীবিত পাওয়া যেত’  শিরোনামে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ সদরদপ্তরের  নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে সিএমপি। গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সিএমপি কমিশনারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা।

গত ২৯ মার্চ ভোরে নগরের পাহাড়তলী থানার মুরগি ফার্ম আলম তারারপুকুর পাড় ডোবা থেকে আবিদা সুলতানা আয়নী নামে এক শিশুর গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো। এর আগে গত ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক শরমিন জাহানের আদালতে বিড়ালছানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে আবিদা সুলতানা আয়নীকে অপহরণ করার অভিযোগে শিশুটির মা বিবি ফাতেমা বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি আদালত পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার হিসেবে নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।  

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল, শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী নগরের পাহাড়তলী কাজীর দীঘি সাগরিকা রোড এলাকার একটি বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। মা পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বাবা একই পেশায় ঢাকায় কর্মরত। গত ২১ মার্চ স্কুলের যাওয়ার পথে তাকে বিড়ালছানা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় তরকারি বিক্রেতা মো. রুবেল অপহরণ করে নিয়ে যায়।  

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের বিশেষ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেছিলেন, বিড়াল ছানার লোভ দেখিয়ে ২১ মার্চ বিকেলে ধর্ষণ করার পরে শ্বাসরোধ হত্যা করা হয়। ঘটনার দিন রাতে মরদেহ বস্তাবন্দি করে ডোবায় ফেলা দেয়া হয়।

আয়নী নিখোঁজের পর ২১ মার্চ রাতে মা বিবি ফাতেমা নগরের পাহাড়তলী থানায় জিডি করলে তার তদন্তভার পড়ে এস আই দুলালের উপর।

ঘটনা তদন্তে গিয়ে এসআই দুলাল আয়নীর পরিবারের সদস্যদের বলেন আপনার মেয়ে প্রেম করে চলে গেছে। ’ এছাড়া অভিযুক্ত রুবেলকে সামান্য জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয় অভিযোগ করেন আয়নীর পরিবার। পরে আয়নীর মা গত ২৮শে মার্চ সন্দেহভাজন সবজি বিক্রেতা রুবেলকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পরিবারের সদস্যদের আরও অভিযোগ করেছেন যে স্থানীয় পুলিশ এই বিষয়ে সন্দেহভাজন রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ না করেই তাকে ছেড়ে দিয়েছে। আদালতে মামলার পর রুবেলকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডোবা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর, এসআই দুলালকে দামপাড়া পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়।

সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, শিশু আয়নীর মায়ের আকুতি নিয়ে ‘পুলিশ চেষ্টা করলে মেয়েকে জীবিত পাওয়া যেত’ শিরোনামে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে সিএমপি। যেকোনো স্পর্শকাতর ঘটনা অনুসন্ধান করার সময় পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করতে হয়। নিখোঁজ ডায়রি তদন্তের ক্ষেত্রে অবহেলার জন্য এবং অসদাচরণ এর জন্য এসআই দুলালকে দোষী সাব্যস্ত করে তার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ঘটনাস্থলে পরির্দশন, স্থানীয়দের জবানবন্দি ও এডিসিসহ ১২ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আলোচিত মিসিং জিডি অনুসন্ধান করাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে কিনা তা নিরূপণ করে সুনির্দিষ্ট মতামতসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমি রিপোর্ট প্রদান করেছি।

বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৩
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।