চট্টগ্রাম: ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দল বেঁধে চিংড়ি পোনা সংগ্রহে নামে যুবকের দল। সেই পোনা সংগ্রহ করতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা।
জানা গেছে, ভোরে ভাটার সময় দল বেঁধে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করতে নামে শিকারীরা।
মৎস্য অধিদফতর বলছে, পোনা শিকারিদের বিরুদ্ধে প্রায় সময় অভিযান চলে। এছাড়া সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতদেরও ধরার চেষ্টা চলছে। একটি চিংড়ি পোনা আহরণের সময় ৭৫-১০০ প্রজাতির মাছের পোনা নষ্ট হয়। এ কারণে সরকার প্রাকৃতিক উৎস থেকে চিংড়ি পোনা আহরণ ও মজুদ নিষিদ্ধ করেছে।
মৎস্য আইনে চিংড়ি পোনা আহরণ নিষিদ্ধ। আইন অমান্য করলে জেল-জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। তারপরও অবৈধভাবে পোনা আহরণ ও বিক্রি চলছে।
সরেজমিন দেখা যায়, শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন কর্ণফুলী নদীর ক্ষেতচর অংশে দল বেঁধে পোনা আহরণ করছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। কালুরঘাট ব্রিজ থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে, বাকলিয়া, হামিদচর এলাকায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও চিংড়ি পোনা শিকার করতে নামেন। স্থানীয়দের অনেকেই পোনা আহরণের সঙ্গে যুক্ত।
পোনা শিকারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন ভাটা হয়, তখন তারা পোনা শিকারের জন্য নদীতে নামেন। একবেলায় ২শ থেকে এক হাজার গলদা চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি পোনা এক টাকা করে স্থানীয় সওদাগরদের কাছে বিক্রি করেন তারা। পোনা শিকারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। পোনা বেশি থাকলে হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। নদীতে পোনা বেশি পড়লে লোকজনও বেশি হয়।
জানা গেছে, কর্ণফুলী সেতুর পাশাপাশি নগরের অলংকার মোড়েও অবৈধভাবে পোনা মজুদ করা হয়। পরে সেখান থেকে সুবিধামতো সময়ে লাখ লাখ টাকার পোনা ছোট ছোট ড্রামে করে চট্টগ্রামের বাইরে পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বাংলানিউজকে বলেন, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীকে নিয়ে আমরা প্রায় সময় অভিযান পরিচালনা করি। এসময় পোনা শিকারিদের জরিমানা করা হয়। এরপরেও কিছু অসাধু শিকারি ঠ্যালা জাল নিয়ে ভোর রাতে নদীতে নামে। তাদের বিরুদ্ধেও আমরা কঠোর হবো।
মৎস্য ও প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে চিংড়ি পোনা আহরণের ফলে জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হচ্ছে। কারণ, উপকূলীয় এলাকায় অন্যান্য প্রজাতির পোনাও এ সময় আহরণকারীদের হাতে মারা পড়ে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, একটি চিংড়ি পোনার সঙ্গে প্রায় ১২৫টি অন্য প্রজাতির মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী উঠে আসে। মাছ আহরণকারীরা শুধু চিংড়ি পোনাটি বাছাই করার পর অন্য প্রজাতির পোনাগুলো মাটিতে ফেলে দেয়। এতে এসব পোনা আহরণকারীদের হাতে প্রতিদিন কয়েক হাজার অন্য প্রজাতির মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী মারা পড়ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এ ধরনের নিধনযজ্ঞ বন্ধে আহরণকারীদের ঘটনাস্থল থেকে প্রতিহত করা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
বিই/টিসি