চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ঔপনিবেশিক শক্তি শুধু তাদেরকেই নোবেল পুরস্কার বা স্বীকৃতি দিয়েছে যাদের রচনা তাদের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিলেছে। শুধু কাজী নজরুল ইসলাম নন, ইউরোপ-আফ্রিকার অনেক বড় বড় লেখকও আছেন যারা শুধুমাত্র সাম্যবাদ নিয়ে লিখেছেন বলেই সাম্রাজ্যবাদী কর্তৃক কখনো স্বীকৃতি পাননি।
কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত নজরুল জন্মজয়ন্তী উৎসবে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে এ কথা বলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
বৃহস্পতিবার (০১ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।
পার্থ প্রতিম মহাজন ও শারমিন আখতারের সঞ্চালনায় ও চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। মুখ্য আলোচক ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বিশেষ অতিথি ছিলেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা। এছাড়া নৃত্য পরিবেশন করেন ওড়িশি নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী ও তার দল।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, একজন কবিকে বুঝতে হলে তার প্রতিটি রচনা পাঠ করতে হবে। নজরুলকে নিয়ে চর্চা করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানও জানে না, কাজী নজরুল ইসলামের কয়টি কবিতা আছে। নজরুলের প্রায় ৭০০ কবিতা আছে। তিনি প্রায় ৩ হাজার গান গেয়েছেন। কাজী নজরুল তিন দশকের মধ্যে যে কাজ করেছেন, অনেক বড় বড় লেখক তাদের জীবদ্দশায় সেটা পারেননি।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আত্মশক্তি জাগরণের মাধ্যমে নিজের জাতিসত্তাকে তিনি বলিয়ান করার চেষ্টা করেছেন। কাজী নজরুল শুধু কবি হিসেবে নয়, চিন্তক হিসেবেও অনন্য। আমাদের যে রাষ্ট্রসত্তা, গণতান্ত্রিক কিংবা অসাম্প্রদায়িক স্বত্তা- সেটিও কাজী নজরুলের বিভিন্ন রচনায় ফুটে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, কাজী নজরুলের যুক্তি দর্শন ও সাম্যবাদ দর্শন অধ্যয়ন করেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র গঠনে উদ্ভুদ্ধ হয়েছেন। কাজী নজরুল চেতনাকে ধারণ করেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো। জয় বাংলার জয়ধ্বনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কাজী নজরুলের কাছ থেকেই পেয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, নজরুলকে পাঠ করলে আমাদের বিদ্রোহ সত্তা জেগে ওঠে। নজরুলের যুদ্ধে যাওয়া, সৈনিক জীবন-এগুলো তাঁর রচনার মধ্যেই আমরা দেখতে পাই। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে নজরুল সরকারি চাকরি পেলেও সেটা গ্রহণ করেননি। নজরুল সেটি গ্রহণ করলে হয়তো আমরা একজন প্রশাসক পেতাম, কিন্তু কবি নজরুলকে পেতাম না।
তিনি আরও বলেন, নজরুল বিদ্রোহের কবিতা লিখেছেন আবার সাম্যের গানও গেয়েছেন। নজরুলের উপন্যাসে সাম্যবাদের চরিত্র ফুটে ওঠে। একটা বিষয়ে আমি অবাক হই, যেদিন রবীন্দ্রনাথ মারা গেছেন সেদিনই কিন্তু নজরুলের কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়। অথচ এর আগে নজরুল প্রায় তিন হাজার গান গেয়েছিলেন। বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে, ততদিন নজরুলকে মনে রাখবে। এখনো আমরা সাহিত্যে যে শব্দগুলো চর্চা করি, এগুলোর পেছনে কবি নজরুলের অবদান আছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম ধুমকেতু পত্রিকায় একটি কবিতা রচনার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯২৩ সালে তাকে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলো, ২০২৩ সালে এ ঘটনার শতবছর পূর্ণ হয়েছে। তাই এ বছর কবি নজরুলকে বিশেষভাবে স্মরণ করতে চাই আমরা।
তিনি আরও বলেন, এ বছর থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে বছরে অন্তত একটি গবেষণা জার্নাল প্রকাশ করবো। সেই গবেষণা প্রবন্ধটি হবে পিয়ার রিভিউড (পিয়ার রিভিউ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গবেষণা প্রকাশনা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়)।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৩
এমএ/টিসি