ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সন্দ্বীপের এক মানবিক চেয়ারম্যানের গল্প

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
সন্দ্বীপের এক মানবিক চেয়ারম্যানের গল্প এস এম আনোয়ার হোসেন

চট্টগ্রাম: বিশ্বজুড়ে চলছে তখন করোনা মহামারি। অচেনা শত্রুর থাবায় বিপর্যস্ত জনজীবন।

বাংলাদেশেও ওই সময় লকডাউনের কারণে অনেকটা থমকে গেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন স্বামীহারা নারী রাহেলা বেগম (ছদ্মনাম)।
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওই নারীর দুই সন্তান নিয়ে জীবন যেন আর চলছেই না।  

ওই সময় রাহেলা বেগমের পাশে দাঁড়ান মগধরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ঘটনা এটি। দুঃসময়ে সহায়তার বিষয়টি দুই বছর পরও মনে রেখেছেন রাহেলা। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব যতদিন লকডাউন ছিল ততদিন চাল-ডাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। বেশ কয়েকবার তিনি আমাকে সহায়তা দিয়েছেন।  

শুধু রাহেলা না। করোনার ওই দুঃসময়ে চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন কর্মহীন হয়ে পড়া ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। ইউনিয়নের অসহায় মানুষের ঘরে-ঘরে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে প্রতিদিন ছুটেছিলেন তিনি। করোনা ছাড়াও নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ইউনিয়নবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন আনোয়ার চেয়ারম্যান। এসব উদ্যোগের কারণে সন্দ্বীপে মানবিক চেয়ারম্যান হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন আনোয়ার।

তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে আছে, করোনাকালীন সময় থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা, সাড়ে ৭ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও ৫০ হাজার মাক্স ও হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে বাদশা মিয়া সুকানী ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে গৃহহীনদের মাঝে ৬টি বসতঘর উপহার, আয়েশা আনোয়ারা নূরীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার তিন তলা ভবন নির্মাণ,  মগধরা মোহছেনা খাতুন মাদ্রাসার  দ্বিতল ভবন নির্মাণসহ নানা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহায়তা করেছেন তিনি।

নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে জড়িত আছেন আনোয়ার চেয়ারম্যান। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলেতুননেছা মুজিব আন্তঃ সন্দ্বীপ গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন, প্রতিবছর ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট, দুস্থদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে জ্যাকেট বিতরণ, প্রতিবছর মেধাবৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, সেলাই মেশিন বিতরণ, অসহায় মেয়েদের বিবাহে আর্থিক সহযোগিতা, বিভিন্ন ইউনিয়নে অগ্নিকান্ডে  ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে আর্থিক সহায়তা, বিভিন্ন ওয়ার্ডে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালন এবং রমজানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ ও  রমযানে প্রতিদিন এতিমদের সাথে ইফতারি আয়োজন করেছেন চেয়ারম্যান আনোয়ার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম আনোয়ার চেয়ারম্যান বলেন, এলাকার মানুষ ভালবেসে আমাকে চেয়ারম্যান করেছেন। মানুষের ভালোবাসার মূল্য নিজের রক্ত দিয়েও শোধ করার মতো নয়। আমার সাধ্য মতো আমি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্ঠা করি। তাছাড়া আমার পরিচালনাধীন বাদশা মিয়া সুকানী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব গরীব অসহায় মানুষদের সহযোগিতার করার চেষ্ঠা করি। এলাকার মানুষও এতে খুশি। মানুষের সহযোগিতা করতে পেরে আমি নিজেও আনন্দিত।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। এর অংশ হিসাবে নিয়মিত বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ওপর আমি জোর দিয়েছি। এসব কর্মকাণ্ডে এলাকার সবাই অংগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করি। শুধু মগধরা নয় সন্দ্বীপের সব ইউনিয়নে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্ঠা করেছি।

এলাকাবাসীর জানান, আনোয়ার চেয়ারম্যান নিজ ইউনিয়নে নয়, উপজেলার সর্বসাধারনের কাছে দলমত নির্বিশেষে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি জনসেবা প্রদানের মাধ্যমে একজন সফল চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করতে চান জনবান্ধব এই চেয়ারম্যান।

ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, আনোয়ার চেয়ারম্যান একজন ভালো মনের মানুষ। তাঁর মাঝে নেই কোনো অহংকার। তিনি যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। কেউ বিপদে পড়লে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে আশ্রয় পান। করোনার সময়ে প্রচুর সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। এমনকি রাতের অন্ধকারে নিজে ত্রাণের বস্তা কাঁদে করে নিয়ে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়”১৭১৫ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।