চট্টগ্রাম: ‘বোধনের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক, তা আরও দৃঢ় হচ্ছে। আমি ৫০ বছর বোধনকে দেখে যাব, আমার পুত্র-কন্যারা দেখে যেতে পারবে শত বছর।
বোধন আবৃত্তি উৎসবের উদ্বোধন পর্বে শুক্রবার (৯ জুন) প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আবৃত্তি শিল্পী সংসদের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এভাবে শুভকামনা জানান।
‘ধ্বনির সম্পদ আছে আমাদের চেতনার গভীরে, যে ধ্বনিতে দীপ্ত হয় চিরচেনা প্রিয় কন্ঠস্বর’ শিরোনামে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আবৃত্তি সংগঠন বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের দুই দিনব্যাপী আবৃত্তি উৎসব জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ঢাকা, কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আবৃত্তিকারদের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে।
অতিথিদের প্রদীপ প্রজ্বালন ও বোধনের সদস্যদের পরিবেশনায় উদ্বোধনী আবৃত্তি ছিল কবি উৎপলকান্তি বড়ুয়ার রচনায় ‘আঁধার ভেঙে আলোর বুনন’।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নূর আনোয়ার হোসেন (রনজু)। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে পরিবেষ্টিত। সেখানে বোধন শক্তিশালী জায়গা করে নিয়েছে। অনেক বাধা পেরিয়ে এসেছে বোধন, বোধন যা করছেন তার জন্য শুভকামনা।
বক্তব্য দেন বোধনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ দাশ ভুলু, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য অঞ্চল চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ ও বোধনের উপদেষ্টা লিলি বড়ুয়া।
বোধনের সভাপতি আবদুল হালিম দোভাষের সভাপতিত্বে উৎসব ঘোষণা পাঠ করেন বোধনের নির্বাহী সদস্য সুদীপ বড়ুয়া খোকন। স্বাগত বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি আবৃত্তিশিল্পী শিমুল নন্দী।
সম্মাননা প্রদান করা হয় বোধনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট সুভাষ বরণ চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ দাশ ভুলু ও অ্যাডভোকেট স্বপন চক্রবর্তী এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য অঞ্চল চৌধুরী, ইন্দিরা চৌধুরী, সালমা নিগার ছন্দা, পারভেজ চৌধুরী ও প্রশান্ত চক্রবর্তী।
স্মারক গ্রহণ করেন বোধনের সম্মানিত উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট স্বভু প্রসাদ বিশ্বাস, ফজল হোসেন, লিলি বড়ুয়া, পীযূষ কান্তি বিশ্বাস, সাইফুল আলম বাবু ও সুবে্হ খান বাসু। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অ্যাডভোকেট স্বপন চক্রবর্তীর পক্ষে স্মারক গ্রহণ করেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী। উদ্বোধনী পর্ব সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী।
বিকেল সাড়ে ৩টায় শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বৈকালিক আয়োজন শুরু হয়।
বোধনের সাবেক প্রযোজনা সম্পাদক প্রয়াত আবৃত্তিশিল্পী সুমন বিশ্বাসকে নিবেদিত ‘তারুণ্যের জয়গান’ পর্বে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন অনির্বাণ চৌধুরী, ঐশী পাল, উম্মে সালমা নিঝুম, বর্ষা চৌধুরী ও মৃত্তিকা চক্রবর্তী। ‘নয়ন তোমায় বড্ড হারায়’ পর্বে গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন প্রশান্ত চক্রবর্তী ও পপলী চক্রবর্তী।
‘নানা জনপদের কথা’ পর্বে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সংগীতা চৌধুরী- ঢাকা ,সুকান্ত গুপ্ত-সিলেট, মাহবুবুর রহমান টুনু-সিলেট, চিংলামং চৌধুরী-খাগড়াছড়ি এবং অরুণা দত্ত- চট্টগ্রাম ।
‘মিলন হলো দোঁহে’ শিরোনামে দ্বৈত আবৃত্তি পরিবেশন করেন মেজবাউর মোকাম রাবিন ও পলি পারভীন (ঢাকা) এবং মিলি চৌধুরী ও ফারুক তাহের। ( চট্টগ্রাম)
এরপর সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, চন্দন মজুমদার, পার্থপ্রতিম পান ও জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় প্রযোজিত এবং পলাশ দাসের সহ-প্রযোজনা ও পরিচালনায় আবৃত্তিসাধক উৎপল কুণ্ডুর জীবন ও আবৃত্তি চর্চার ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র 'অতএব উৎপল' প্রদর্শন করা হয়। তথ্যচিত্রটি সম্পর্কে বলেন ডা. পার্থ প্রতিম পান।
‘প্রিয়তম পদাবলী’ পর্বে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাসকুর-এ-সাত্তার-কল্লোল (ঢাকা), ইন্দিরা চৌধুরী, সালমা শবনম ও আয়েশা হক শিমু।
বোধনের সাবেক সভাপতি রণজিৎ রক্ষিত স্মরণে কবি ফাউজুল কবিরের কবিতা ‘মন ভালো হলে চলে এসো’ পরিবেশন করেন শিমুল নন্দী, প্রনব চৌধুরী,জাভেদ হোসেন ও মাইনুল আজম চৌধুরী। পর্বটি সঞ্চালনা করেন রাজিউর রহমান বিতান।
‘বহুবর্ণ’ পর্বে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ডা. পার্থ প্রতিম পান (শিলিগুঁড়ি), পারভেজ চৌধুরী, অমিতাভ কাঞ্জিলাল (শিলিগুঁড়ি)
কবি উৎপলকান্তি বড়ুয়ার রচনা ও মাইনুল আজম চৌধুরীর গ্রন্থনা- নির্দেশনায় বৃন্দ আবৃত্তি ‘পরানঅর এই চাটগাঁ আঁরার’ পরিবেশন করে বোধন সদস্যরা।
উৎসবের সমাপনী দিন শনিবার (১০ জুন) সকাল ১০টা থেকে ড. নিমাই মণ্ডলের প্রবন্ধ ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমে বিষয় হিসেবে আবৃত্তির প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল চারটা থেকে পরিবেশিত হবে দেশ ও দেশের বাইরের বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পীদের পরিবেশনায় একক, দ্বৈত ও বৃন্দ আবৃত্তি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি