চট্টগ্রাম: হালদা নদীতে ফের নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এর আগে ১৭ মে হালদার বিভিন্ন পয়েন্টে নমুনা ডিম ছেড়েছিল মা মাছ।
রোববার (১৮ জুন) সকালে পাহাড়ি ঢলের পর হালদা নদীর কয়েকটি স্পটে সামান্য পরিমাণ নমুনা ডিম পেয়েছেন জেলেরা।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া জো’র মধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টির পর রোববার ভোরে পাহাড়ি ঢল আসায় ডিম ছাড়ার কিছুটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়।
সাধারণত চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসে অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে প্রবল পাহাড়ি ঢল ও শীতল আবহাওয়ায় কার্প জাতীয় মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। নমুনা ডিম মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য প্রস্তুতির আভাস। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলেই মা মাছ ডিম ছাড়ে।
হালদা ডিম সংগ্রহকারী টিটু বাংলানিউজকে বলেন, রোববার সকালে পাহাড়ি ঢলের পর থেকে মা মাছ কিছু কিছু জায়গায় ডিম ছেড়েছে। আমরা সেসব সংগ্রহ করে কুপে দিচ্ছি। আমাদের ধারণা আজ রাতে পুরোদমে ডিম ছেড়ে দিবে। ’
জালুবায়ু পরিবর্তন সহ নানা কারণে গত কয়েক বছর ধরে কম ডিম ছাড়ছে মা মাছ। ২০২০ সালে হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হলেও পরের দুই বছর তা কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়। হালদা নদীতে গত বছর বৃষ্টি না হওয়ায় ডিম ছাড়েনি মা মাছ। চট্টগ্রামে ৪৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে সেবার। ২০২১ সালে বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল না নামার কারণে ডিম সংগ্রহ হয়েছে অল্প। সে সঙ্গে যুক্ত হয় ঘূর্ণিঝড়। তাই হালদা নদীর পানিতে বাড়ে লবণাক্ততা। তাই সে বছরও আশানুরূপ ডিম সংগ্রহ করতে পারিনি ডিম সংগ্রহকরীরা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ২২ শ মে মা মাছ ডিম ছেড়েছিল। তখন ভারি বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ ছিল। যার কারণে মা মাছ ডিম ছাড়ার একটা অনুকূল পরিবেশ পেয়েছিল। ফলে রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছে মা মাছ।
জানা গেছে, প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ জন ডিম সংগ্রহকারী, ৩০০ থেকে ৩৫০ টি নৌকা। রয়েছেন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) এর ৫ জন সেচ্ছাসেবক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির ১৪ জন শিক্ষার্থী। প্রস্তুত রয়েছেন উপজেলা প্রশাসন ও নৌ পুলিশের ১২ জন সদস্য।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ি ঢলের পর ডিম ছাড়ার পরিবেশ তৈরি হলেও পানির তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গেছে। তাই ডিম পেতে আরো দুয়েকদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। ২১ তারিখের মধ্যে পুরোদমে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, ডিম ছাড়ার পরিবেশ তৈরির জন্য পাহাড়ি ঢলের প্রয়োজন, কারণ ঢলের পানি নদীতে আসলে নদীর পানি ঘোলা হয়। আমরা এটাকে ইলেক্ট্রো কন্ডাক্টিভিটি বলি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
বিই/পিডি/টিসি