ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘আস্থার সংকট থেকেই রোগীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
‘আস্থার সংকট থেকেই রোগীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন’ ...

চট্টগ্রাম: প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে পাড়ি জমাচ্ছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে।

কেন মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন এ বিষয়ে আলোচনায় বসেছিলেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের নীতি নির্ধারক, চিকিৎসক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক, মানবাধিকার কমীর, হাসপাতালের প্রতিনিধি ও চিকিৎসা সেবা প্রার্থীরা।  

‘বিদেশে চিকিৎসা: কেন? সংকট নাকি প্রয়োজন’ এ বিষয়ে এক গোল টেবিল বৈঠক সোমবার (১৯ জুন) বিকালে নগরের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।

 

চট্টগ্রামের জনপ্রিয় ডিজিটাল প্লাটফর্ম চিটাগং লাইভ এ আলোচনার আয়োজন করে। এতে মূখ্য আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. ইসমাইল খান। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় এ আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল  শামীম আহসান, চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এম এ সাত্তার, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী, বাসস চট্টগ্রামের ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক কলিম সরওয়ার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধি ডা. নওশাদ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোরশেদ হোসেন, মানবাধিকার ও সমাজ কর্মী আমিনুল হক বাবু ও নাগরিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আনামুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চিটাগং লাইভ এর প্রতিষ্ঠাতা সাবের শাহ।  

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ ইসমাইল খান বলেন, চিকিৎসাকেন্দ্রের সকল  কর্মীদের হেলথ কেয়ার সার্ভিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। চিকিৎসকদের লিডারশীপ রোল নিতে হবে। সকলে মিলে সেবাধমীর্ হলে সেবাপ্রার্থীরা আস্থা খুঁজে পাবে, তাহলে বিদেশমুখী প্রবণতা কমবে।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল  শামীম আহসান বলেন, আমাদের হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতার চেয়েও ১০ গুণ বেশি রোগী আসে সরকারী হাসপাতালগুলোতে। এতে যে চাপ তৈরি হয় তাতে সবসময় সেবার মান ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। তবে আমাদের চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িতদের আরও বেশি আস্থা অর্জন করতে হবে।  

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, রোগীদের ধৈর্য বাড়াতে হবে, সহনশীল মনোভাব  এবং মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে এবং চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোর দক্ষ জনবল বাড়াতে হবে। সামান্য অসুখে বিশেষজ্ঞ চিতিৎসককেই দেখাতে হবে এ মনোভাব থেকে বেড়িয়ে না এলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপর চাপ বাড়তে থাকে এতে অনেক ক্ষেত্রেই সকল সেবা প্রার্থীকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া সম্ভব হয় না।

চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.  এম এ সাত্তার  বলেন, এই দেশে রেফারেন্স সিস্টেম চালু না থাকার ফলে এবং ডাক্তারের পরামর্শকে গুরুত্ব না দিয়ে  রোগীরা নিজের ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়। এতে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে অনেকেই বিদেশমুখী হচ্ছেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এর ব্যুরো প্রধান করিম সরওয়ার বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা পরিস্থিতি ঠিকভাবে সামাল দিতে হবে যাতে রোগীদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি না হয়। রোগ নির্ণয়ে নির্ভুল হতে না পারলে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে না। রোবটিক সার্জারির মত আধুনিক সার্জারিও আমাদের দেশে হাসপাতালগুলোতে চালু করতে হবে।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, কোভিড সময়কালীন প্রত্যেক রোগীই দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসারত ছিলেন এবং পর্যাপ্ত সেবাও পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে ফলাফল ভুল আসে যার ফলে রোগীরা বিদেশগামী হয়।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধি ডা. নওশাদ খান বলেন, বর্তমানে কেনাকাটা করতে দেশের বাইরে গেলেও সেখানে চিকিৎসা নিয়ে আসছেন অনেকেই  অর্থাৎ বাড়ছে বিদেশমুখীতা। বিদেশে চিকিৎসাটা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের প্রয়োজনের চাইতেও একটা কৃত্রিম চাহিদার মত। আমাদের ইনস্যুরেন্স পলিসি এবং রেফারেল সিস্টেম উন্নত করতে হবে।  

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোরশেদ হোসেন বলেন, চিকিৎসা সেবা প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৬% বিদেশ যাচ্ছেন, বাকি ৮৪ শতাংশ কিন্তু দেশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের যদি সর্বোচ্চ সেবাটা আমরা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে বাকি ১৬ শতাংশও দেশে চিকিৎসা নিবেন।

মানবাধিকার কর্মী আমিনুল হক বাবু বলেন, রোগীদের সাথে অনেকসময় ডাক্তারদের ব্যবহার হয় প্রভুসুলভ। সাথে ডায়গনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্ট, উচ্চ মূল্য তো আছেই। এতে আস্থার যে সংকট তৈরি হয়, এতেই মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন। রোগিদের সাথে তাদের পরিবারের সদস্যরাও দেশের বাইরে যায় সেবা নেওয়ার সময় যা অনেক ব্যয়বহুল। এতে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে।  

চট্টগ্রাম নাগরিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: আনামুল ইসলাম বলেন,  দেশের অনেক নেতা-মন্ত্রী খুবই তুচ্ছ রোগেও বিদেশগামী  হয় যার  ফলে অন্যরাও তাদের দেখে উৎসাহিত হয়। দেশে বসে যারা বিদেশি হাসপাতালের মার্কেটিং করে তাদের কাজ কর্মও বন্ধ করা উচিত।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ পরিচালক ডা : বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, প্রতিবছর প্রায় ৭.৫ লাখ মানুষ বিদেশ যায় সেবা নেওয়ার জন্য বিশেষ করে ভারত,  মালেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং সিংগাপুর এ। যার ফলে প্রায় প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবে তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয় তা পার্শ¦বতীর্ দেশ ভারতসহ অনেক দেশেই নেই।

চিটাগং লাইভ এর প্রতিষ্ঠাতা সাবের শাহ বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের কোন অসঙ্গতির কারণে দেশের মানুষ বিদেশমুখী হচ্ছে এবং এতে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি সাধন হচ্ছে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে জনমত সৃষ্টির জন্যই এ গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।  

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুদ্দিন মুন্না, চিটাগং লাইভের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম ও কন্টেন্ট প্রধান সেঁজুতি বড়ুয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা্, জুন ২০ ২০২৩
পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।