চট্টগ্রাম: প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে প্রায় ২০ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন সংগ্রহকারীরা।
জানা গেছে, রোববার রাতে হালদা পাড়ের দুই উপজেলা রাউজান ও হাটহাজারীর পাঁচ শতাধিক ডিম সংগ্রহকারী ২৮৫টি নৌকা নিয়ে সারারাত ডিম সংগ্রহ করেছেন।
সরকারি হ্যাচারি মাছুয়াঘোনায় ৫০টি কুয়ায় চল্লিশ কেজি করে ২ হাজার, শাহমাদারীতে ৪৫টি কুয়ায় ১ হাজার ৮০০ কেজি, মদুনাঘাটে ৩০টি কুয়ায় ১ হাজার ২০০ কেজি ডিম সংরক্ষণ করা যায়।
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, রাতে জালভর্তি ডিম এসেছে। কিন্তু এত ডিম সংরক্ষণের কুয়া না থাকায় কুয়ার সমপরিমাণ ডিম নিয়ে নদী থেকে উঠে এসেছেন সংগ্রহকারীরা। প্রচুর ডিমের কারণে পুরো নদীতে ফেনা সৃষ্টি হয়েছে। সকালেও নদীতে জালে ডিম ধরা পড়ে। এমনকি নৌকা-বাঁশের ভেলায় ডিমের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে।
প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী নুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, এত ডিম পাওয়া গেছে যা অকল্পনীয়। কিন্তু সংরক্ষণের পর্যাপ্ত কুয়া না থাকায় সব নেওয়া হয়নি। কুয়া সংকট দূর করার জন্য আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বাংলানিউজকে বলেন, এবার রেকর্ডসংখ্যক ডিম ছেড়েছে মা মাছ। তবে সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সব ডিম সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। মাটির কুয়া, সরকারি, বেসরকারি হ্যাচারি সব মিলিয়ে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ পরে জানানো হবে। সঠিক তথ্যের জন্য সরকারি হ্যাচারিতে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, জোয়ারের সঙ্গে মৎস্যজীবীরা নদীর নাপিতের ঘাট, আজিম্যারঘাট, মাছুয়াঘোনা, পুরালি স্লুইচ গেট, নোয়াহাট, গড়দুয়াড়া ছিল মাছের ডিম ছাড়ার কেন্দ্র। পানির স্রোতের টানে ডিম ছড়িয়ে পড়লে নদীতে জাল পেতে সোমবার সকাল পর্যন্ত চলে ডিম সংগ্রহের উৎসব। প্রাথমিক হিসাব মতে, এই মৌসুমে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কেজি।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এটা একটা বিরাট সাফল্য। ভবিষ্যতেও হালদার প্রতি নজর থাকবে প্রশাসনের।
কুয়া সংকটে নষ্ট হচ্ছে ডিম
হালদায় এবার রেকর্ড সংখ্যক ডিম মিললেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। হালদাকেন্দ্রিক সরকারি-বেসরকারি ছোট-বড় মোট ১৬টি হ্যাচারি রয়েছে। এছাড়াও কৃত্রিম পদ্ধতির মাটির তৈরি কুয়াসহ মোট ২শ ৬৭টি কুয়ায় ডিম থেকে রেণু ফোটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিম সংগ্রাহকরা।
জানা গেছে, মদুনাঘাট হ্যাচারিতে ৩৬টি কুয়ায় ১৬৯ বালতি, শাহমাদারি হ্যাচারিতে ৪২ কুয়ায় ১৯০ বালতি ও মাছুয়াঘোনা হ্যাচারিতে ৪৭টি কুয়ায় ২৪৯ বালতি। এছাড়া রাউজান উপজেলার মোবারক খিল হ্যাচারিতে ১৫টি কুয়ায় ১১৩ বালতি এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) এর পশ্চিম বিনাজুরি হ্যাচারিতে ১৩০ বালতি ডিম রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মদুনাঘাট হ্যাচারিতে ৪টি কুয়া, শাহমাদারি হ্যাচারিতে ২টি কুয়ার ডিম নষ্ট হয়েছে।
সাধারণত প্রতি কুয়ায় ৪ থেকে ৫ বালতি ডিম রাখা হয় রেণু ফোটানোর জন্য। কিন্তু ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ডিম পাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে বলে মত গবেষকদের।
হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ডিম বেশি পাওয়া গেছে। যা হ্যাচারিগুলোর ধারণাক্ষমতার অতিরিক্ত। রেণু উৎপাদনের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ডিম নষ্ট হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কুয়ার সংখ্যা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
বিই/এমআর/টিসি