চট্টগ্রাম: জামায়াত-শিবিরের দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সেই দুর্গ ভেঙে একের পর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নেয় ছাত্রলীগ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনেক নেতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে।
চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, হুমকি, সংবাদকর্মীদের মারধর, যৌন হয়রানিরসহ নানা কারণে সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। এমনকি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বিরুদ্ধেও রয়েছে নৈতিক স্খলনজনিত নানা অভিযোগ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে মাত্র ১টি পদে পদায়ন করা হয়েছে। উপ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকীয় পদে সবার শেষে রাখা হয়েছে চবি ছাত্রলীগ নেতা কাজী নূর-উন-নবী প্রিন্সকে।
গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে অবজ্ঞার শিকার হচ্ছে চবি ছাত্রলীগ। এই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থান পেয়েছে ২২৬ জন। সেখানে চবি ছাত্রলীগ থেকে শুধুমাত্র একজনকে স্থান দেওয়ায় হতবাক সাবেক নেতারা।
গত ১৩ জুলাই রাতে সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চবি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।
চবি শাখা ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, গুটিকয়েক ব্যক্তির কারণে পুরো সংগঠনকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে-এটা মানা যায় না। এই ইউনিটে শিবিরের দাপট উপেক্ষা করে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকে থাকতে হয়। এখানকার নেতাকর্মীরা ত্যাগের রাজনীতি করে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে তারা ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে মাত্র একজনকে পদ দিয়ে এই ইউনিটকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।
আবার অনেকে বলছেন, কেন্দ্রে পদ পাওয়ার মতো কোনো নেতা নেই। বর্তমান কমিটির বয়স চার বছর। এই চার বছরে একটিও কর্মীসভা বা হল-অনুষদের সম্মেলন করতে পারেনি। তাদের কারণে শাখার কার্যক্রম দুর্বল হয়ে গেছে। নেতা-কর্মী সংকটে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না ছাত্রলীগের এই ইউনিট। চবি ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকের প্রতি আস্থা নেই নেতা-কর্মীদের। অধিকাংশ নেতাই নিষ্ক্রিয়, দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিবাহিত।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতার সংখ্যা তেমন একটা ছিল না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চবি শাখা ছাত্রলীগের হল কমিটির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী পদ প্রত্যাশা করেছিলেন; কিন্তু এদের কাউকেই পদায়ন করা হয়নি। এক কমিটি ৪ থেকে ৫ বছর পার করে দেওয়ার কারণে চবি শাখা ছাত্রলীগ থেকে ত্যাগী ও দক্ষ নেতা-কর্মী তৈরি হচ্ছে না।
চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাছির উদ্দীন সুমন বলেন, যে ইউনিটে ৪ থেকে ৫ বছরে নতুন কমিটি হয় সে ইউনিট থেকে কীভাবে কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাবে? কিভাবে নেতৃত্ব তৈরি হবে? মেরুদণ্ডহীন অবহেলিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের গুরুত্ব কমিয়েছে খোদ এখানকার নেতা-কর্মীরাই।
চবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, শিবিরের সঙ্গে লড়াই-সংগ্রাম করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের টিকে থাকতে হয়েছে। এখানে যে ত্যাগের রাজনীতি হয়ে থাকে, সেই হিসেবে আরও মূল্যায়ন পাওয়া উচিত ছিল। আমাদের এখানে অনেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ প্রত্যাশী ছিলেন; কিন্তু মাত্র একজনকে সেখানে স্থান দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, কমিটিতে পদায়নের ক্ষেত্রে আমরা চেয়েছি যেন দেশের সকল প্রান্তের প্রতিনিধিত্ব থাকে। এখানে কে কোন ক্যাম্পাসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক ১০টি উপপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিরোধ রয়েছে। কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন ইস্যুতে পক্ষগুলো সংঘাতে জড়াচ্ছে। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়াও চোখে পড়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এসব বিষয়ে অবগত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করার পাশাপাশি সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা ও একাডেমিক পরিবেশ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে ২৫ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে শোকজ করে কেন্দ্র। এর আগে তাদের আরও একবার শোকজ করেছিল কেন্দ্র। এরপরেও নানা সংঘাতে জড়িয়েছে চবি ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
বিই/টিসি