চট্টগ্রাম: বিনামূল্যে বই সরবরাহ করছে সরকার। কিন্তু সেই বইয়ের জন্যও দিতে হয় টাকা।
জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার’ এর জন্য বিনামূল্যে ৬টি বই দেশের ৬৪ জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। বই পৌঁছানোর পাঁচ মাস পর এ বাবদ ২৪০০ টাকা করে উত্তোলনের নির্দেশ দেন হাটহাজারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। ইতিমধ্যে প্রায় স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবিকৃত টাকা পরিশোধও করেছে।
তারা বলছেন, বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক খুশি। তারা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু কন্যা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারছে। তাদের মধ্যে আরও জানার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। বিনামূল্যের এসব বইয়ের জন্য প্রতিটি স্কুল থেকে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা নিচ্ছেন, বিষয়টি দুঃখজনক।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে পিইডিপি-৪ এর আওতায় ‘বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার’ এর জন্য কেনা ৬টি বই দেশের ৬৪ জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ৬৫ হাজার ৬২০টি বিদ্যালয়ে পাঠানো বইগুলো হচ্ছে- ‘ছেলেদের বঙ্গবন্ধু’, ‘অমর শেখ রাসেল’, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ‘শেখ হাসিনা: নির্বাচিত উক্তি’। ছয়টি বইয়ের মোট ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭২০টি কপি সরবরাহ করা হয় বিদ্যালয়গুলোতে।
হাটহাজারীতে মোট ১৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। হাটহাজারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসব বইয়ের জন্য টাকা তোলার দায়িত্ব দেন কয়েকজন শিক্ষককে। একটি বিদ্যালয় থেকে ২৪০০ টাকা করে নিলে ১৫৯ বিদ্যালয় থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা নেওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু এ কাজের জন্য নয়, হাটহাজারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতিমাসের সমন্বয় সভার মিটিং, বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল পাস, শেখ রাসেল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের বিল পাসের জন্য ৫০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা।
টাকা উত্তোলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জানান, ‘উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদের দায়িত্ব দেন, আমরা টাকা উত্তোলন করে জমা দেই’৷
সুজানগর হাজী জেবল হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছ থেকে বই সংক্রান্ত ২৪০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আমি টাকা পরিশোধ করেছি।
বিনামূল্যের বইয়ের জন্য কেন টাকা দিতে হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অফিসিয়াল সিস্টেম তো আমি বুঝি না। তারা অফিসিয়াল সিস্টেমে টাকা নিচ্ছেন’।
হাটহাজারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশরাফুল আলম সিরাজী বাংলানিউজকে বলেন, বইগুলোর টাকা উত্তোলনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সে চিঠির প্রেক্ষিতে টাকাগুলো নেওয়া হচ্ছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোনও চিঠি আসেনি। বিষয়টি আমি দেখছি।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, এ রকম তো হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
বিই/টিসি