ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মাইলেজ জটিলতা, চালক সংকটে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৩
মাইলেজ জটিলতা, চালক সংকটে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ...

চট্টগ্রাম: কয়েকদিন ধরে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছেন। নিয়মের অতিরিক্ত কাজ করছেন না তারা।

এতে বিপাকে পড়েছে রেলওয়ে।

চালক সংকটে কোনদিন ডেমু ট্রেন বন্ধ তো অন্যদিন যাত্রীবাহী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে।

এখন চালক সংকটে চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। ছেড়ে যাচ্ছে না পণ্যবাহী অর্ধেকেরও বেশি ট্রেন।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে লোকসান বাড়বে। সড়কপথে পণ্য আনা-নেওয়ার খরচ বেড়ে যাবে। চালক সংকটের কারণে ট্রেনে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে চালকদের বাড়তি কাজ না করার সিদ্ধান্তে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

আট ঘণ্টার বাড়তি দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। তাদের এ সিদ্ধান্তের কারণে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনগুলো চললেও রোববার থেকে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী বেশকিছু ট্রেন।

সোমবার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনের ৬টি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের সূচি থাকলেও চারটি ছেড়ে যায়নি। সকাল ১০টা, রাত ৮টায় দুইটি পণ্যবাহী ট্রেন ছেড়ে যায় চট্টগ্রাম থেকে।

রানিং স্টাফ বলতে ট্রেনের চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) বোঝানো হয়। তারা ১৬০ বছর ধরে মাইলেজ সুবিধা (রানিং অ্যালাউন্স) পাচ্ছিলেন। অর্থাৎ দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে মূল বেতনের হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন। এ ছাড়া অবসরকালীন ভাতায়ও এজন্য বাড়তি অর্থ পেতেন তারা।  

জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম প্রজ্ঞাপন দেয় ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর। এরপর থেকে পেনশনে মাইলেজ সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় আরেকটি সংশোধনী প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে রেলওয়ে রানিং স্টাফরা যতটুকু কাজ করবেন ততটুকুই মাইলেজ ভাতা পাবেন বলে আদেশ জারি করা হয়। পেনশনের সঙ্গে তারা মাইলেজ সুবিধা পাবেন না বলে উল্লেখ করা হয়।  

এরই প্রতিবাদে সারাদেশে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল ৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন রেলওয়ে রানিং স্টাফরা। এতে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রেল মন্ত্রীর আশ্বাস এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করায় আন্দোলন থেকে সরে আসেন তারা৷ 

২০২৩ সালের ১১ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালকের পক্ষে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) রানিং স্টাফরা পেনশনের সঙ্গে মাইলেজ ভাতা পাবেন বলে আদেশ জারি করেন। কিন্তু একই মাসের ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস ++ কর্তৃপক্ষ এ চিঠির আপত্তি জানিয়ে উল্টো চিঠি দেন। এর পর আবারও পেনশন বন্ধ হয়ে যায় রেলওয়ে রানিং স্টাফদের। চিঠির পাওয়ার পর আবারও আন্দোলনে নামেন রানিং স্টাফরা।  

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে রানিং স্টাফ পদ রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০টি। কিন্তু এর বিপরীতে কর্মরত আছেন ৯০০ জন। প্রায় অর্ধেক পদ শূন্য থাকায় বিদ্যমান জনবলকে বাড়তি সময় দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই চিঠির বিষয়ে জানাজানি হওয়ার পর রোববার থেকে রেলের রানিং স্টাফরা আট ঘণ্টার বাড়তি দায়িত্ব পালন বন্ধ করে দেন।  

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জাফর আলম বাংলানিউজকে বলেন, আন্তঃনগরসহ গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলোর যাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু চালক সংকটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহনের ট্রেনগুলো চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।  

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন পাহাড়তলী শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম শাহরিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, চাকরি বিধি অনুযায়ী রেলওয়ে রানিং স্টাফদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা। কিন্তু বেশিরভাগ রানিং স্টাফদের অতিরিক্ত সময়ে কাজ করানো হলেও রেলওয়ে অতিরিক্ত সুবিধা দেয় না। তাই আমরা অতিরিক্ত কাজ বাদ দিয়েছি।  

তিনি আরও বলেন, রানিং স্টাফরা কোন আন্দোলন করছে না। রেলওয়ে কোড ও বিধি বিধান মোতাবেক যুগ যুগ ধরে প্রচলিত অধিকার হরণের প্রতিবাদে অতিরিক্ত ডিউটি থেকে বিরত রয়েছেন। আগামী ১ আগস্ট রানিং স্টাফদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভা থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে।
 
রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় রেলওয়ে রানিং কর্মচারীদের অবসর পরবর্তী মাইলেজ সুবিধা বাতিল করায় আমরা নিয়মতান্ত্রিক ডিউটি করছি। আইন মোতাবেক নির্দিষ্ট ডিউটি ছাড়া অতিরিক্ত কোন ডিউটি করবো না। এখনও আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা হয়নি। তবে দাবি আদায় না হলে আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে।

রানিং স্টাফরা দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন। এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো।

চলাচল করছে না লোকাল ট্রেনও

চালক না থাকায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে নাজিরহাট ও দোহাজারীগামী লোকাল ট্রেনগুলোও চালাতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এই দুটি রুটে প্রতিদিন দুই জোড়া করে মোট চার জোড়া ট্রেন চলাচল করে। রোববার থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চালকের অভাবে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল কার্যত বন্ধ রয়েছে। চললেও অনেক স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছে। লোকাল ট্রেনও চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২৩ 
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।