চট্টগ্রাম: ফার্মাসিস্টের পরামর্শে বিভিন্ন রোগের ওষুধ বিক্রির নিয়ম থাকলেও চট্টগ্রামের অধিকাংশ ফার্মেসি চলছে ‘সি’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্ট ছাড়াই। অথচ চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশন নিয়ে প্রথমেই যেতে হয় ফার্মেসিতে।
ফার্মাসিস্টদের পেশাগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে সরকার ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ মডেল ফার্মেসি ইনিশিয়েটিভ’ নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।
জানা যায়, চট্টগ্রামে নগরে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল ৯টি মডেল ফার্মেসি ও ২১টি মডেল মেডিসিন শপ উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে মডেল ফার্মেসি ও মডেল শপের সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। তবে এখনও ফার্মেসিগুলো থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না বলে অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের। চিকিৎসকের লেখা এক কোম্পানির ওষুধের পরিবর্তে অন্য কোম্পানির ওষুধ গছিয়ে দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল ওষুধ সরবরাহ করা, সেবাপ্রার্থীকে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক সহ বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ওষুধ প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে খুচরা ড্রাগ লাইসেন্স এর সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৩১টি, ডিপোর সংখ্যা ১২৩টি, মডেল ফার্মেসি ২৫টি এবং মডেল মেডিসিন শপ রয়েছে ৩৯১টি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দোকানের জন্য লাইসেন্স নিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট হতে হয়। দেশে পর্যাপ্ত গ্র্যাজুয়েটধারী না থাকায় ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের নামে লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। ‘সি’ ক্যাটাগরি হিসেবে সার্টিফিকেটধারীদের নামেও লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। সার্টিফিকেটধারীদের মনোনীত করে থাকে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি। লাইসেন্স নিতে আগ্রহী ব্যক্তিকে সমিতির নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করে ভর্তি হতে হয়। আবেদনকারীকে ন্যূনতম এসএসসি পাস হতে হয়। সমিতি অভিজ্ঞ লোকদের মাধ্যমে সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস নেন। পরে ২০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় ১০০ নম্বর পেলে উত্তীর্ণ হিসেবে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। তা দিয়ে ‘সি’ ক্যাটাগরির লাইসেন্সের আবেদন করা যায়।
ফার্মেসি ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় বলা হয়েছে, সংবেদনশীল ওষুধ ফ্রিজে রাখতে হবে। ফ্রিজ ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হবে। নির্ধারিত শেলফে ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে। ওষুধ ছাড়া অন্যান্য পণ্য আলাদা শেলফে রাখতে হবে। ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ের রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। সেবনবিধি সম্পর্কে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। পূর্ণ কোর্সে ব্যবস্থাপত্রে নির্দেশিত নিয়মে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে পরামর্শ দিতে হবে। অথচ কিছু কিছু ফার্মেসিতে পাওয়া যায় বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মানুযায়ী, ফার্মাসিস্টদের ৫৫ শতাংশ কমিউনিটি ফার্মেসিতে, ৩০ শতাংশ হসপিটাল ফার্মেসি, ৫ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং, ৫ শতাংশ সরকারি সংস্থায়, ৫ শতাংশ একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দেশে কমিউনিটি কিংবা হসপিটাল ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা ফার্মেসিতে কাজ করতে আগ্রহী হন না।
বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম চট্টগ্রাম এর সমন্বয়ক জাহির উদ্দিন বাবর বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসকেরা রোগীদের ওষুধ দেওয়ার আগে সেই ওষুধগুলোকে নানা রকম যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ল্যাবরেটরিতে ওষুধের ডোজ ও বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই সেই ওষুধ চিকিৎসকেরা রোগীদের দিয়ে থাকেন। এর পরেও ওষুধের নানা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলে এবং শেষে তা বাজারে ছাড়া হয় সবার ব্যবহারের জন্য। তাই চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক সময়ই ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা কিছুটা আড়ালে থাকলেও, সাধারণ মানুষের জন্য ওষুধ তৈরি ও বিতরণের ক্ষেত্রে ‘এ’ ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টরা বলছেন, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থান থেকে এটাই বাস্তব চিত্র যে, অধিকাংশ রোগীর কাছে ফার্মাসিস্টই তার প্রথম পরামর্শক এবং আরোগ্য সহায়ক। ফার্মেসিতে গিয়ে অনেক রোগী প্রথম জানতে পারে তাদের ব্লাড প্রেশার বা ডায়াবেটিস এর কথা, জানতে পারে প্রথম গর্ভধারণের খবর। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রোগী প্রথম যাকে কাছে পায়- তিনি ফার্মাসিস্ট।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এসএম সুলতানুল আরেফীন বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিক পরামর্শক হিসেবে ফার্মাসিস্টের দায়িত্ব সঠিক তথ্য, সঠিক ওষুধ, সঠিক পরামর্শ প্রদান করা। একজন ফার্মাসিস্ট রোগীকে ড্রাগ ইন্টারেকসন বুঝিয়ে দেওয়া, ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে তার তথ্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে প্রতিবেদন হিসেবে পাঠানো, বাড়িতে ওষুধ সংরক্ষণের সঠিক উপায় সম্পর্কে জানানোর নিয়ম রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
এমআর/এসি/টিসি