চট্টগ্রাম: নগরের ইপিজেডে হাসান আলীকে হত্যার পর কেটে টুকরো করার মামলায় হাসানের পুত্রবধূ আনারকলি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে তিনি এই জবানবন্দি দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান বাংলানিউজকে জানান, গত শুক্রবার হাসান আলী হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার পুত্রবধূ আনারকলিকে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন শনিবার আদালতে হাজির করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। প্রথমে তাকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা বাসার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। সাগরের বিভিন্ন স্থানে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ভুক্তভোগীর কাটা মাথা পাওয়া যায়নি। আনারকলি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আনারকলি বলেন, আমার বাড়ি মহেশখালী। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় আমার প্রথম বিয়ে হয়। স্বামী মারধর করায় আর সংসার করিনি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শফিকুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীরকে বিয়ে করি। তার ভাইয়ের নাম মোস্তাফিজুর রহমান। আমার শাশুড়ি অসুস্থ বিধায় আমার বাসায় ছিল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর আমার শ্বশুর হাসান আলী আমার বাসায় আসেন। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকাল বেলা আমাদের ঘরের পাশের একটা খালি ঘরে আমার শ্বশুর, স্বামী ও ভাসুর মোস্তাফিজ যায়। ওই ঘরের ভেতর তারা কী করে আমি সব দেখিনি। আমি একবার লুকিয়ে দেখতে গিয়ে জানালা দিয়ে দেখতে পাই আমার স্বামী শফিক ও ভাসুর মোস্তাফিজ শ্বশুরকে একটা বস্তায় ভরছে। পরে বিকেলে জানতে পারি ওরা আমার শ্বশুরকে মেরে ফেলছে।
বিকেল বেলা আমার স্বামী ও আমি মরদেহটা আমার ঘরে নিয়ে যাই। ওরা মরদেহটা টুকরো করে লাগেজ, স্কুলব্যাগ ও বস্তায় ভরে। আমার স্বামী পলিথিন ও টেপ আমাকে দে। আমি সেগুলো ভাসুরকে দিই। রাতে একটা লোককে দিয়ে ওরা বস্তা ফেলে দেয়। কোথায় ফেলে দেয় জানি না। পরের দিন ভোর বেলা আমি শফিক ও মোস্তাফিজ লাগেজ ১২ নম্বর ঘাটের দিকে ফেলি। স্কুলব্যাগে মাথা ছিল। সেটা আমি ও শফিক সৈকতে নিয়ে যাই। শফিক মাথাটা পুলিশ বক্সের একদম নিচের দিকে পাথরের ভেতর ফেলে দেয়। আমাকে বলে ব্যাগ ফেলে দিতে। কিন্তু আমি ফেলিনি। ওইটা আমি স্কুলে প্রথম হওয়ায় আমাকে পুরস্কার দেয়। ক্লাস ওয়ান থেকে এইট পর্যন্ত আমার রোল নম্বর এক ছিল। আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পিএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাই। আমি খুনের বিষয় জানতাম না। পরে জেনেও চুপ ছিলাম। ভাবলাম সংসার ভেঙে যাবে কি না। অভাবের জন্য আমাকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে দিয়ে দেয়। আমি পুলিশকে ধামা ও ব্যাগ উদ্ধারে সহায়তা করি।
এর আগে হাসান আলীর মরদেহের আঙুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে নগরের ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়ক এলাকায় একটি বস্তা থেকে তার শরীরের অবশিষ্ট অংশও উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও সন্তান মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করে পিবিআই। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে লাগেজের ভেতর থেকে মরদেহের হাত-পা ও আঙুলের ৮ টুকরা খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছিল। ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করে পিবিআই।
পিবিআইকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, মো. হাসান দীর্ঘ ২৭ বছর আলাদা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি স্ত্রী-সন্তানের কাছে ফিরে আসেন। তবে এর আগে হাসানকে মৃত উল্লেখ করে সন্তান মোস্তাফিজুর জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে। তিনি ফিরে আসায় সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জেরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়কের জমির ভিলার ৭ নম্বর বাসায় স্ত্রী ও সন্তান মিলে তাকে হত্যা করে। এরপর মরদেহ কেটে টুকরো করে লাগেজ ও বস্তায় ভরে পতেঙ্গা ও আকমল আলী সড়কের পাশে ফেলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২৩
এমআই/টিসি