চট্টগ্রাম: নগরের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ এবং ইগো ছাড়তে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
রোববার (১৫ অক্টোবর) টাইগারপাসের চসিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসমেকের উদ্যোগে চট্টগ্রামের জলবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা নিরসন, পর্যটন শিল্প গড়ে তোলাসহ নগরের সৌন্দর্যবর্ধন শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে আমি সবার কাছে যাই, ইগো দেখাই না। চট্টগ্রামকে নান্দনিক নগর গড়তে আমি রেলওয়ে, সিডিএসহ সব সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
‘বর্তমানে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠের খুব অভাব। এজন্য চান্দগাঁওতে স্পোর্টসজোন গড়ার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডের পতিত ভূমিতে খেলার মাঠ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি। বাটালি হিলে চট্টগ্রাম ওয়াচ টাওয়ার করার প্রস্তাব ঢাকায় পাঠিয়েছি। রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছি জোড়ডেবা, ইউরোপিয়ান ক্লাবসহ রেলের অধীনে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ওয়াটার বডি রয়েছে। আমি বলেছি চসিকের মালিকানার দরকার নেই, আপনারা আমাকে ভূমি দিন চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে সেখানে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে দেবে।
সড়ক যোগাযোগ নিরাপদ করার উদ্যোগ নিয়ে মেয়র বলেন, নগরে ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ করা হবে। ট্রাফিক বিভাগের এ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে যাতে ফুটওভার ব্রিজগুলো সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা দেয়। যানজট কমাতে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ঠেকাতে পে-পার্কিং চালু করা হবে। অনেক বহুতল বাড়ি ও মার্কেটে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই, এ পরিস্থিতি নিরসনে জরিমানা করতে হবে।
এসমেক বাংলাদেশের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ এ সবুর বলেন, ফিরিঙ্গি বাজার থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পার্ক ও ইকোপার্ক, নদীর তীরে পর্যটন সুবিধাদি নির্মাণ, নাইট মার্কেট, চট্টগ্রাম আই, ক্যাবল কার, ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ইত্যাদির মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরকে একটি দৃষ্টিনন্দন, ঝলমলে শহরে পরিণত করা যায়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানের ৪-৫টি মেগা মল নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে একটি আন্তর্জাতিক মানের শহরে রূপান্তরিত করা যায়। আগ্রাবাদ ডেবাসহ শহরের সব প্রধান জলাশয়কে সবুজ, পার্ক, ওয়াকওয়ে, ওয়াটার ফ্রন্ট ডাইনিং পানির ফোয়ারা ইত্যাদির মাধ্যমে সুন্দর করা যায়। চট্টগ্রাম নগরের খালগুলোকে যাত্রী-মালবাহী নৌকার চলাচলের জন্য শহরের মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার খাল সংস্কার ও এর ব্যবহারকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। খালের উভয় পাশে সাইকেল রাস্তা, হাঁটার রাস্তা সবুজায়ন পরিষেবা এবং শহরের আরও ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা সময়ের দাবি। বাটালি হিল ও সিআরবি মধ্যে ইকোব্রিজ নির্মাণ, রাস্তায় পেইডপাক, কারপার্ক, বিল্ডিং নির্মাণ এবং নিদিষ্ট স্থানে পার্কিং করার জন্য স্থান নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দান জরুরি।
শহরের জন্য মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের জন্য একটি নির্দিষ্ট ট্রাফিক মডেলের ওপর ভিত্তি করে পরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাাপনা পরিকল্পনাসহ একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা দরকার।
তিনি মাস্টারপ্ল্যানে কিছু প্রকল্প বিবেচনা করার প্রস্তাব দেন যার মধ্যে রেলস্টেশন ও বাস স্টেশন শহরের বহিঃসীমানায় স্থানান্তর এবং মেট্রো, বাস ও ট্যাক্সির রেলওয়ের স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। তিনি শহরের জলাবদ্ধতার বিষয়ে মাইক ১১, মাইক আরবান এবং মাইক ২১ মডেল পুনঃস্থাপন করে এর প্রয়োগে ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান আপডেট করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
এসমেকের ডিরেক্টর অব আর্কিটেকচার মি. আনন্দ এস লোরেম্বাম, (বি আর্চ) শহরের সৌন্দর্যবর্ধন বিষয়ে আলোচনা করেন। এসমেকের প্রধান ডিজাইনার, পরিবহন বিভাগ সুজয় সুজাতারন, চট্টগ্রাম মহানগরের ট্রাফিক সমস্যা সমাধানের বিষয়ে বক্তব্য দেন। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ সিভিক সেন্স বৃদ্ধির জন্য স্কুল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেন। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম চসিকের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তুলে ধরেন।
বক্তব্য দেন আইইবি চট্টগ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃত্তিমান চাকমা, আইইবি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশীদ, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ, রেলওয়ে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের এস্টেট অফিসার সুজন চৌধুরী, এলজিইডির সুপারিন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুব হোসেন, সিডিএর মাস্টারপ্ল্যান পরামর্শক মো. নুরুল হাসান। এসমেক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. জনার্দন সুন্দরম সমাপনী বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি