ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্টেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের জনসভার ঘিরে গত এক সপ্তাহে ধরে চলছে সমাবেশস্থল ও মঞ্চ তৈরির কাজ। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল কর্ণফুলী উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে একদিন আগে থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর পাশাপাশি উৎসুক জনতার যাতায়াত ছিল।

এরই মধ্যে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে পৌনে পাঁচটা থেকে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। শুক্রবার বিকেলে থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে ভিড় জমিয়েছেন তারা।
সেইসঙ্গে চলছে সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণের শেষ পর্যায়ের কাজ। কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ির ও ফেনীসহ আশেপাশে অনেক জেলার নেতাকর্মী চট্টগ্রাম নগরে ও কর্ণফুলী, আনোয়ারা আশপাশের হোটেলে রাত্রিযাপন করবেন বলে জানা গেছে।  

জনসভার বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জনসভার ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে, মঞ্চ ও সাজসজ্জার কাজও শেষ হয়েছে। আশা করছি এটি স্মরণকালের ঐতিহাসিক জনসভা হবে। যেহেতু টানেলটি একটি ঐতিহাসিক প্রজেক্ট। সুতারাং এটিকে কেন্দ্র করে জনসভাও হবে ঐতিহাসিক। আর এটি হবে স্মার্ট জনসভা হবে। জনসমাগমের জন্য যারা উপস্থিত হবে তাদের জন্য পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। যারা দূরে থাকবে তাদের জন্য তাদের দেখার জন্য এলইডি স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা কর্মসূচিও নির্বাচনমুখী। এ হিসেবে চট্টগ্রামের জনসভায় দলীয় সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জন্য তিনি দিকনির্দেশনা দেবেন। এছাড়া উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা সরকার বারবার দরকার এটা জনগণকে বলা হবে।

চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে এক নব গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মহেশখালী, টেকনাফ পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক অর্থনৈতিক বলয় গড়ে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, একাধিক বৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্র, সাবমেরিন বেজ স্টেশন, কক্সবাজার রেললাইন, চট্টগ্রাম বিমান বন্দর আধুনিকায়ন, কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নয়ন, সাবরাং বিশেষায়িত ট্যুরিজম জোন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর সহ আনুষঙ্গিক উন্নয়ন কর্ম এই অঞ্চলকে এক পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নীত করছে।  

তিনি আরও বলেন, আগামীকাল শনিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যাদুকরী হস্তে অর্থনৈতিক বলয়ের স্বর্ণদুয়ার উন্মোচিত হবে। এটি এক অনন্য মাইল ফলক। বীর চট্টলার সম্মানিত জনতা প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর আগমনে উদ্বেলিত, উৎফুল্ল। এই সমাবেশে আমাদের আহ্বান থাকবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচিত করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের অমিত সম্ভাবনাকে বাস্তবে রুপায়নে ভুমিকা রাখতে হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জনসভাকে সফল করার জন্য প্রস্তুতি সভা করে আসছেন আওয়ামী লীগের এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি  লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে পথসভা ও কর্মীসভা করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের  নেতারাও। জনসভার প্রচার-প্রচারণার কারণেই নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মাঝেও উৎসাহ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও উৎসুক জনগণ ভিড় করেছেন। আশা করছি, জনসভায় মানুষের ঢল নামবে, জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার টানেলের যুগে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম। আজকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি মডেল টাউনে পরিণত হতে চলেছে। এ দেশের মাটি ও মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে তাঁর কন্যার সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন দর্শনের ফলে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে নিয়েছেন। তিনি কথা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ায় আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই জনগণ রায় দিয়ে দেশের এই অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করবে।

তিনি আরও বলেন, নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল আমাদের জন্য স্বপ্নের ছিল। সেটি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণে এ মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। এটি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। পদ্মা সেতু যেমন বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নাম উজ্জ্বল করেছে, তেমনিভাবে টানেলও উজ্জ্বল করবে । শনিবারের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। দশ লাখ মানুষ জনসভায় উপস্থিত থাকবে।
 
প্রসঙ্গত, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শনিবার (২৮ অক্টোবর) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইদিন চট্টগ্রামের কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত কর্ণফুলী উপজেলায় জনসভায় যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কর্ণফুলী নদীর দুই তীর সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে 'ওয়ান সিটি টু টাউন' গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেলটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। টানেল চালু হলে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগ সহজ হবে।  

১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়। ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। বাকি ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩ 
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।