ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবির নিয়োগে টাকা লেনদেনের অডিও ফাঁস, ১৯ মাস পর হচ্ছে শাস্তি

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৩
চবির নিয়োগে টাকা লেনদেনের অডিও ফাঁস, ১৯ মাস পর হচ্ছে শাস্তি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষক নিয়োগে টাকা লেনদেনের অডিও ফাঁস হওয়ার ১৯ মাস পর অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তি কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ 'সিন্ডিকেট'।

বুধবার (০১ নভেম্বর) বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী।

এর আগে গত সোমবার ও মঙ্গলবার (৩০ ও ৩১ অক্টোবর) দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৫তম সিন্ডিকেট সভায় এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত উপাচার্যের তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদাবনতি দেওয়া হয়।

এছাড়া চবির হিসাব নিয়ামক শাখার কর্মচারী আহমদ হোসেনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন ও আহমেদ হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করেছে সিন্ডিকেট। এছাড়াও শিক্ষক নিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ নথি হারানোর দায়ে উপাচার্য দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার সাহাব উদ্দিনকে সতর্ক করে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বদলির জন্য সুপারিশ করা হয়।


২০২২ সালের ৩ মার্চ চবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত সর্বপ্রথম ৫টি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এনিয়ে বাংলানিউজে 'শিক্ষক নিয়োগে টাকা দাবি, ৫ চাঞ্চল্যকর অডিও' শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় একই বছর ৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের নিয়োগ বাতিল করার পাশাপাশি চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন। সে বছর ৭ জুলাই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়ে জড়িতদের শাস্তির সুপারিশ করে।

সেই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ৫৩৮তম সিন্ডিকেটে উপচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনকে পদাবনতি (ডিমোশন) ও কর্মচারী আহমদ হোসেনকে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করা হয়।

এই ঘটনার জড়িত অন্যান্যদের বের করতে মিছবাহুল মোকর রবিন ও কর্মচারী আহমদ হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করে জরুরি ভিত্তিতে থানায় ফৌজদারি মামলা করার জন্য সুপারিশ করা হয়। যদিও  গত ১৫ মাসেও এ ঘটনায় কোনো মামলা করা হয়নি।

সেই সিন্ডিকেট সভায় দুইজনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশের পাশাপাশি অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়। সম্প্রতি দ্বিতীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জড়িতদের শাস্তি কার্যকর করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দ্বিতীয় তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চাকরি প্রার্থীর সঙ্গে খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীন এর স্বতঃস্ফূর্ত ও অত্যন্ত আপত্তিকর, অযাচিত ও এখতিয়ার বহির্ভূত কথোপকথনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মারাত্মক মর্যাদাহানি হয়েছে। এসব কথোপকথনের কোনো গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। ফাঁস হওয়া ফোনালাপের বিষয়ে প্রথম কমিটির পর্যবেক্ষণ সঠিক বলে কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়।

এরই প্রেক্ষিতে খালেদ মিছবাহুল মোকর রবীনের কর্মকাণ্ড গুরুতর অসদাচরণ (মিসকন্ডাক্ট) হওয়ায় তাকে চবির সংবিধি ১২ এর ধারা ৪ এর ১ (ডি) অনুযায়ী স্থায়ীভাবে (ভবিষ্যতে কোনো পদোন্নতি পাবেন না) দুই গ্রেড পদাবনতি দিয়ে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থেকে সেকশান অফিসার করার ও অবিলম্বে প্রশাসনিক ভবনের বাইরে বদলির জন্য গঠিত কমিটি সর্বসম্মতভাবে সুপারিশ করে। তবে তদন্ত কমিটির সুপারিশ পুরোপুরি অনুসরণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

একজন সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, অসদাচরণ করার জন্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তবে আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। তার অসদাচরণের বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, সিন্ডিকেট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে খালেদ মিছবাহুল মোকর রবিনকে উপাচার্য দফতর থেকে বদলির সুপারিশ করে এক গ্রেড ডিমোশন দেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেট মনে করেছে তাকে এক গ্রেড ডিমোশন দেওয়া যায়। এছাড়া কর্মচারী আহমদ হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বিষয়ে একটি মামলা করার সুপারিশ করেছে সিন্ডিকেট।

অন্যদিকে উপাচার্য দফতরের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিনসহ তৎকালীন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায় খুঁজে পায় কমিটি।

তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ফাইল হারানোর দায়ে মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিনসহ উপাচার্য দফতরে কর্মরত তৎকালীন অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারী কোনো ভাবে এড়াতে পারেন না। এছাড়া এ সংক্রান্ত সকল তথ্য মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন তদন্ত কমিটির কাছে পুরোপুরি গোপন করেছেন যা অবাধ্যতা ও অসহযোগিতা।

সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, সিন্ডিকেটের সর্বসম্মতিক্রমে মো. সাহাব উদ্দিনকে সতর্ক করাসহ উপাচার্য দফতর থেকে বলদির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে উপাচার্য বলেছেন এখনই বদলি না করে আরও কিছুদিন সময় দিতে। তবে তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলি করে দিবেন বলে জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২৩
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।