চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের স্বতন্ত্র টার্মিনাল হিসেবে পিসিটির উদ্বোধন হচ্ছে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ভাচুয়ালি এ টার্মিনালের উদ্বোধন এবং বে টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করবেন।
বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পিসিটির নির্মাণকাজ শেষ।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মাণের প্রায় দেড় যুগ পর ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন টার্মিনাল পিসিটি নির্মাণ করলো বন্দর কর্তৃপক্ষ। পিসিটির বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা চার লাখ টিইইউ’স (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার)।
পিসিটির প্রকল্প পরিচালক, বন্দরের প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান সরকার বাংলানিউজকে জানান, পিসিটি একটি স্বতন্ত্র টার্মিনাল। এটি একাই চলতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পিসিটি নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। পিসিটিতে রয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটারের আরসিসি পেভমেন্ট (অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড ও সড়ক), ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস) শেড, ৬ মিটার উঁচু ১ হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ বর্গফুটের পোর্ট অফিস ভবন, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটারের যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, বিমানবন্দরগামী গাড়ি চলাচলের জন্য ৪২০ মিটারের ফ্লাইওভার, চার লেনের পৌনে ১ কিলোমিটার এবং ৬ লেনের ১ কিলোমিটার সড়ক।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাইলিংসহ সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পিটিসির জেটির দৈর্ঘ্য ৫৮৪ মিটার। জেটি এলাকায় পানির গভীরতা সাড়ে ১১মিটার হলেও ১০ থেকে সাড়ে ১০ মিটারের ড্রাফট অনায়াসে ভিড়ানো যাবে।
পিসিটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশ) ৩টি কনটেইনারবাহী জাহাজ এবং ২২০ মিটার দীর্ঘ ডলফিন জেটিতে ১টি ভোজ্যতেলবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে। তবে ২১০ মিটার বা বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ ২টির বেশি ভিড়ানো যাবে না। ৩২ একর জমিতে নির্মিত এ প্রকল্পে ব্যাকআপ ইয়ার্ড ১৬ একর।
বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে এনসিটি, সিসিটির দূরত্ব যেখানে ১৪-১৫ কিলোমিটার সেখানে পিসিটির দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। এখানে ড্রাফট রয়েছে সাড়ে ১১ মিটার। পিসিটি পরিচালনার জন্য অপারেটর হিসেবে বেশ কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে ছিল সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি), দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ডেনমার্কের এপি মুলার ইত্যাদি। এর মধ্যে আরএসজিটি চূড়ান্ত কার্যাদেশ পেতে যাচ্ছে। তারাই কনটেইনার ও শিপ হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট নিয়ে আসবে। ফলে বন্দরের সাশ্রয় হচ্ছে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা।
এ টার্মিনালে ৪টি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি), ৮টি রাবার টায়ারর্ড গ্যান্ট্রি (আরটিজি), ৪টি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার, ৪টি রিচ স্ট্যাকার, ১টি রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরএমজি), ৪টি লো-মাস্ট ফর্ক লিফট, ২টি ফায়ার ট্রাক, ১টি ফায়ার কার, ৩টি নিরাপত্তা পেট্রোল কার, ১টি অ্যাম্বুল্যান্স, ৫০ টনের দুইটি টাগ বোট, ২টি পাইলট বোট, ২টি ফার্স্ট স্পিড বোট রাখার পরিকল্পনা ছিল বন্দরের।
২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পের ভিত্তিস্থাপন করা হয়। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এ প্রকল্পে চ্যালেঞ্জ ছিল নদীপাড়ের গুরুত্বপূর্ণ এয়ারপোর্ট সড়ক সরিয়ে ফ্লাইওভার চালু করা, রেড ক্রিসেন্ট, মেরিন ফিশারিজ, কাস্টম এফ ডিভিশন, ওমেরার স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি