চট্টগ্রাম: মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে টিভি জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণাও দিয়েছে সাংবাদিক নেতারা৷
শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্ত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়।
টিভি জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হকের সঞ্চালনায় সকাল ১১টায় শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ সমাবেশে শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারী রুনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি হামিদ উল্লা্হ বলেন, বাঁশখালীর মতো একটি সমৃদ্ধ জনপদে এই ধরনের হীন মানসিকতা কেউ রাজনীতির নেতৃত্ব দিতে পারে না। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডকে ভাবতে হবে। অন্যথায় এই সংসদ সদস্যের অপকর্মের ভার দলকে বার বার বহন করতে হবে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ। তিনি বলেন, হামলা চালিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান এখনও নানাভাবে হামলার শিকারদের হেনস্তা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার এই হীন চেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আমাকে নিয়েও নানা অমূলক- আপত্তিকর কথা প্রচার করছেন। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দীন মোহাম্মদ রেজা। তিনি এই ঘটনায় মোস্তাফিজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তিনি বলেন, মাঠে-ঘাটে কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা এভাবে মার খাবে, এটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। এমপি মোস্তাফিজ বর্তমান ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। নিজে দোষ করে এখন সাংবাদিকদের গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা করছেন। যা চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা কিছুতেই হতে দিবে না।
মোস্তাফিজুর রহমান ভোটের ভেতর এইরকম ন্যাক্কারজনক পরিস্থিতি তৈরি করে পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম বলেন, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূণ্য গোয়াল ভালো। আওয়ামী লীগে নেতার অভাব নেই। এই রকম নেতা একজন না থাকলেও অসুবিধা নেই। তিনি মোস্তাফিজুর রহমানের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী বলেন, মোস্তাফিজুর রহমানের এই ধরনের অপকর্ম এবারই প্রথম নয়। এর আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মারধর করেছেন, নির্বাচনী কর্মকতাদের মারধর করেছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন। বার বার ছাড় পেয়ে এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন।
সভায় টিভি জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্যরা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব কাজী মহসিন বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর সীমালঙ্ঘন করেছেন। তিনি আইনপ্রণেতা হয়ে এই ধরনের আচরণ করতে পারেন না।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজের সহসভাপতি শহীদুল আলম বলেন, 'অতি দ্রুত এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিচার করা না হলে সাংবাদিকরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে। ' তাঁর মনোনয়ন বাতিলের আহবান জানান তিনি।
উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পর আচরণবিধি ভঙ্গ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে তাঁদের মারধর, ক্যামেরা-ট্রাইপড ভাঙ্গচুর করেন মোস্তাফিজ ও তাঁর অনুসারীরা। এসময় ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিবেদক রাকিব উদ্দীন, ভিডিওগ্রাফার তারাচরণ দাশগুপ্ত, আরটিভির ভিডিওগ্রাফার এমরাউল কায়েস মিঠু, চ্যানেল আইয়ের বিভাগীয় প্রধান চৌধুরী ফরিদ, ক্যামেরাম্যান মো. সোলায়মানসহ বেশ কয়েকজন গনমাধ্যমকর্মী আহত হন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২৩
এমআর/টিসি