চট্টগ্রাম: মহান মুক্তিযুদ্ধ মূলতই জনযুদ্ধ। বাংলাদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এই যুদ্ধ করেছিল বলেই মাত্র নয় মাসে বিজয় অর্জিত হয়েছিল।
সেই চেতনাকে ধারণ করে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে একটি ট্রাককে ভ্রাম্যমাণ মঞ্চে রূপান্তর করে ‘পথে পথে বিজয়গাথা’ শিরোনামে গান-কবিতা-কথামালাসহ নানা আয়োজনে বিজয়ের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দিনব্যাপী বৌদ্ধ মন্দির মোড়, বড়পোল মোড়, কাজীর দেউড়ী মোড় ও সন্ধ্যায় চেরাগীপাহাড় মোড়ে ছিল নানা আয়োজন। যেখানে ১৯৭১ সালের সাধারণ মানুষের মুক্ত মনের উদারতার স্বপ্ন তুলে ধরা হয়।
দিনব্যাপী এ আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথিরা বলেন, এ দেশ সকল ধর্মের সকল মানুষের। ধর্মনিরপেক্ষতার একটি দেশের জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। যেখানে গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। তবে এখনো দিকে দিকে হায়েনার ডাক শোনা যায়। এখনো শকুনীর থাবায় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে সোনার বাংলাদেশ। তাই স্বাধীন বাংলা এখনো হায়েনার কবল থেকে মুক্ত হয়নি। ততদিন মানুষের মুক্তির সংগ্রাম শেষ হবে না, যতদিন সকল শ্রেণী বৈষম্যহীন মানুষের শোষণ নিপীড়ন বঞ্চনায় মানুষের অধিকার নিগৃহীত হবে।
বোধনের প্রশংসনীয় এ উদ্যোগ সকাল সাড়ে এগারোটায় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধে সংগীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠ সৈনিক জয়ন্তী লালা’র কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গানে। এসময় কথায় অতিথি ছিলেন নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী, নাট্যজন সুচরিত চৌধুরী টিংকু, লায়ন বাসুদেব সিনহা, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সদস্য আবৃত্তিশিল্পী সেলিম রেজা সাগর।
এরপর বোধনের শিশু বিভাগের দলীয় পরিবেশনা অজয় দাশগুপ্তের কবিতা থেকে গ্রন্থিত ‘দেশকে ভালোবাসো’ পরিবেশিত হয়। পথে পথে বিজয়-গাথা’র দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বিকেল তিনটায় নগরীর বড়পোল মোড় সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বরে। শুরুতে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে ধ্রুপদ সঙ্গীত নিকেতনের শিল্পীরা। এরপর স্বরচিত কবিতাপাঠে অংশ নেন আমন্ত্রিত কবি ও সংগীতশিল্পী কেশব জিপসী, কবি উৎপল কান্তি বড়ুয়া, কবি জসীম মেহবুব, কবি সুপ্রতীম বড়ুয়া এবং কবি ও কথায় বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সদস্য আবৃত্তিশিল্পী মাহবুবুর রহমান মাহফুজ। দেশের গানে ও কবিতায় নগরীর রাজপথ গণমানুষের ভীড়ে মুখর হতেই সেই রেশ থেকে যায় বিকাল পাঁচটায় নগরীর কাজীর দেউড়ী মোড় পর্যন্ত।
এসময় অতিথি ছিলেন মঞ্চমুকুটের দলপ্রধান নাট্যজন সুচরিত দাশ খোকন। এরপর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের শিল্পীদের একের পর গণসংগীতের পরিবেশনায় মুক্তির গানে জয় বাংলার সমৃদ্ধি পথ মসৃণ হয়ে ওঠে। বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রামের দিনব্যাপী জমজমাট এ আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল নগরীর চেরাগীপাহাড় মোড়ে। এতে বোধনের আবৃত্তিশিল্পীদের পরিবেশনায় দলীয় প্রযোজনা ‘মিছিলের রাজপথ’ পরিবেশিত হয়।
বোধনের এ আয়োজনে অতিথি ছিলেন কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান। এ পর্বে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বোধন আবৃত্তি পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল চৌধুরী সোহেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বিপ্লব কুমার শীল, আবৃত্তিশিল্পী পলি ঘোষ, জসিম উদ্দিন, ডেইজি সেনগুপ্তা এবং ত্রিতরঙ্গ আবৃত্তি দলের সদস্য আবৃত্তিশিল্পী জুহি সেনগুপ্তা। সবশেষে দেশের গান পরিবেশনায় যুক্ত হন ‘গান পোকা’ সংগীতশিল্পীরা।
দিনব্যাপী এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে বোধন আবৃত্তি পরিষদের সহ-সভাপতি সুবর্ণা চৌধুরীর সমাপনী বক্তব্যে। পুরো আয়োজনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বোধন আবৃত্তি পরিষদের প্রশিক্ষণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী সঞ্জয় পাল।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৩
এসি/টিসি