চট্টগ্রাম: দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দামে অস্থিরতার মধ্যেই মেহেরপুরের নতুন পেঁয়াজ ঢুকলো খাতুনগঞ্জের আড়তে। বড় আকারের এ পেঁয়াজ ৭-৮টিতে এক কেজি।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) খাতুনগঞ্জের মেসার্স আবদুল মাবুদ খান সওদাগর নামের আড়তে এক ট্রাক মেহেরপুরের পেঁয়াজ নেমেছে।
আড়তদার নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মেহেরপুরের ক্ষেত থেকে থেকে সদ্য তোলা ১৩ টন পেঁয়াজ এসেছে আমাদের আড়তে। ট্রাকভাড়া গেছে ২২ হাজার টাকা। একেকটি বস্তায় কমবেশি ৫০ কেজি পেঁয়াজ রয়েছে। বেপারীরা ১৩০ টাকা বিক্রি করতে বলেছেন। সকালে এক বস্তা বিক্রি হয়েছিল। বিকেলে দাম কমিয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় দেশি নতুন পেঁয়াজ ৯০ টাকাও বিক্রি হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম। বেশিরভাগ আড়ত খালি। তবে বেচাকেনা বা চাহিদাও কম। আমরা আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে পাবনার মুড়িকাটা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জের আড়তে ঢুকবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, খাতুনগঞ্জের আড়তে রসুন, আদা, আলু পর্যাপ্ত থাকলেও পেঁয়াজ কম। মেসার্স শাহ আমানত করপোরেশন, মেসার্স বাচা মিয়া সওদাগরসহ অনেক পেঁয়াজের আড়ত ছিল খালি। আড়তদারেরা বলছেন, পেঁয়াজ সংকট নিরসনে মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির পরিকল্পনা করছেন অনেকে। তবে সমুদ্রপথে এসব পেঁয়াজ দেশে আসতে ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। এক্ষেত্রে সামনে দেশি পেঁয়াজের মৌসুম হওয়ায় নতুন করে আমদানিতে ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন তারা।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণে নগরের সবজির দোকানগুলোতে পেঁয়াজের পাতা ও ফুলকার কদর বাড়ছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজের পাতাসহ ফুলকা বিক্রি হচ্ছে খুচরায় ৫০ টাকা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তে পাইকারিতে পেঁয়াজের ফুলকা বিক্রি হচ্ছে ২২-২৮ টাকা কেজি।
কয়েকজন আড়তদার জানান, যে ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারিতে ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল কয়েকদিন আগে তা এখন ১৪০ টাকাও বিক্রি করা যাচ্ছে না। ক্রেতা নেই বললেই চলে।
রোববার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার মনিটরিং টিম পাহাড়তলী বাজারে ১৮০-১৯০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করায় মেসার্স বাছামিয়া সওদাগর ও মেসার্স কালু শাহ এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। শনিবার পেঁয়াজের বাজার তদারকি অভিযানে চৌমুহনীর কর্ণফুলী মার্কেটের ফারুক স্টোরকে ৩০ হাজার, আলিফ ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা, খাতুনগঞ্জের বরকত ভাণ্ডারকে ২০ হাজার, এ এইস ট্রেডার্সকে ১০ হাজার, এ কে ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) খাতুনগঞ্জ এলাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উমর ফারুকের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় মূল্য তালিকা না থাকা এবং ক্রয় বিক্রয় রশীদ সংরক্ষণ না করা এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত দামে বিক্রির অপরাধে মেসার্স মেহের আলী ট্রেডার্সকে ১০ হাজার টাকা এবং মেসার্স মোহাম্মদ আলি আহম্মদ ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এদিকে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ১২০-১২৫ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করতে এবং ক্রয়বিক্রয় রশিদ, মজুদ ইত্যাদি স্বচ্ছ রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
চট্টগ্রাম বন্দরে দুই দিনে ২২৬ টন
চীন ও পাকিস্তান থেকে রোববার ও সোমবার (১০-১১ ডিসেম্বর) দুই দিনে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকেছে ২২৬ টন পেঁয়াজ।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আজ সোমবার পাকিস্তান থেকে থেকে বন্দরে আসা ৫৮ টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র দিয়েছি। গতকাল রোববার চীন থেকে আসা ১৬৮ টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র দিয়েছি। জুলাই থেকে এ পর্যন্ত চীন ও পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এসেছে ২ হাজার ৪১৯ টন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি