চট্টগ্রাম: কাকডাকা ভোরেই সবজি, মাছ, মুরগি, ফলমূল বোঝাই রিকশাভ্যান আসতে থাকে। সড়কের দুইপাশে লাইনে দাঁড়ায়।
প্রাতঃভ্রমণ আর শরীর চর্চা করতে আসা শত শত মানুষের ব্যায়াম আড্ডাও শেষ।
পুজোর ফুল থেকে সব ধরনের তাজা শাক সবজি, মাছ, চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, ডাব, কলাসহ ফলমূল, দেশি মুরগি এমনকি শীতের পোশাকও বিক্রি হতে দেখা গেছে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে। সব মিলে শতাধিক বিক্রেতা, কয়েকশ ক্রেতা। কারও ফুরসত নেই কথা বলার। অফিস, ব্যবসা, সন্তানের স্কুল যেন তাড়া করছে তাদের।
শরীর চর্চাকারীদের অনেক সংগঠন চট্টগ্রামে। ডিসি হিলের উজ্জীবনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম আলমদার বাজার করছিলেন। বললেন, ডিসি হিলে পাঁচ-ছয়টি সংগঠনের সদস্যরা শরীর চর্চা কিংবা হাঁটতে আসেন ভোরে। আমাদের ২০০ সদস্য। মূলত এই যে হাজারো মানুষ ভোরের পাখি হয়ে আসে তাদের জন্যই এ বাজার গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, এখানে সামুদ্রিক ও চাষের মাছের পাশাপাশি কাট্টলী, আনোয়ারাসহ বিভিন্ন উপজেলার খাল বিল নদী সাগরের তাজা কিছু দেশি মাছ আসে। বাজারের চেয়ে দামও কম।
শুধু ডিসি হিলের ভোরের পাখিরা নয়, এখানে বাজার করেন স্থানীয় লোকজনও। তাদের মধ্যে আবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। যারা বাজার নিয়মিত করেন তারা খুশি। যারা মাঝেমধ্যে করেন তারা বলেন, সড়কে এ বাজারের কারণে হাঁটাচলায় অসুবিধা হয়, মাছপচা দুর্গন্ধ ছড়ায়।
আলমদারের সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে ছিলেন মো. আনোয়ার। তিনি হাঁটতে আসেন নিয়মিত। বললেন, ‘আমি চাকরি করি। আটটায় বাসায় যাওয়ার সময় বাজারটা নিয়ে যাই। এখানে সবজির দাম বেশি মনে হয়। তবে মাছ সস্তা’।
অন্তত ৮-১০টি রিকশাভ্যানে মাছ বিক্রি হচ্ছিল। থালি, কাটা ড্রামে পানি ভরে জীবন্ত মাছ রাখা হয়েছে। জীবন্ত চিংড়ি, কই, রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, টাকি, শোল, মাগুর যেমন মিলে তেমনি রূপচাঁদা, সুরমা, নারকেলি, পোয়া, লইট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যায়। সাগরের শাপলা (স্টিং রে) মাছ, রাঙামাটির কাচকি, চাপিলা মাছও বিক্রি হয় শীতকালে। বড় মাছ কাটার ব্যবস্থা রয়েছে পাশের ঝাউতলায়।
ভোরের বাজারে আজ ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ১১০ টাকা। এখানে পাওয়া যায় বিনি চাল, মধুভাতের চাল, পিঠার চালসহ বিভিন্ন ধরনের চাল, ডাল।
নির্দিষ্ট সময়ের এই বাজারের জন্য সংগ্রহকারীরা এসে নিয়ে যায় চাঁদা। বেলা বাড়তেই কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ব্যস্ত হয়ে পড়েন রিকশাভ্যান সরিয়ে দেওয়ার কাজে। এ সময় তাদের হাতে বিক্রেতারা টাকা গুঁজে দেন চা নাশতা খাওয়ার কথা বলে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একজন বিক্রেতা বলেন, অনেক ক্রেতা বাতিল পণ্যসামগ্রী সড়কে ফেলে যায়। এগুলো সাফ করে কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাদের বকশিশ দিতে হয়। ডিসি হিলের পাশাপাশি জামালখান সিঁড়ির গোড়ায়ও ভোরের বাজার বসে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
এআর/এসি/টিসি