চট্টগ্রাম: ১৫ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছে, দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ সে আন্দোলনের সঙ্গে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়ি নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তিনি এ কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, দেশের জাতীয়তাবাদের পক্ষের শক্তি দেশপ্রেমী নাগরিকগণ, সবার অংশগ্রহণে এক বিশাল আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। এ আন্দোলন অব্যহত আছে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক ম্যা মা চিং, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপির আন্দোলন গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। এটা কোনো দলের বা ব্যক্তির একক আন্দোলন নয়। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাব। কিন্তু সেই অপশক্তি বোমা, সাউন্ড গ্রেনেন্ড ব্যবহার করে ও গুম, খুনের মাধ্যমে জনগণের সে অধিকার আবার কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু ভালো খবর হচ্ছে, আন্দোলনের দাবি ছিল এ ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনে যাবে না। সে আহ্বানে বিএনপিসহ বাংলাদেশের সমস্ত রাজনীতিবিদ সাড়া দিয়েছে, শুধু গুটি কয়েক ভিক্ষুক রাজনীতিবিদ ছাড়া। প্রায়ই সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি একপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ একপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের পেশাজীবী ও সাংবাদিক ভাইরাও একটি পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম তথাকথিত নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ অংশগ্রণ করবে না। বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এটা কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচনে তো দুই পক্ষ থাকবে। যেখানে দুই পক্ষ থাকবে না সেটা নির্বাচন হতে পারে না।
বাংলাদেশের মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, যারা ভোট দিতে গেছে, তাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভয় দেখিয়েছে যাওয়ার জন্য। সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা ছিনিয়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছে। সুবিধাবঞ্চিতদের কাছ থেকে সরকারি কার্ড পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এতকিছুর পরও বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে যায়নি। এটা হচ্ছে আন্দোলনের সুফল। অনেক বলছে ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে। আরে ক্ষমতা! ক্ষমতা তো অনেকভাবে নেওয়া যায়। আমরা দেখেছি বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সামরিক বাহিনী ক্যু করে ক্ষমতা নিয়ে নেয়। আওয়ামী লীগ সে ক্যু করেছে। জনগণের তো এখানে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ক্ষমতা জোর করে দখল করা আর ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে বিশাল ব্যবধান আছে।
তিনি বলেন, আমাদেরকে জেলে নিয়ে তারা মনে করেছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেবে। কিন্তু সেটা তারা করতে পারেনি। তাদের মনোবল শক্ত আছে। এটাই বিজয়।
বিএনপি নির্বাচনের পর আরও শক্তিশালী হয়েছে দাবি করে প্রবীণ এ নেতা বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার মনোবল আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। এটাই রাজনীতি, রাজনীতির জয়। এটাই বিএনপির সফলতা। বিএনপি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে। কর্মীরা কর্মসূচির অপেক্ষায় আছে। সামনে রমজান মাস আসছে। আমরা রোজা রাখবো, নামাজ পড়ব। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির সব কর্মসূচিকে সফলভাবে পালন করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, চট্টগ্রামে খসরু ভাইয়ের অনুপস্থিতি আমরা উপলব্ধি করেছিলাম। আজকে উনার মুক্তিতে নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন ত্বরান্বিত করা হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। বিজয় আমাদের হবেই।
এস এম ফজলুল হক বলেন, আজকের মতবিনিময় সভা জনসভায় পরিণত হয়েছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের জন্য চার মাস জেল খেটেছেন। শেখ হাসিনা সারা দেশকে জেলখানা বানিয়ে রেখেছে। কারাবন্দীদের মুক্তির জন্য আমাদের আন্দোলনের স্টাইল বদলাতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সবসময় গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে। যতদিন দেশে গণতন্ত্র ফেরত না আসবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসবে ততদিন ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির আন্দোলন চলবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামের মানুষকে প্রাণের সঞ্চার করেছেন। আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের আন্দোলন ভোট ডাকাতদের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের লড়াই। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের অধিকার আদায় করে ছাড়বো।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসেই আওয়ামী লীগ বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছে। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। দখলদার সরকারের নীতিই হচ্ছে গরিব মানুষের পকেট কাটা। ডামি সরকার জনগণের বাঁচা মরাকে পাত্তা দেয় না।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, উত্তর জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা প্রমুখ
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২৪
নিউজ ডেস্ক