চট্টগ্রাম: দৈর্ঘ্য-প্রস্থ আর উচ্চতা মিলিয়ে একই আকারের একটি ছোট্ট কক্ষ। কক্ষটিতে আবার কাঠের ছাদ বানিয়ে সেটিকে করা হয়েছে দ্বিতল।
নগরের পূর্ব ও পশ্চিম মাদারবাড়ি, কদমতলী, শেরশাহ কলোনি এলাকায় গেলে দেখা মিলবে এমন চিত্র।
ছোট-বড় কারখানাগুলোতে দিন-রাত সমানে চলছে কাজ। বছরের এ সময়টাতে কিছুটা ব্যস্ত সময় পার করলেও বছরজুড়ে তেমন ব্যস্ততা নেই বললেই চলে। এ সময়ে কাজের চাপ বাড়লেও হাসি নেই পাদুকাশিল্পীদের মুখে।
জুতা বানানোর আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি না বাড়ায় অনেকটা নিভতে বসেছে এ শিল্পটি। তাই এমন দুর্দিনে বেঁচে থাকাটাই যেন তাদের জন্য যুদ্ধ।
জালাল উদ্দিনের গল্পটাই শোনা যাক। প্রায় দশ বছর আগেই কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন তিনি। চাকরি নেন জুতার কারখানায়। শুরুতে যে মজুরিতে চাকরি করেছেন, তা থেকে মাত্র হাজার টাকা বেড়েছে বেতন। সংসার বড় হয়েছে, কিন্তু বাড়েনি মজুরি। কষ্ট হলেও ছাড়তে পারছেন না এ পেশা।
শুধু জালাল উদ্দিন নয়, এসব কারখানার কোনও কোনও শ্রমিকের পুরো জীবনটাই কেটেছে জুতা তৈরিতে। বেশিরভাগ শ্রমিকের আজ যা আয় হয়, আজকেই শেষ। সবার গল্পগুলো যেন একই।
জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আগে জুতার চাহিদা বেশি ছিল। এখন অনেক কম। ঈদ মৌসুম ছাড়া তেমন ব্যস্ততা নেই। তাছাড়া সবকিছুর দাম বাড়লেও সে হারে বাড়েনি আমাদের বেতন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালানো আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য।
জুতা কারখানার মালিকরা জানান, ঈদ সামনে রেখে প্রচুর জুতো তৈরির চাহিদা থাকে। তাই অন্য সময়ের চেয়ে এ সময় কারিগরদের মজুরিও বেশি দেওয়া হয়। অন্যসময় যেখানে একজোড়া স্যান্ডেলের জন্য ২০-৩০ টাকা এবং একজোড়া জুতার জন্য ৪৫-৫০ টাকা দেওয়া হয়, এখন সেখানে তাদের দেওয়া হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা এবং ৭০-৮০ টাকা। সপ্তাহে একজন শ্রমিক ৩০-৩৫ জোড়া জুতা তৈরির কাজ করতে পারে। জুতা তৈরির কাঁচামাল ফোম, রাবার, স্টিকার, আঠা- সব উপকরণ আসে চীন থেকে। এসব জিনিসের দামও বেড়েছে।
চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা মালিক সমিতির তথ্য অনুসারে, পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ি এলাকায় গড়ে ওঠে হাতে তৈরি জুতার কারখানা। ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি কারখানা গড়ে উঠলেও করোনার কারণে ধস নামে এ ব্যবসায়। এছাড়া চীনা জুতার বাজার সয়লাব হয়ে যাওয়ায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ২৫০টিরও কম কারখানা রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায়।
চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক সমিতির নেতা মো. মোসলেহ উদ্দিন খাঁন বলেন, উদ্যোক্তাদের কেউই সরকার ঘোষিত প্রণোদনার ঋণ পাননি। অনেকেই পুঁজির সংকটে ব্যবসায় ফিরতে পারছেন না। যেসব কারখানা আবার নতুন করে ব্যবসা করছে, তারাও সংকটে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে বিদেশি জুতার আমদানিতে যাতে পর্যাপ্ত শুল্ক আরোপ করা হয়। বিদেশ থেকে আমাদের কাঁচামাল আদমানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে যেন ১০ শতাংশ করা হয়। এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে হাতে জুতা তৈরি করার পরিবর্তে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে কম খরচে বেশি উৎপাদন করতে পারে সেজন্য অত্যাধুনিক মেশিনারিজ স্থাপন করা দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৪
এমআর/এসি/টিসি