চট্টগ্রাম: নগরের শেরশাহ বায়েজিদ লিংক রোড মোড়ে ১১ বছর ধরে প্রতি রমজানে নিজ উদ্যোগে হতদরিদ্র, রিকশাচালক, বাস চালক, বিভিন্ন গাড়ির যাত্রী, দিনমজুর ও পথচারীদের জন্য রমজান মাসজুড়ে উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন করে আসছেন তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শেরশাহ প্রজন্ম ক্লাবের সভাপতি মো. সালাহউদ্দীন এ আয়োজনের কারিগর।
সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তার পাশে প্যান্ডেল চেয়ার দিয়ে সাজানো। ইফতারের কিছু সময় আগে থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতি প্লেটে সাজাচ্ছেন ইফতার সামগ্রী। এরপর একে একে রোজাদার পথচারী, রিকশাচালক, বাস চালক, গাড়ির যাত্রী ও দিনমজুররা আসছেন সেখানে। ইফতারের ১৫-২০ মিনিট আগে রোজাদারদের হাতে তুলে দেওয়া হয় খাবারভর্তি প্লেট ও শরবত। ইফতারের আইটেমের মধ্যে থাকে- ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, খেজুর ও মুড়ি। কখনও সঙ্গে থাকে মৌসুমি ফল কিংবা ফিরনি।
দোয়া শেষ করে সময় হলে সবাই এককাতারে বসে ইফতার করেন। এ উন্মুক্ত ইফতার পার্টিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন পথচারী সাধারণ মানুষেরা। তৃপ্তি সহকারে ইফতার করতে পেরে ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের প্রশংসা করছেন তারা। প্রজন্ম ক্লাবের সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তারা সবাই শেরশাহ এলাকার বাসিন্দা এবং নগরের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এই আয়োজনের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবক রাজিব দত্ত জানান, যারা স্বেচ্ছায় ইফতার করতে চাইবেন, তারা এখানে বসে ইফতার করতে পারবেন। প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ জনের জন্য আয়োজন করা হয়। ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, খেজুর ও মুড়ি এবং সঙ্গে কখনও মৌসুমি ফল বা ফিরনি দেওয়া হয়। মাঝে মধ্যে দেওয়া হয় বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন খাবার। এভাবে ৩০ দিনের আয়োজন সাজানো হয়েছে। সালাহউদ্দীন ভাইয়ের আর্থিক সহযোগিতায় এই ইফতার আয়োজন।
স্বেচ্ছাসেবক পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর সানি জানান, রমজানের প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ রোজাদারকে বিনামূল্যে ইফতার করানো হচ্ছে রাজনীতিবিদ মো. সালাহউদ্দীনের আর্থিক সহযোগিতায়। ভিক্ষুক, রিকশাচালক, দিনমজুর ও বিভিন্ন বাসের যাত্রীরা ইফতারি করেন চেয়ারে বসে। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেকে বসে যান ফুটপাতে।
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শেরশাহ প্রজন্ম ক্লাবের সভাপতি মো. সালাহউদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, পথচারী যারা ইফতারের সময় বাসা-বাড়িতে পৌঁছাতে পারে না, আবার যাদের ইফতারি করার মতো সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য ২০১৪ সাল থেকে এ আয়োজন করে আসছি। পুরো রমজান মাসজুড়ে আমাদের আয়োজন চলছে।
তিনি বলেন, যখন এই কর্মসূচি শুরু করেছিলাম তখন ৩০-৪০ জন দরিদ্র রোজাদার ইফতার করতে আসতেন। এছাড়াও রাস্তার পথচারীদের পানি বিতরণ করা হতো। বছর বছর সেই সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দুইশ জনকে বিনামূল্যে ইফতার করানো হয়। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে আনন্দ লুকিয়ে থাকে। আমাদের সংগঠনের সহকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবী হয়ে সেবা করেন। এখানে কোনো আর্থিক দান অনুদান গ্রহণ করা হয় না। কারো ইচ্ছে হলে তিনি ইফতারী নিয়ে এসে ইফতার করবেন মেহমানদের সাথে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৪
এমআই/টিসি