চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: যোগ্যতার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিতে হবে। অযোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ পেলে সে ৪০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি করবে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকালে উপাচার্যের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের।
তিনি বলেন, আমাদের প্রথম পরিকল্পনা হলো টিম ম্যানেজম্যান্ট। কেউ যদি মনে করে আমি শুধু একা গোল দিব, তাহলে হবে না। পুরো টিমকে কাজে লাগাতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইপার থেকে ভিসি পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
এসময় তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যানের কথাও জানান।
অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে যাওয়ার মূল শক্তি হচ্ছে গবেষণা। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় মনোযোগী হতে হবে। বিষয়টা এমন হবে যে, একটি বিভাগে যে কয়জন শিক্ষক আছে তাদের প্রত্যেককে বছরে একটি করে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। আর এসব আর্টিক্যাল কোন কোন জার্নালে প্রকাশিত হতে পারে প্রয়োজনে তা-ও বলে দেওয়া হবে। আজেবাজে কোনো কাগজে কিংবা জার্নালে ছাপালে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যেসব জার্নালে অন্তত ৩ জন রিভিউয়ার থাকে সেসব জার্নালে প্রকাশ করতে হবে। প্রয়োজনে চতুর্থ রিভিউ করতে হবে। দরকার হলে এসব গবেষণার জন্য আমি পুরস্কারও দেব। তবে গবেষণা হতে হবে অত্যন্ত মানসম্মত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানসম্মত গবেষণা দিয়ে হবে না, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মানসম্মত গবেষণা হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত গবেষণা দেশ ও জাতির জন্য কোনো কাজে আসবে না সেসবের আমার দরকার নেই। গবেষণা হতে হবে এমন, যা সমাজে প্রভাব ফেলতে পারবে। যেসব গবেষণা দ্বারা সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে না, সেসব গবেষণার কোনো মূল্য নেই।
অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, আমাদের দেশে ফ্যাকাল্টি একটা করলে আর বন্ধ হয় না। যে ফ্যাকাল্টির কোনো চাহিদা নেই, সে ফ্যাকাল্টি বন্ধ করে দিতে হবে। যে ফ্যাকাল্টির চাহিদা আছে সে ফ্যাকাল্টি তৈরি করতে হবে। আমি আমেরিকাতে এমনটা দেখেছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
‘বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছেন- জ্ঞান সৃষ্টি, জ্ঞান বিতরণ, জ্ঞান সংরক্ষণ। জ্ঞান সৃষ্টি করতে প্রয়োজন গবেষণা। আর গবেষণার ফলাফল শ্রেণিকক্ষে নিয়ে আসতে হবে। ছাত্রদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। বই পড়িয়ে লাভ নেই, বই তো কলজের শিক্ষকরাও পড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার ফলাফল পড়ায়। আর আমরা একসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাব। এজন্য আমাদের বই, গবেষণা রেখে যেতে হবে, যা পরবর্তী প্রজন্মের কাজে আসবে’।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় বিভিন্ন আদর্শ থাকবে। আমি নিজেও এক আদর্শের মানুষ। আমি একসময় ছাত্র সংগঠন করেছি, নির্বাচনও করেছি। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন রয়েছে, যা আমাকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে বাধ্য করবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার জায়গা। এখানে সমাজ যা চায় তেমন কারিকুলাম করতে হবে। আমি ৩০-৪০ বছরের পুরনো কারিকুলাম পড়াতে পারবো না। আমাদের কারিকুলাম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা অনুযায়ী হতে হবে।
‘বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গবেষণার মূল জায়গা। এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও জোর দিতে হবে। আমি বলছি, ভালো মানের আর্টিক্যাল হলে আমার নিজের তহবিল থেকে অ্যাওয়ার্ড দিবো। তবে মানসম্মত গবেষণা হতে হবে। শুধু বাংলাদেশে মানসম্মত হলে হবে না আন্তর্জাতিকভাবে মানসম্মত হতে হবে। ভালো মানের জার্নাল প্রকাশ হতে হবে। আমি গতবছর কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব নিয়েছি, সবগুলো র্যাংকিংয়ে ঢুকেছে। এরমধ্যে যশোর, কৃষি, শাহজালাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঢুকবে না কেনো? পরে আমি এসে শুনলাম আবেদনই করা হয়নি। আমরা যদি আবেদনই না করি তাহলে আমার যোগ্যতাটা আমি বুঝতে পারবো কিভাবে? বছরে যদি দেড়শো আর্টিক্যাল প্রকাশিত হয় তাহলে আমরা র্যাংকিং এর জন্য আবেদন করতে পারি’।
‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ১১শ, তাহলে বছরে দেড়’শ আর্টিক্যাল হয় না কেন? আমি শিক্ষকদের সঙ্গে যখন বসবো, এ বিষয়ে কথা বলবো। আমার হারানোর কিছু নেই, সবকিছু হারিয়েই এখানে এসেছি। এগুলো সম্পর্কে আমি খুব সচেতন। দেখতে হবে গবেষণাটা প্যাটার্ন অনুযায়ী হচ্ছে কি-না। আমাদের চিন্তা করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের কিভাবে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত করা যায়। এটা আমার একটা প্ল্যান। যারা ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড হবে তাদেরকে অবশ্যই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে’।
অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, আমি তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করবো- শিক্ষা, গবেষণা এবং উন্নয়ন। শিক্ষা এবং গবেষণার বিষয়টা বলেছি। উন্নয়নের কথা যদি বলি, আগামী ৪১ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় যাবে? আমি থাকবো না, আপনারাও থাকবেন না। কিন্তু কোথায় যেতে চাই, কি কি ডিপার্টমেন্ট খুলতে চাই, কি কি ফ্যাকাল্টি খুলতে চাই, কি কি ফ্যাকাল্টি বন্ধ করে দিতে চাই, সব পরিকল্পনা করতে চাই। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি একটা খুললে আর বন্ধ হয় না। ডিমান্ড না থাকলে এটা বন্ধ হয়ে যাবে এটার দরকার নাই। আমাদের মনে রাখতে হবে, একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান আমাদের থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। যে মানুষটা সৎ, যোগ্য, নীতিবান এবং পরিশ্রমী সে যদি একটা ভুল করে, মানুষ সেটা মেনে নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৪
এমএ/এসি/টিসি