চট্টগ্রাম: সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র খুব কাছেই পৌঁছে গেছে ইইউএনএভিএফওআর আটলান্টা অপারেশনের একটি যুদ্ধজাহাজ। এর ফলে জলদস্যুদের ওপর যেমন আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়েছে তেমনি জিম্মি ২৩ নাবিকের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করছে জলদস্যুরা।
জাহাজে থাকা জিম্মিদের একজন স্যাটেলাইট ফোনে শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন দেড় মিনিট।
ওই নাবিক জানিয়েছেন, এমভি আবদুল্লাহতে মজুদ থাকা পানি ফুরিয়ে আসছে। পানির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে জলদস্যুরা। তবে সেহেরি ইফতার করার মতো খাবার মজুদ রয়েছে।
তিনি দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন যাতে নিরাপদে স্বজনদের কাছে ফিরতে পারেন।
এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম রাতে বাংলানিউজকে বলেন, জলদস্যুদের পক্ষ হয়ে তৃতীয় পক্ষ যোগাযোগ করেছে। আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সংকট নিরসন করতে চাই। আমাদের কাছে সবার আগে ২৩ জিম্মি নাবিকের নিরাপত্তা। তাই আমরা জাহাজটিতে সামরিক অভিযানের পক্ষে নই।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নাবিকরা নিরাপদে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে আছেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।
এর মধ্যে ১১ জনের বাড়ি চট্টগ্রামে। নোয়াখালীর দুজন। বাকিরা ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, খুলনা, নেত্রকোনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও বরিশালের।
সূত্র জানায়, পূর্ব আফ্রিকা উপকূলে জলদস্যুতা নির্মূলে দায়িত্বরত ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্স ‘অপারেশন আটলান্টার’ অংশ হিসেবে এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখছে বলে শুরু থেকেই জানিয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার রাতের অনলাইনে প্রকাশিত হয় যুদ্ধজাহাজের তিনটি ছবি। এর মধ্যে ইইউএনএভিএফওআর- আটলান্টা অপারেশনের দুজন কমান্ডোকে এমভি আবদুল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায় একটি ছবিতে। ওই যুদ্ধজাহাজে হেলিকপ্টারও রয়েছে। সেটিও এমভি আবদুল্লাহর কাছেই টহল দিতে দেখা গেছে।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরের সোমালিয় জলদস্যুর কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হওয়ার তথ্য গত বুধবার জানায় জাহাজটির মালিকপক্ষ। এর আগে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস তর্কশ গত বৃহস্পতিবার সকালে এমভি আবদুল্লাহর কাছে পৌঁছেছিল। কিন্তু নাবিকরা সশস্ত্র জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকায় সে সময় অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকেন ভারতীয় নৌবাহিনী। ২০১০ সালে কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এমভি জাহান মনি নামে একটি জাহাজ সোমালিয় জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০দিন পর জাহাজটি মুক্ত করে আনা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময় : ২১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৪
এআর/টিসি