চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের। ১৯ মার্চ তাকে নিয়োগের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নতুন উপাচার্যকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সীমান্ত তালুকদার এই নিয়োগকে ‘রাজনৈতিক’ দাবি করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিনন্দনে সিক্ত হচ্ছেন নবনিযুক্ত ভিসি। এই অধ্যাপক তাহের সাহেবকে সরাসরি আমার শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি ১৯৮৯-৯০ সনে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজে ছাত্রাবস্থায়। তখন আমি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
‘সেই রক্তাক্ত দিনগুলোতে আমরা যখন জামায়াত-শিবিরের খুনীদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে মরণপণ সংগ্রামে লিপ্ত তখন অধ্যাপক তাহেরকে দেখেছিলাম খুনি শিবিরের স্বার্থরক্ষক হিসেবে। কলেজে জামায়াত-শিবিরের প্রধান মদদদাতা ছিলেন তখনকার উপাধ্যক্ষ, পরে অধ্যক্ষ নূরুল হক স্যার (প্রয়াত)। আর তার ডান হাত ছিলেন এই অধ্যাপক আবু তাহের। তাদের মদদে শিবিরের মামলায় আমাকে গভীর রাতে পুলিশ ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। সে সময় যারা কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিল, সবাই তার রাজনৈতিক মতাদর্শ সম্পর্কে অবগত। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই জামাতি স্বার্থের প্রতিপালক আবু তাহের আজ আমার মত অযুত-নিযুত কর্মীর মেধা, শ্রম, ত্যাগের বিনিময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’।
অধ্যাপক মো. আবু তাহেরের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কাঞ্চনায়। কাঞ্চনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনহা, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৮৫ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি কমার্স কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন আবু তাহের। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৪ সালে তিনি এই বিভাগের অধ্যাপক হন।
সীমান্ত তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, এসব দেখার জন্যই কি আমরা জীবনের সোনালী সময়ে ক্যারিয়ারের কথা না ভেবে দলের জন্য রাজপথে নিজেদের জীবন বিলানোর যুদ্ধে নেমেছিলাম? দলে আমাদের পদ-পদবী-অবস্থান থাকা না থাকার কোনও প্রশ্ন, অভিযোগ, অনুযোগ নেই। জনকের কন্যা, প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী। এতেই আমাদের সব পাওয়া। এরপরও এসব চিহ্নিত জামাতিদের পদায়িত করে আমার মতো হাজারো কর্মীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণের জন্ম দিচ্ছে কারা? এভাবেই কি জনকের নির্মম হত্যাকাণ্ডের আগে মোশতাকরা শক্তিশালী হয়েছিলো?
তিনি আরও বলেন, ৯৬ এর পরে ছাত্রলীগ করা অনেক কর্মী না জেনে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। কিন্তু সেই দুর্দিনে যারা আমাদের সাথে একই লড়াইয়ের সাথী ছিলেন এমন কেউ কেউ যখন অভিনন্দনের গড্ডালিকায় গা ভাসাচ্ছেন, তখন মনে হচ্ছে- এই স্মার্ট স্বদেশে আমরা বোধহয় আনস্মার্টই রয়ে গেলাম। তবে সান্ত্বনা একটাই, রাজাকারের বাচ্চারা নির্লজ্জ। তারা পাওয়ার জন্য আজ আমাদের ক্ষমতাধরদের পা চাটে।
আশির দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় সীমান্ত তালুকদারের। ১৯৮৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ৮৯ সালে কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ৯০ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক হন। ১৯৯৮ সালে বাহাদুর বেপারি ও অজয় কর খোকনের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটিতে সহ-প্রচার সম্পাদকের পদ পান। ২০০১ সালে লিয়াকত শিকদার ও নজরুল ইসলাম বাবুর কমিটিতে তাকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়।
বদরুল আলম চৌধুরী নামের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ভিসি নির্বাচন বোর্ডে কারা ছিল, তার জন্য সুপারিশ কারা করেছিল, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এ খবরটা না পৌঁছানো সত্যিই আমাদের মতো তৃণমূল আওয়ামী সমর্থকদের জন্য আফসোসের। দীর্ঘশ্বাসটা আরো দীর্ঘ হবে বৈকি!’
আবু বকর কামাল নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘৯৬ পরবর্তীতে যারা ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠন করছেন, তাদের কথা বাদ দিলাম। কিন্তু এই ভিসি নির্বাচনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের অনেকেইতো আমাদের সময়ের ছিলেন। সুদিনে এখন ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে আর যারা সার্বিক বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে তাদের আজ পোয়াবারো। ভিসি কেন, সংসদ ও বিভিন্ন লাভজনক প্রতিষ্ঠানেও তারা বহাল তবিয়তে আছে। খোন্দকার মোশতাকরা সর্বযুগেই তাজউদ্দীনদের পরাস্ত করে আসছে। কিন্তু তাজউদ্দীনরা শেষ পর্যন্ত রক্ত দিয়ে নিজের যোগ্যতা ও বিশ্বাস অটুট রাখে’।
ওয়াহিদুল হক চৌধুরীর লিখেছেন, ‘তাকে ভিসি বানানোর জন্য যে বা যারা সুপারিশ করেছে, তাদের নামগুলো প্রকাশ করা হোক’। আশফাকুর রহমানের মন্তব্য, ‘কিছুদিনের মধ্যেই টুঙ্গিপাড়া যাবেন, সাথে কারা যাবেন-যারা যাবেন দেখার অপেক্ষা’।
দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিক্রিয়ায় নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আবু তাহের বলেছেন, ‘যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে এই গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো। শিক্ষা ও গবেষণাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবো’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৪
এসি/টিসি