চট্টগ্রাম: উদ্বোধনের চার মাস পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। পুরোপুরি চালু করতে না পারলেও এপ্রিলে আংশিক খুলে দিতে চায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
যদিও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ১৪টি র্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস ছাড়া আর কোন র্যাম্পের কাজ শতভাগ শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি।
সিডিএ’র তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এরই মধ্যে একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়। কাজ বাকি থাকলেও গত বছরের ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় এই এক্সপ্রেসওয়ে। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাও করতে পারেনি সিডিএ। ১৪টি র্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস র্যাম্প ছাড়া ফকিরহাট, নিমতলা, জিইসি অংশের র্যাম্পের কাজ এখনও চলমান। বাকি র্যাম্পগুলোর কাজ ঈদের পর শুরু করতে চায় সংস্থাটি।
সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ হয়েছিল। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। এ ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে মূল কাজ শেষ হয়েছে। টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার অংশের বেশকিছু কাজ বাকি। রাস্তার কার্পেটিং, লাইটিং, দুই পাশের রেলিং এখনো বসানো হয়নি। যা শেষ করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ১৪ টি র্যাম্পের মধ্যে ১টির কাজ পুরোপুরি শেষ। ৩টির কাজ শেষ পর্যায়ে। বাকিগুলোর কাজ শুরু হবে ঈদের পর। মূলত ইউটিলিটি সার্ভিস লাইনগুলো সরাতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় এসব র্যাম্পের কাজ শুরু করা যায়নি।
কবে নাগাদ চালু হতে পারে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে- এমন প্রশ্নের উত্তর না মিললেও চলতি বছরের এপ্রিলে আংশিক চালু করতে পারবেন বলে আত্মবিশ্বাসী সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই মাসের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হবে। লালখানবাজার অংশের কাজ এপ্রিল মাসে শেষ করে তারপর উন্মুক্ত করা হবে। আপাতত টাইগারপাস র্যাম্প দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আগামি বছরের জুনের মধ্যে সব র্যাম্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। যে র্যাম্পের কাজ শেষ হবে, সঙ্গে সঙ্গে চালু করে দেওয়া হবে। এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে বিমানবন্দর থেকে লালখানবাজার আসতে আগে যেখানে দুই-তিন ঘণ্টা লাগতো, সেখানে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে দুই লেইনের একটি র্যাম্প লালখানবাজার সরকারি অফিসার্স কলোনির সামনে নেমে গেছে। বাকি দুই লেইন লালখানবাজার থেকে ওয়াসা পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য পিলার নির্মাণ শেষে গার্ডার বসানো হয়েছে। এখন সড়ক নির্মাণ করা হবে। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে রেলিং ও লাইটিংয়ের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে টাইগারপাসের আমবাগানমুখি র্যাম্প দিয়ে পতেঙ্গা ও পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস যানবাহন যাতায়াত করতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৪
এমআর/এসি/টিসি