চট্টগ্রাম: সুগন্ধির প্রতি প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রচণ্ড অনুরাগ ছিল। নিয়মিত আতর ব্যবহার করতেন।
ঈদের নতুন জামা, পাঞ্জাবি, জুতার পর শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় নগরের এসব দোকানে ক্রেতার ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ।
আতর-টুপি কেনাকাটার জন্য আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ এলাকা, রিয়াজুদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট এলাকার দোকানগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে। মসজিদের আশপাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে ভিড় সবচেয়ে বেশি। এসব দোকানে টুপি, আতর, আতরদানি, সুরমা, তসবিহ, জায়নামাজের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের নজরও কাড়ছে এসব পণ্য। সবাই হাতে নিয়ে পণ্য যাচাই করছেন, দরদামে মিললে কিনে নিচ্ছেন তারা।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মার্কেটের দোকানি নিজাম উদ্দিন জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আতর-টুপি বিক্রি হয়। তবে গত বছর রমজানের তুলনায় এবার বিক্রি কিছুটা কম। আতর-টুপির দামও বেড়েছে।
বিক্রয়কর্মী মো. রাশেদ বলেন, চাঁদরাত পর্যন্ত ভালো বাণিজ্য হয়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে টুপি। এরপর আতর। জায়নামাজ, সুরমা, তাসবিহ বিক্রি তুলনামূলক কম।
নগরের বিভিন্ন মসজিদের সামনে ও বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় মার্কেট, ফুটপাতের দোকানে এখন ব্যস্ত আতর-টুপির ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, কম দামের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ টাকাতেও টুপি পাওয়া যাচ্ছে। তবে ডিজাইনের মধ্যে দেশি টুপি ১০০ টাকা থেকে হাজার টাকা, চায়না টুপি ২০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এর থেকে একটু বেশি দামে মিলছে ভারতীয় টুপি। এসব টুপির বিক্রি বেশি। এর বাইরে মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানিকৃত টুপির দাম হাজার টাকার ওপরে। ৫-৭ হাজার টাকারও টুপি আছে। ডিজাইন ভেদে টুপির বাহারি নাম রয়েছে। এর মধ্যে নেটের জালি টুপি, পুঁতি ও চুমকির কাজ করা টুপি, কুশিকাটা, সিডনি, ওয়ানি, পাঠানি, গুজরাটি ইত্যাদি অন্যতম।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের তৈরি টুপি। এছাড়া পাকিস্তানের পাথরি, কাটা, সিন্ধি, হাজি ও রোমিথ টুপি কিনছেন অনেকে। হাতের নকশা করা গোল টুপি ১০০-১৫০ টাকা, বিভিন্ন রঙের টুপি ২০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নতুন টুপি, আতর ও জায়নামাজে ঈদের নামাজের আনন্দ অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। তাই ঈদের কেনাকাটার শেষ মুহূর্তে এসব পণ্যের কদর কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কেউ নিজের ও পরিবারের জন্য, কেউবা আবার গ্রামের বাড়ির বয়স্ক এবং মুরুব্বিদের জন্যও এসব পণ্য কেনেন।
ডা. আসরার উল্লাহ নূরী। বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার আগে বাবা, ভাই ও ভাতিজাদের জন্য আতর, টুপি ও সুরমা কিনতে এসেছেন নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের দোকানে। তিনি বলেন, সবার জন্য ঈদের জামা কেনা হয়েছে। বাকি ছিল নতুন টুপি, আতর, সুরমা। এসব কিনতেই এ মার্কেটে এসেছি। আজকেই বাড়ি যাব।
বিক্রেতা মো. রাসেল হোসেন বলেন, মোটামুটি দামের জায়নামাজ খুঁজছে ক্রেতারা। এর মধ্যে সুতির জায়নামাজ ২০০ টাকা থেকে শুরু এবং মখমলেরগুলো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর সৌদি আরব ও কাতার, কাশ্মীর থেকে আনা পশমি এবং প্রিমিয়াম কোয়ালিটির জায়নামাজগুলোর বিক্রি ঢিলেঢালাভাবে চলছে।
বাজারে জেসমিন, বেলি, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, চকলেট, রয়েল, হাজরে আসওয়াদ, মাস্ক সুলতান, কদম, ফেরারি, রাসা ও ফিগোর মতো নানা নামের ও ঘ্রাণের আতর পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যের ছোট শিশির আতরের দিকেই আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীরা জানান, ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা এবং ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া আতরের শিশির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আতরের মধ্যে প্রতি তোলা জান্নাতুল ফেরদৌস, জেসমিন, রোজ ও দিলরুবা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৫৫০ টাকা , রেড রোজ ১৫০০-১৮০০ টাকা, এরাবিয়ান বেলি ১২০০-১৫০০ টাকা, মর্নিং কুইন ২০০০-২২০০, আসওয়াদ ১০০০-১৪০০ টাকা, লাইলাতি ও মমতাজ ১৪০০-১৬০০ টাকা, দরবার, অ্যাঞ্জেল ও জমজম আতর ২৫০-৫৫০ টাকা, ভারতীয় বেলি ৫০০-৭০০ টাকা, ব্লু লেডি, ব্লু ফোরম্যান ৭০০-৯০০ টাকা, কুলম্যান ৮০০-১১০০ টাকা, দেশি আতর হাসনাহেনা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, বেলি ও নাইট ফ্লাওয়ার ৫০০-৭০০ টাকা, জৈতন ও নিমের মেসওয়াক ১০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজুদ্দিন বাজারের আতর-টুপির দোকানের কর্মচারীরা জানান, আতর-সুরমা, টুপি, জায়নামাজ, তসবিহ বিক্রি হচ্ছে। সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, দুবাই, ভারত ও ফ্রান্সের আতরও এখানে পাওয়া যাচ্ছে।
এই মার্কেটে টুপি ও আতর কিনতে আসা ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদে পরিবার সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। এখন কিনছি টুপি আর আতর। সঙ্গে কিনবো জায়নামাজ। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় আতর মেখে গেলে ভালো লাগে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা এপ্রিল ০৯, ২০২৪
বিই/এসি/টিসি