ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

৫ বছরে রাশেদের আয় বেড়ে ১০ গুণ, প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনুছ-নোমানও কোটিপতি

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৪
৫ বছরে রাশেদের আয়  বেড়ে ১০ গুণ, প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনুছ-নোমানও কোটিপতি ...

চট্টগ্রাম: হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর যেন আলাদীনের চেরাগ হাতে পেলেন এস এম রাশেদুল আলম। মাত্র ৫ বছরের হয়েছেন আঙুল ফুলে কলা গাছ।

বাৎসরিক আয় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৩ লাখ টাকা। বেড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে স্ত্রীর নামে থাকা স্বার্ণালঙ্কারও।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফানামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে কম যান না এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আরেক প্রার্থী ইউনুছ গণি চৌধুরী। তার বার্ষিক আয় ১৬ লাখ টাকা। তবে দুই প্রার্থীর চেয়ে আয় কম দেখিয়েছেন অপর প্রার্থী সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান। তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ টাকা।  

২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এস এম রাশেদুল আলম। ওই বছর নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা ও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাশেদুল আলমের বার্ষিক আয়ে বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। এছাড়া স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিতেও পরিবর্তন এসেছে তার।  

হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালের নির্বাচনী হলফনামায় কৃষিখাত থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় দেখালেও এবছর এ খাত থেকে কোনো আয় ছিল না। ২০১৯ সালে ব্যবসা থেকে আয় সাড়ে তিন লাখ টাকা দেখালেও এবার উল্টো কমে হয়েছে তিন লাখ টাকা। তবে গত ৫ বছরে বেড়েছে শেয়ার, ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয়পত্রের আয়। এ খাতে তিনি আয় দেখিয়েছেন সাড়ে ১২ লাখ টাকা। অথচ এ খাতে কোনো আয়ই ছিল না ৫ বছর আগে। এছাড়া পেশা থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন তিনি। যদিও ২০১৯ সালের নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী এ খাতেও কোনো আয় ছিল না তার।  

৫ বছরে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালীন শুধু নিজের সম্পদ বেড়েছে তা নয়, বেড়েছে স্ত্রীর নামে স্বর্ণালঙ্কারও। ২০১৯ সালের হলফনামায় স্ত্রীর নামে ২০ ভরি স্বর্ণ দেখিয়েছেন তিনি। যার অর্জনকালীন মূল্য ধরা হয় ২ লাখ টাকা। অথচ ২০২৪ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় দেড় লাখ টাকা অর্জনকালীন মূল্যে স্ত্রীর নামে ৪৫ ভরি স্বর্ণ দেখানো হয়েছে। যা ৫ বছরের ব্যবধানে কমেছে ৫০ হাজার টাকা।

গত ৫ বছরের ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকার বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্টের মালিকও হয়েছেন তিনি। এত বিরাট অঙ্কের আয়ের বিপরীতে ২৭ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছেন এ প্রার্থী।

অন্যদিকে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচেন অংশগ্রহণ করা চেয়ারম্যান পদের আরেক প্রার্থী ইউনুছ গণি চৌধুরীর বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা। যা নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় হয় বলে উল্লেখ করেন হলফনামায়। এছাড়া অস্থাবর সম্পতিতে নিজের নামে নগদ সাড়ে ১৫ লাখ টাকা ও স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। নিজের নামে ৮ লাখ টাকার গাড়ি, ৬০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার, ২৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র, ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক মূলধন ৪ কোটি ৩১ টাকা এবং কোম্পানির পরিচালক হিসেবে শেয়ারের মূল্য বাবদ ২৫ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক মূলধন বাবদ ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন তিনি।  

স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে অকৃষি জমির মূল্য বাবদ ১৪ লাখ ৮২ হাজার নিজের নামে এবং ৬৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে স্ত্রীর নামে। আছে ২ হাজার ১৫২ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্ট। যার মূল্য বাবদ দেখানো হয়েছে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।  

রাশেদ ও ইউনুছ গণির মত চেয়ারম্যান পদে আরেক প্রার্থী সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমানও পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন ব্যবসা। হলফনামায় নিজের (নোমান) নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজের নামে নগদ ৮০ হাজার , ব্যাংকে ১ লাখ ৭৯ হাজার, ঋণপত্র বন্ডে বিনিয়োগ দেড় লাখ, প্রাইভেট কার ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং নিজের নামে ২০ ভরি স্বর্ণ ও স্ত্রীর নামে ৫ ভরি স্বর্ণ দেখিয়েছেন তিনি।  

এছাড়া স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে যৌথ মালিকানাধীন ৮০০ শতক কৃষি জমি যার মূল্য ১০ লাখ টাকা এবং ৪০ শতক অকৃষিজ জমি যার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা উল্লেখ করা হয়েছে হলফনামায়। আছে যৌথ মালিকানাধীন দুই তলা দালান। যার মূল্য ১ কোটি টাকা।  

হলফনামায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর এস ট্রেডিং, ইউনুছ গণি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স বিল্ট টেক অ্যাসোসিয়েট উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমানের নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে মেসার্স ম্যাক্সিম কার্গো সিস্টেম লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব।  

দলীয় প্রতীক না থাকায় স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করলেও তিন জনেরই রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। তিনজনই যুক্ত সরকার দলীয় বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা এস এম রাশেদুল আলম আছেন উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতির পদে। ইউনুছ গণি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান রয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, মে ৯, ২০২৪
এমআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।