চট্টগ্রাম: হু হু করে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
শনিবার (১৬ তারিখ) থেকে মাঠে নামছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে তারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার বিধি-নিষেধ জারি করেছে। তা কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে শনিবার (১৫ জানুয়ারি) থেকে দায়িত্বে থাকবেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
সরেজমিন দেখা যায়, বিধি-নিষেধের অংশ হিসেবে শনিবার থেকে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের কথা থাকলে তা মানা হচ্ছে না। নেই স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থাও। নগরের অক্সিজেন, চকবাজার, মুরাদপুর, নতুন ব্রিজ, নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একিমিত্র চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এখনও অভিযান শুরু করিনি। বিআরটিএ যে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে, সে অনুযায়ী আমাদের অভিযান পরিচালিত হবে।
অমিক্রন নিয়ে সরকারের দেওয়া ১১টি বিধি-নিষেধ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর নতুন ধরন অমিক্রনের প্রাদুর্ভাব এবং দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে- দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে, অফিস-আদালতে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকার সনদ প্রদর্শন করতে হবে। ১২ বছরের ঊর্ধ্বের কোনো ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকার সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিং এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টসমূহে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও দেশের বাইরে থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানবাহনের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকার সনদধারী হতে হবে। ট্রেন-বাসে অর্ধেক যাত্রী বহন করবে ১৫ জানুয়ারি থেকে।
বিদেশ থেকে আগত যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড ১৯ টিকার সনদ প্রদর্শন এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে দেশের সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে।
কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। কোনও এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
বিই/এসি/টিসি