চট্টগ্রাম: বাজারে চোখে পড়ে না মাটির তৈজসপত্র। তার স্থান দখলে নিয়েছে প্লাস্টিক ও সিরামিক সামগ্রী।
মৃৎশিল্পীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে নিপুণ হাতে তৈরি করেন মাটির জিনিসপত্র।
কালীপুর রুদ্র পাড়া, কুমোর পাড়া, বাণীগ্রামের সাধনপুর, আনন্দ বাজার, উত্তর চাম্বল, দক্ষিণ চাম্বল এলাকায় এখনও দৃষ্টিনন্দন মাটির কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, মটকা, দই পাতিল, মুচি ঘট, মুচি বাতি, মিষ্টির পাতিল, রসের হাঁড়ি, ফুলের টব, জলকান্দা, মাটির ব্যাংক, ঘটি, বাটি, জালের চাকা, প্রতিমা, বাসন-কোসন, ব্যবহারিক জিনিসপত্র ও খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি প্রায় ৯০ ধরনের সামগ্রী তৈরি হয়।
মৃৎশিল্পের কারিগর চন্দন রুদ্র বাংলানিউজকে বলেন, মাটি সংগ্রহের পর প্রথমে চাকে দেওয়া হয়। পরে কাঠের তৈরি মাস্তুল দিয়ে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয়। এরপর রোদে শুকাতে হয়। শেষে পোড়ানো হয় আগুনে। এভাবেই তৈরি হয় বিভিন্ন আকৃতির তৈজসপত্র।
জানা যায়, একসময় বাঁশখালী উপজেলা মৃৎশিল্পের জন্য পরিচিত ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে এখানকার কুমোর পাড়া থেকে মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেতেন। মাটির সামগ্রীতে মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুখের অনুভূতি, প্রেম-বিরহের নানা দৃশ্যপট, মনোমুগ্ধকর ছবি হাতের স্পর্শে ফুটিয়ে তুলতেন শিল্পীরা। কিন্তু এখন পুঁজির অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এখানকার মৃৎশিল্প।
এই পেশায় এখন ভর করেছে অভাব-অনটন। মেলা-পার্বনেও তেমন চাহিদা নেই মাটির তৈজসপত্রের। তবে কিছু হোটেল-মিষ্টির দোকানে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজায় এখনও প্রয়োজন হয় মাটির সামগ্রীর। পহেলা বৈশাখে মাটির সরাইয়ে পান্তাভাত খাওয়ার রীতিও চালু আছে।
কালীপুর রুদ্র পাড়ার মৃৎশিল্প পণ্যের বিক্রেতারা জানান, বাপ-দাদারা ৮০ বছর পূর্ব থেকেই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। এলাকায় শতাধিক পরিবার এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতো। এখনও আমরা পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। মাটির তৈজসপত্র বানাতে প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি অনেক দূর থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
জানা গেছে, কালীপুর রুদ্র পাড়ার ৭-৮টি পরিবার এখনও মৃৎশিল্পের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন। সরকার এই শিল্পের জন্য আলাদা ব্যাংক ঋণ, সরকারি-বেসরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করলে মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
এসএস/এসি/টিসি