চট্টগ্রাম: আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার চট্টগ্রামের একটি অগ্নিগর্ভ অধ্যায় নিয়ে সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘একটি না বলা গল্প’। সেই চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো দেখতে হাউস ফুল দর্শক সমাগম হলো শুক্রবার (৫ আগস্ট) বিকেলে।
শো শুরুর আগে চলচ্চিত্রটির পরিচালক পঙ্কজ পালিত দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, আমার মনে পড়ে একদিন বিশ্বজিৎ চৌধুরীর ‘মৃত্যু যেভাবে বাঁচায়’ গল্পটি চায়ের টেবিলে পড়ি।
আমি বাণিজ্যিক ছবির পক্ষে থাকলেও আমি কখনো ইচ্ছেকৃতভাবে বাণিজ্যিক ধারার ছবি নির্মাণে যাব না। আমি ছবিতে বার্তা দিতে চেয়েছিলাম দর্শকদের। সত্য ঘটনা তুলে ধরেছেন লেখক। আমি সেই গল্প পর্দায় নিয়ে গেলাম। চার-পাঁচ পাতার একটি গল্প ছিল। সেটিকে চিত্রনাট্যে রূপ দিলাম। সিনেমাটিক ফর্মে কনভার্ট করলাম। কিছু পরিবর্তন সংযোজন করলাম। কিছু সংলাপ এনেছি। আমি বলবো ‘একটি না বলা গল্পের’ জন্য এক ঘণ্টা ৪৬ মিনিট আপনার জীবন থেকে আমার জন্য ব্যয় করতে হবে। এটি সিনেমা নয় এটি স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের দলিল, ইতিহাস। এ ঘটনাটি আপনাকে জানতেই হবে।
আমরা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি, বঙ্গবন্ধুর কথা বলি। আমরা কতটুকু লালন করি জানি না। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা কী ছিল, আপনারা জানেন। কিন্তু আজকের প্রজন্ম সেই ইতিহাস থেকে অনেক দূরে। তা আপনারা জানেন। ছবির ঘটনাটি আপনার উপলব্ধি করবেন। কতটুকু উত্তীর্ণ হয়েছি সেটি আপনারাই বিবেচনা করবেন। আমি কখনো এই ছবি করতে কখনো ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করিনি। লোকেশন বুঝতে চেষ্টা করেছি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও আশির দশককে আনা কতটা কঠিন ব্যাপার তা আপনারা জানেন। আশির দশকে ছাত্রদের পোশাক কেমন ছিল, রাস্তাঘাটের অবস্থা কেমন ছিল। আজ কোথাও ক্যামেরা বসাতে পারি না। সব জায়গায় সাইনবোর্ড। এত সাইনবোর্ড ছিল না। এক ঘণ্টা ৪৬ মিনিটের ছবিটি ধৈর্য ধরে দেখতে হবে। ছবি নির্মাণে যারা সহযোগিতা করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি মনে করি চলচ্চিত্র নির্মাণ ঢাকায় কেন্দ্রিক। ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে ছবি তৈরি হচ্ছে স্থানীয় ভাষায়। চট্টগ্রামে একদিন সিনেমা ফ্যাক্টরি হবে। এখানকার ছেলেরা ছবিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
গল্পকার বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, এ ছবি সম্পর্কে আমার বিশেষ কিছু বলার নেই এই কারণে আমিও প্রথম আপনাদের সঙ্গে ছবিটি দেখবো। আমি অনেক আগে এ গল্পটি লিখেছিলাম। আমার সঙ্গে পরিচালকের পরিচয় ছিল না। তার প্রস্তাব পেয়ে সানন্দে সম্মত হয়েছি। আমাদের প্রজন্মের যারা, মুক্তিযুদ্ধকে দেখেছি শিশু বয়সে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে গেলে শৈশবের স্মৃতিই ভরসা। কিংবা পরিণত বয়সে কারও স্মৃতিচারণ ও বইপুস্তক। আমি বলি, আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ছিল নব্বইয়ের গণআন্দোলন।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারিকে সামনে রেখে ফ্ল্যাশবেকে ১৯৭১ এর ঘটনাবলি বর্ণনা করতে চেয়েছি। সেদিন মোজাম্মেলের বুকে না লেগে গুলি আমাদের বুকে লাগতে পারত। কারণ আমরা সবাই রাজপথে ছিলাম। সেদিন অনেককে দাফন-কাফন করা হয়নি। আমরা দেখেছি সেদিন বলুয়ার দীঘির শ্মশানে কোনো ধর্ম পরিচয় না জেনে অনেককে দাহ করা হয়েছে। এ নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশ করি ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ নামে। শিশু বয়সের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, পড়াশোনা আর ২৪ জানুয়ারির ঘটনা নিয়ে গল্পটি লিখেছিলাম। গল্পটি যোগ্য লোকের হাতে পড়েছে।
‘একটি না বলা গল্প’ দেখার পর নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার বাংলানিউজকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে। ছবি দেখে মূল গল্পটা পড়তে আগ্রহ জন্মেছে। ২৪ জানুয়ারির মূল ঘটনায় আরেকটু ফোকাস দেওয়া যেত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম। সংস্কৃতি সংগঠক সুনীল ধরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চলচ্চিত্রটির অন্যতম দুই অভিনেতা আরিফ হক ও রাকিব হোসেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২২
এআর/টিসি