চট্টগ্রাম: বঙ্গোপসাগরে টানা ৬৫ দিনের মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৪ জুলাই থেকে শুরু হয় উত্তাল সাগরে জাল ফেলা। এরপর থেকেই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।
রুপালি ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে-ফিশিং ট্রলার মালিক ও মৎস্য আড়তদারদের মুখে হাসি ফুটেছে।
ছোট-বড় সব আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ঘাটে। তবে বাজারে দাম তেমন কমছে না। এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১২শ টাকায়। ফলে সবার পাতে জোটে না রুপালি ইলিশ। সাগরে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে এবার।
মৎস্য বিভাগ বলছে, বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ইলিশের গতিপথ। পুরো মৌসুমজুড়ে এবার ইলিশের সরবরাহ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার সুফল পেতে শুরু করেছেন জেলেরা।
ফিশারিঘাটের মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, সাগরে ইলিশ ধরা পড়ায় খুশি তারাও। গেল বছরের তুলনায় এবার আরও লাভবান হওয়া যাবে।
ট্রলার থেকে নামিয়ে ঠেলাগাড়ি বা ভ্যানে ইলিশ আনা হয় ফিশারি ঘাটে। মানভেদে প্রতি কেজি ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিনশ থেকে ছয়শ টাকা পর্যন্ত। সামনে ইলিশের দাম কমবে বলে মনে করছেন আড়তদাররা।
জেলেরা জানান, এটি ইলিশের ভরা মৌসুম। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলে যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে সেগুলো আকারে ছোট হলেও পদ্মার ইলিশ আকারে একটু বড়। ফিশারিঘাট থেকে এসব ইলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
দেশে গত দশ বছরে অনেক বেড়েছে জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন। ১৭টি ইলিশ প্রধান জেলায় পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এবং মার্চ-এপ্রিলে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ পর্যবেক্ষণ সেলের হিসেবে, ১৫ বছর আগে দেশের ২৪টি উপজেলার নদীতে ইলিশের বিচরণ ছিল। এখন দেশের অন্তত ১২৫টি উপজেলার নদীতে ইলিশ বিচরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে সৃষ্ট বহু চর ও ডুবোচর এবং পদ্মা ও মেঘনার নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে সমুদ্র থেকে ইলিশ মিঠা পানিতে আসতে বাধা পাচ্ছে। এতে ইলিশের গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে।
বিএফআরআই সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে মোট ৩ প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২টি (চন্দনা ও গোর্তা ইলিশ) সারা জীবন উপকূল ও সাগরে কাটায় এবং অপর ১টি মিঠা পানি ও লোনা পানিতে জীবন অতিবাহিত করে। ইলিশ স্রোতের বিপরীতে দৈনিক ৭১ কিলোমিটার অভিপ্রয়াণ করতে পারে।
পৃথিবীর মোট ১১টি দেশে বর্তমানে ইলিশ পাওয়া যায়। দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৭৫ শতাংশ বাংলাদেশ আহরণ করে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মিয়ানমার এবং ৩য় অবস্থানে ভারত। ১২ বছর আগেও দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এসএস/টিসি