ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভারতে বারবার রক্তাক্ত সাংবাদিকের কলম

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫
ভারতে বারবার রক্তাক্ত সাংবাদিকের কলম

কলকাতা: ভারতের উত্তর প্রদেশে সাংবাদিক যোগেন্দ্র সিংকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ফের উত্তপ্ত দেশটির মিডিয়া অঙ্গন। গত দুই যুগ ধরে একের পর এক সাংবাদিক হত্যার শিকার হলেও হয়নি দৃষ্টান্তমূলক কোনো বিচার।

প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কলম ধরায় বারবার ঘটেছে এসব হত্যাকাণ্ড। উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা রাম মূর্তির দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরে ‘হত্যা’র  শিকার যোগেন্দ্র এর সবশেষ উদাহরণ।

অভিযোগে জানা যায়, সাংবাদিক যোগেন্দ্র সিংকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুড়িয়ে মারে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। তবে আত্মহত্যা বলেও প্রচার করা হচ্ছে এ ঘটনার। এর আগেও ভারতে কয়েকজন সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় গোটা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সে রকমই কিছু ঘটনা আজকের আলোচ্য বিষয়-

১৯৯২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। সাংবাদিক বক্সি তীর্থ সিং খুন হন পাঞ্জাবের ধুরি এলাকায়। দুর্বৃত্তরা তাকে খুন করে পালিয়ে যায়। বক্সি তীর্থ সিংয়ের খুনের কারণ আজও জানা যায়নি।

ভারতের যে সাংবাদিক খুনের ঘটনায় গোটা দেশ নড়েচড়ে বসেছিল সেটি ১৯৯৯ সালের ২৩ জানুয়ারির কথা। ওই দিন খুন হন ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সাংবাদিক শিবাঙ্গি ভাটনাগর। শিবাঙ্গির খুনের সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসে এক বিরাট দুর্নীতির ঘটনা। ওই ঘটনায় জড়িত পুলিশের এক বড় কর্তার নামও উঠে আসে। আই পি এস রতিকান্ত শর্মা দীর্ঘ তালবাহানা, লুকোচুরির পর দিল্লি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। জানা যায়, রবিকান্ত শর্মার অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে কাজের কারণেই খুন হন শিবাঙ্গি ভাটনাগর।

একই বছর ১৩ মার্চ খুন হন ‘আউটলুক’ পত্রিকার কার্টুনিস্ট  ইরফান হাসান। এ খুনের ঘটনায় অভিযোগ ওঠে একটি ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে।

এরপর দুর্বৃত্তরা ১৯৯৯ সালে ১০ অক্টোবর খুন করেন সাংবাদিক এম এ লাললুরুকে। এ খুনের কারণ আজও ধোঁয়াশায়।   

১৮ মার্চ ২০০০ সালে এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক অধীর রাই খুন হন। কে বা কারা তাকে খুন করে সেটা আজও অজ্ঞাত। ওই বছরেরই ২০ আগস্ট ‘মনিপুর ডেইলি’র সম্পাদক  টি ব্রজোমনি সিং খুন হন। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কী কারণে বা কারা তাকে হত্যা করেছিলেন তা আজও রহস্যের চাদরেই মোড়ানো।

২০০১ সালে খুন হন বর্ষীয়ান সাংবাদিক মুকুল চাঁদ যাদব। তিনি জমি মাফিয়াদের গুলির শিকার হন।

‘পোরা পরিকর’পত্রিকার সম্পাদক রাম চন্দ্র ছত্রপতি ২০০২ সালের ২১ নভেম্বর দিল্লীর এক হাসপাতালে মারা যান। তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০০৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ভারতের একটি স্বাধীন সংবাদ সংস্থার সম্পাদক জম্মুতে খুন হন। তকে গুলি করে হত্যা করা হয়। রাম চন্দ্র ছত্রপতির মৃত্যুর মতই এই খুনের কারণ জানা যায়নি।

তেলেগু সংবাদ জগতের বলিষ্ঠ সাংবাদিক ভিরাবনিয়া ইয়োদাগিরি অন্ধ্র প্রদেশের মেদান অঞ্চলে ২০০৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি খুন হন। এ সাংবাদিকের খুনের পর গোটা ভারতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

২০০৪ সালে কাশ্মীরে ভোটের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বোমার আঘাতে মারা যান আসিয়া জিলানী। ২০ এপ্রিল তার মৃত্যু ঘটে।

‘অসমীয়া ডেলি’র সাংবাদিক প্রহ্লাদ ঘোলা ২০০৮ সালের ৬ জানুয়ারি খুন হন। জানা যায়, খুন হওয়ার কিছুদিন আগ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আসামের জঙ্গল থেকে কাঠ চোরাচালানের বিষয়ে খবর প্রকাশ করছিলেন প্রহ্লাদ।

আসামেই ছয় সন্ত্রাসীর হাতে প্রাণ দেন সাংবাদিক মহম্মদ মুসলিম উদ্দিন। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়।

২০০৮ সালের ১৩ আগস্ট সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কাশ্মীরে প্রাণ দেন ‘চ্যানেল ৯’র সাংবাদিক জাভেদ আহমেদ মীর।

হিন্দি পত্রিকা ‘হিন্দুস্তান’র সাংবাদিক বিকাশ রঞ্জন ২০০৮ সালের ২৫ নভেম্বর বিহারের সমস্তিপুর জেলায় খুন হন। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাংবাদিক বিজয় প্রতাপ সিং বোমার আঘাতে মারা যান। মৃত্যুর সময় তিনি একটি সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন।

২০১২ সালের ১ মার্চ খুন হন ‘মিডিয়া রাজ’ গোষ্ঠীর সাংবাদিক রাজেশ মিত্র। তাকে দুই সন্ত্রাসী জনসমক্ষে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি ঘটে মধ্য প্রদেশের রেওয়া শহরে।

এ তালিকায় সর্বশেষ নাম যোগ হয়েছে যোগেন্দ্র সিংয়ের। যদিও খুন না আত্মহত্যা এনিয়ে এখনও সংশয় কাটেনি।

ভারতে একের পর ঘটছে সাংবাদিক হত্যা। এ যেন সাংবাদিক হত্যার উৎসব! এসব হত্যার ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

তবে এসব সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হবে এটাই প্রত্যাশা সবার।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৫
টিআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।