ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ফুলঝাড়ুতে ভাগ্য বদল ত্রিপুরার পাহাড়িদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২০
ফুলঝাড়ুতে ভাগ্য বদল ত্রিপুরার পাহাড়িদের ফুলঝাড়ুতে ভাগ্য বদল ত্রিপুরার পাহাড়িদের

আগরতলা (ত্রিপুরা): ফুলঝাড়ুর উপকরণ গুল্ম চাষে ভাগ্য বদল হয়েছে ত্রিপুরার পাহাড়ি জনজাতিদের। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর বাড়ছে চাষির সংখ্যা।

উৎপাদন খরচ কম ও রপ্তানির সুযোগ থাকায় পড়ে থাকছে পাহাড়ের কোনো জমি। সরকারিভাবে করা হচ্ছে সহযোগিতা।

ফুলঝাড়ু ঝোপজাতীয় গুল্ম। মূলত পাহাড়ের ঢালে প্রাকৃতিকভাবে এদের দেখা মেলে। বসন্ত ঋতুর শেষে বৃষ্টি হলে এই গুল্মগুলি ঘন সবুজ হয়ে বেড়ে ওঠে। কিছুদিন পর এগুলি থেকে একটি শক্ত কাণ্ড বেরিয়ে আসে যার উপরের অংশে লম্বা চুলের মতো ফুল বেরিয়ে আসে। শীতে গুল্মগুলি শুকিয়ে যায়। এই ফুল যুক্ত কাণ্ড সংগ্রহ করে তৈরি করা হয় ফুলঝাড়ু।

প্রায় প্রতিটি ঘরেই এটি ব্যবহার হয় ঘরের ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করতে। ত্রিপুরার কিছু অংশে এগুলিকে রেমা ঝাড়ুও বলা হয়।

মূলত রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষ যুগ যুগ ধরে এগুলি বন থেকে সংগ্রহ করে তা হাটে-বাজারে এনে বিক্রি করেন। এই ঝাড়ুগুলির গুণগত মান ভালো হওয়ার বর্হিঃরাজ্যেও রপ্তানি হচ্ছে।

তবে জঙ্গল থেকে ব্যাপকহারে ফুলঝাড়ু আহরণের ফলে বনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে গোটা প্রজাতিটি। বিষয়টি চিন্তা করে ফরেস্ট রিসার্চ অ্যান্ড লাইভলিহুড এক্সটেনশন ত্রিপুরা সেন্টার (এফ আরসিএলই) ফুলঝাড়ুর চাষ শুরু করে।

সংস্থার ত্রিপুরা শাখার ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা পবন কুমার কৌশিক বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে তারা ঊনকোটি জেলার মাছমারা এলাকায় এক হেক্টর জায়গায় আড়াই হাজার ফুলঝাড়ু গাছের চারা পরীক্ষামূলকভাবে লাগান এবং প্রথম চেষ্টাতেই সফলতা আসে।

জনজাতিদের জমিতে এগুলি লাগানো হয়েছিল। একই জমিতে মিশ্র চাষ পদ্ধতিতে অড়হর ডাল, মরিচ, ঢেড়সসসহ আরো কিছু সবজি লাগানো হয়।

মাত্র ১০ মাসের মধ্যে কৃষক এক হেক্টর জায়গা থেকে দুই লাখ রুপি আয় করে। এর মধ্যে ফুলঝাড়ু থেকেই শুধু আয় হয় দেড় লাখ রুপি। পুরোটাই চাষির লাভ। কারণ এই চাষের সব খরচ এফআরসি এলই দিয়েছিল। এর চাষ লাভজনক দেখে পরের বছর আরো ৩০ থেকে ৪০ জন জনজাতি চাষি টিলা জমিতে ফুলঝাড়ু চাষ শুরু করেন। বর্তমানে রাজ্যে কয়েক হাজার মানুষ এই চাষের সঙ্গে জড়িত।

মূলত ঝুমিয়া অংশের মানুষ জুমচাষের পরিত্যক্ত জমিতে ফুলঝাড়ু চাষ করছেন। পবন কুমার কৌশিক বলেন, একবার একটি টিলা জমিতে জুম চাষ করলে ওই জমি ন্যূনতম পাঁচবছর পরে আবার জুমচাষের উপযুক্ত হয়। ততদিন টিলা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং জমিতে গাছপালা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে ভূমিক্ষয় হয়। কিন্তু ফুলঝাড়ু লাগালে মাটির ক্ষয়রোধ হয় যা পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

তিনি আরো বলেন, এখন প্রতিবছর রাজ্যে ফুলঝাড়ু চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে। প্রতিটি জেলার টিলা জমিতে এর চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। চাষিরা নিজেরাই এখন প্রতিবছর নতুন নতুন জমিতে ফুলঝাড়ু চাষ করছেন এবং তা সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন।

ফুলঝাড়ু ননটিম্বার ফরেস্ট প্রোডাক্ট (এনটিএফপি) তালিকাভুক্ত হওয়ায় রাজ্য সরকার এগুলি থেকে কোনো ধরনের শুল্ক আদায় করে না। তাই রাজ্যে কী পরিমাণ ফুলঝাড়ু উৎপাদন হচ্ছে প্রতিবছর তার সঠিক তথ্য নেই। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এখন ফুলঝাড়ু একটি বড় ভূমিকা নিয়েছে।

পাশাপাশি এফআরসিএলই সাধারণ মানুষদের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ক করে প্লাস্টিকের বেত ব্যবহার না করে বাঁশের বেত ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ফুলঝাড়ু তৈরি করা যায়।

এফআরসিএলইর পাশাপাশি রাজ্যে কর্মরত অন্য ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও তাদের তত্ত্বাবধানে ফুলঝাড়ু সংগ্রহ করে বহিঃরাজ্য রপ্তানি করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০, ২০২০
এসসিএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।