ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাণিজ্যমেলায় অংশ নিচ্ছে ১০ দেশের ১৭ প্রতিষ্ঠান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
বাণিজ্যমেলায় অংশ নিচ্ছে ১০ দেশের ১৭ প্রতিষ্ঠান ছবি: সংগৃহীত

এবারের বাণিজ্যমেলায় নিয়ে ১০ দেশের ১৭ প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।  

তিনি বলেন, মেলার ভেতরে দুটি হল এ ও বি এবং হলের বাইরের প্রাঙ্গণে স্টল/প্যাভিলিয়ন/রেস্তোরাঁসহ সর্বমোট ৩৩১টি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা রয়েছে।

এরমধ্যে ১০টি দেশের (ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপাল) অংশগ্রহণে বিদেশি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল সংখ্যা মোট ১৭টি।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) পূর্বাচল নতুন শহরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ঘোষণা দেন, রোববার (১ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে ২৭তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। গতবারের মতো এবারও রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে  (বিবিসিএফইসি) শুরু হবে এ মেলা।   

মন্ত্রী জানান, এবারের মেলায় যাতায়াত সুবিধায় প্রথমে ৭০টি বাস সার্ভিস চালু থাকবে । মেলায় আগত ক্রেতা, দর্শণার্থীদের সংখ্যা বাড়লে বাসসংখ্যা বাড়ানো হবে।

টিপু মুনশি বলেন, গাড়ি চলাচল করবে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিআরটিসির বাস চলবে। এতে করেও যদি দেখা যায় যে, এই বাসে হচ্ছে না তাহলে আরও ১৫০ বাসের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এছাড়া গত বছরের তুলনায় রাস্তার অবস্থাও ভালো। ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে। মোটামুটি সার্বিক পরিস্থিতি ভালো।  

মেলায় প্রবেশ টিকিট অনলাইনে কাটা যাবে বলে তথ্য দেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, মেলায় প্রবেশে বড়দের টিকিট ৪০ টাকা আর ছোটদের ২০ টাকা। মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধীরা ফ্রি প্রবেশ করতে পারবেন। মেলার টিকেট অনলাইনেও বিক্রয় করা হবে। এছাড়াও বিকাশের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টেও টিকেট বিক্রয় করা হচ্ছে।

টিপু মুনশি বলেন, দর্শনার্থীদের সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপরও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। যদিও এটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা সেখানে সব দেশের মানসম্পন্ন পণ্য স্থান পায়। তবে আমাদের চিন্তা চেতনা থাকে নিজস্ব পণ্যের প্রদর্শন করা। যাতে বিশ্ব পরিচিতি পায়।

বিদেশি দেশগুলো নানা সমস্যার জন্য মেলায় অংশ নিতে চায় না। সে বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু জায়গায় সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টাও করা হচ্ছে৷ যেমন, বেশিদের মেলা প্রাঙ্গণে থাকার ব্যবস্থাসহ নানা জটিলতা। আমরা তাদেরকে সব রকমের সুবিধা দিতে চাই এবং মেলা আরও প্রসার করতে চাই।  

টিপু মুনশি জানান, বরাবরের ন্যায় এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতির পিতার জীবন ও আদর্শ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, উন্নত শিল্প সমৃদ্ধ-সোনার বাংলা বিনির্মাণে তার অবদান ও ভাবনা, দেশের উন্নয়ন ইত্যাদিকে প্রক্ষেপন করে এবারের বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন অধিকতর নান্দনিক, ভাবগাম্ভীর্য ও অর্থপূর্ণভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নেওয়ার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হবে।  

বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের ভেতরে জাতির পিতার জীবন ও কর্মভিত্তিক বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন ছাড়াও তার সম্পর্কিত পুস্তকাদি এবং তার জীবন কর্মভিত্তিক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

একটা পর্যায়ে বিবিসিএফইসি -এ  বছরের ১২ মাসই মেলা আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, এখানে তো শুধু ইপিবি এক মাসের মেলার আয়োজন করে। আমরা চাই বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন এখানে এক সপ্তাহ বা ১৫ দিনের মেলার আয়োজন করুক। এখন তারা চিঠি দিচ্ছে। মেলা করতে চাচ্ছে। এভাবে আস্তে আস্তে বাড়বে। আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে এখানে বছরের ১২ মাসই মেলা আয়োজন করা সম্ভব হবে।

মেলা নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণার্থে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র‍্যাব নিয়োজিত থাকবে। পুলিশ, র‍্যাব মেলা প্রাঙ্গণ ও এর বাইরে নিয়মিত টহল দেবে। এছাড়া সার্ভিস গেট ও ভিআইপি গেটের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেট, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। মেলার প্রবেশ গেটে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

যে কোনো ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে ফায়ার ব্রিগেড। মেলার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি অস্থায়ী সচিবালয়।

সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ তথ্য দেন, হলে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট স্টল সংখ্যা ৮৪টি। যার মধ্যে ফার্নিচার জোনের আওতাভুক্ত (৯ টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মোট ২২টি স্টল) এবং ইলেকট্রনিক্স জোনের আওতাভূক্ত (৫ টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মোট ২৩ টি স্টল) বরাদ্দ হয়েছে।  

হল-বি তে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৯০ টি মোট স্টল রয়েছে। এক্সিবিশন হলের সামনে এবং পিছনে অবস্থিত প্রিমিয়ার প্যান্ডিলিয়ন (ক্যাটাগরি এ, বি & সি), সাধারন প্যাভিলিয়ন ও প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়নসহ মোট সংখ্যা ৫৭টি। এক্সিবিশন হলের পেছনের মাঠে অবস্থিত প্রিমিয়ার রেস্তোরাঁ ও প্রিমিয়ার মিনি রেস্তোরাঁর সংখ্যা ২৩টি।

এছাড়া হল-এ এবং বি ব্যতিত হলের সামনের এবং পেছনের অংশে অবস্থিত বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট স্টল সংখ্যা ৬০টি। মা ও শিশু কেন্দ্র-২টি, এটিএম বুথ-৪টি, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান কেন্দ্র-২টি, নামাজের স্থান-২টি (পুরুষ ও মহিলা), রক্তদান কেন্দ্র-২টি, এক্সিবিশন হলের সামনে সিটিং জোনসহ ইত্যাদি স্থাপনা রয়েছে।

তপন কান্তি ঘোষ জানান, দর্শনার্থীদের সকল প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য রয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র। ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য মেলায় থাকছে জনতা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক। পাশাপাশি মেলায় একাধিক ব্যাংক বুথ স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। মা ও শিশুদের কথা বিবেচেনা করে মেলায় স্থাপন করা হয়েছে ২টি মা ও শিশু কেন্দ্র। অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার মধ্যে রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, মসজিদ, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার/বেঞ্চ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কার পার্কিংয়ের সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, ভিআইপি পার্কিংয়ের জন্য রয়েছে বিল্ট-ইন দ্বিতল কার পার্কিং বিল্ডিং যেখানে পাঁচ শতাধিক গাড়ির পার্কিং সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও এক্সিবিশন হলের বাইরে ৬ একর জমিতে প্রায় ১০০০ টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এবারের বাণিজ্য মেলা জানুয়ারি মাসব্যাপী সকাল ১০টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১,২০২২
জিসিজি/এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।