ঢাকা, সোমবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফারইস্ট স্টকসের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১৭ জনের নামে মামলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২৩
ফারইস্ট স্টকসের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১৭ জনের নামে মামলা

ঢাকা: ১১৬ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মঙ্গলবার ডিএমপির মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

বুধবার (৫ এপ্রিল) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন—প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিইও তরফদার জাহাঙ্গীর আলম (৫০), সাবেক এফও মো. জাহিদুল হক (৪৪), এম এ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেক (৬২), ছেলে শাহরিয়ার খালেদ রুশো (৩৯), মেয়ে মিস. শারওয়াত খালেদ (৩৬), জামাতা তানভিরুল হক, মেয়ের শ্বশুর মো. ফজলুল হক (৬৬), আবুল কাশেম মোল্লা (৭৫), রাশেদ মোহাম্মদ মাজহারল (৩৭), খশরুবা সুলতানা শিল্পি (৪৫), শেখ ইউসুফ আলী (৬১), মাহবুবা সুলতানা (৪৯), মিসেস দিলরুবা সুলতানা, মো. নজরুল ইসলাম (৫৭), মিজানুর রহমান মোস্তফা ও কাজী শাহরিয়ার।

সিআইডি জানায়, ২০০৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে এম এ খালেক ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যানের পদে থেকে নিজে ও তার আত্মীয় স্বজনসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্টরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায় ১১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ পূর্বক সম্পদে রূপান্তর ও বিদেশে পাচার করেছেন।

ওই অভিযোগে সিআইডি অনুসন্ধান শেষে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) এম এ খালেকসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করে।

মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, ফারইষ্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লি. একটি পাবলিক লি. কোম্পানি, যা জয়েন্ট স্টক অ্যান্ড ফার্মের অধীনে নিবন্ধনকৃত। এটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ট্রেক নং-২২৬) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ট্রেক নং- ১৩৮) এর সদস্য।

আসামি এম এ খালেক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার, নিজ প্রভাব বিস্তার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের টাকা অপরাপর আসামিদের সহায়তায় লেয়ারিং করে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং করেছেন।

নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হোদাভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর বিশেষ রিপোর্টে দেখা যায়, ঘটনার সময়কালে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিনিয়োগকারী ৮৯ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৭ টাকার চেক বা নগদ টাকা জমা করেন। যা বিনিয়োগকারীদেও বিও হিসাবে দেখানো হলেও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হয়নি। অর্থাৎ ভুয়া জমা দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এছাড়া, আসামিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিনিযোগকারীরা বিভিন্ন সময়ে মোট ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার চেক জমা করেন, কিন্তু বিভিন্ন কারণে (অপর্যাপ্ত জের, স্বাক্ষরে গড়মিল, টাকার অংক ভুল লেখা) চেকগুলো ডিজঅনার হয়, যা বর্ণিত কোডে রিভারসাল জমা দেখানো হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে কোম্পানির হিসাবে যোগফলে ২২ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকার স্থলে ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ বসিয়ে তথ্যের গড়মিল করে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।

সিআইডি আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেক তার স্বার্থ সংশ্লিস্টদের অপারেটকৃত বিও হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকা সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে ২টি চেক ইস্যু করে ৫০ লাখ টাকা লেয়ারিং করে আবুল কাসেম মোল্লা নামক প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের একাউন্টে জমা করে আসামি এম. এ. খালেক তার প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ব্যক্তিগত একাউন্টে হস্তান্তর করে নিজে আত্মসাৎ করেন। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক থেকে ফারইষ্ট স্টকস্ অ্যান্ড বন্ডস লি. নামে গৃহীত ৪১ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের (আবুল কাশেম মোল্লা, কাজী শাহরিয়ার এবং নজরুল ইসলাম) মাধ্যমে লেয়ারিং করে পারস্পরিক যোগসাজশে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস প্রতিষ্ঠানের টাকা হস্তান্তর ও গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেন।

প্রতারণার টাকাকে সম্পদে রূপান্তরের জন্য স্থাবর সম্পত্তির বিক্রেতা শ্যামা করিমকে ফারইষ্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের ব্যাংক হিসাব থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমির মূল্য পরিশোধে অপরাধলব্ধ অর্থ লন্ডারিং করে স্থাবর সম্পদে রূপান্তর করেছেন।

এম এ খালেক পরিচালিত ৮টি বিও হিসাবে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লি. কোম্পানি কার্যক্রম শুরুতেই ২০১০ সালের জুন মাস থেকে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন সিইও তরফদার জাহাঙ্গীর আলম ও মো. জাকির হোসেন ভূইয়াসহ পারস্পরিক যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানের অপারেশনাল অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ফারইস্ট ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি. থেকে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস প্রতিষ্ঠানে আগত ঋণের মোট ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং ফেইক ডিপোজিট মোট ৭ কোটি ১০ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা জমা দেখান। যা কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে জমা  হয়নি এবং ওই জমার বিপরীতে প্রতারণা পূর্বক সমপরিমাণ মার্জিন (ঋণ) গ্রহণ করেন। অর্থাৎ কোনোরকম বিনিয়োগ ছাড়াই ৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হন। যা কোম্পানির হিসাব থেকে সিকিউরিটি একচেঞ্জকে পরিশোধ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২৩
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।