ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সরকারের সহায়তা চান নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
সরকারের সহায়তা চান নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা

ঢাকা: চারদিকে পোড়া গন্ধ, কান্নার শব্দ, হট্টগোল। যেন ভূতের ঘরে পরিণত হয়েছে রাজধানীর অন্যতম শপিং সেন্টার নিউ সুপার মার্কেট।

যেখানে রমরমা ব্যবসা ছিল, ব্যবসায়ী আর ক্রেতার আনাগোনায় মুখর ছিল পরিবেশ, একদিনের ব্যবধানে সেখানে আজ অন্ধকার।  

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটটির তৃতীয় তলার প্রতিটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দ্বিতীয় ও নিচ তলার দোকানগুলোরও।

সোমবার (১৭ এপ্রিল) পোড়া ওই ভবনের সামনে গেলে দেখা যায় অগ্নিকাণ্ডে নিঃস্ব হওয়া ব্যবসায়ীদের অনেকেই আহাজারি করছেন। কেউ কেউ ছাই থেকে অবশিষ্ট কিছু আছে কি না খুঁজছেন। কয়েকজন পোড়া জিনিসপত্রের পাশেই অপলক চেয়ে বসে আছেন। কাউকে দেখা গেছে পুড়ে যাওয়া টাকা, কয়লা হওয়া ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি বঙ্গবাজারের মতো সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরও যেন সহায়তা করা হয়।

২৫ বছর আগে কোরিয়া থেকে ফিরে স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণ বিক্রি করে নিউ সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ‘মেঘ বৃষ্টি গার্মেন্টস’ নামে একটি দোকান ভাড়া নেন মো. হামিদ। তারপর থেকে পাইকারি-খুচরা গেঞ্জি, টি শার্ট বিক্রি করে আসছিলেন।

একই তলায় তার দোকানের পাশে তার আরও দুই ভাই আমিনুল ও মমিনুল ‘আক্কাস ফ্যাশন’ নামে আরেকটি দোকান করতেন। অগ্নিকাণ্ডে তাদের তিন ভাইয়ের ৫০ লাখ টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে।

মো. হামিদ বলেন, ‘আমার দোকানের ৩০ লাখ টাকার মালামাল ছিল, সবই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কীভাবে চলবো জানি না! আমার কিডনি রোগ আছে, রোজ ডাক্তার দেখাতে হয়। ছেলে-মেয়েরা স্কুল, কলেজে যায়। তাদের পড়াশোনা কীভাবে করাবো জানি না। এখন আমাদের দাবি একটাই। সরকার সহায়তা করলেই আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো’।  

দীর্ঘদিন ধরে নিউ সুপার মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে চাকরি করেছেন নাফিজ উদ্দিন। সম্প্রতি মার্কেটের তিন তলায় একটি দোকান ভাড়া নিয়ে নিজেই ব্যবসা শুরু করেন। ‘লেবাস পয়েন্ট’-২ নামে ওই দোকানটিতে তিনি বিক্রি করতেন নানা রকম শার্ট ও প্যান্ট। অন্যদের মতো আগুনে তিনিও সব হারিয়েছেন।

নাফিজ বলেন, ‘আট বছর অন্যের দোকানে চাকরি করেছি। বাড়ি থেকে স্বজনরা বলতেন নিজে কিছু করার চেষ্টা করো। সবার উৎসাহ নিয়ে ব্যবসায় নেমেছিলাম। আমার ভাগ্যটা কত খারাপ। চার-পাঁচ মাস আগে ব্যবসা শুরু করি। এই ঈদটাই ছিল প্রথম মৌসুম। আর ঠিক এ সময়ে দোকানটা আগুনে পুড়ে গেছে। স্বজনদের কাছে থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এখন তাদেরকে কী জবাব দেব! ঈদটা পার করতে পারলে কিছু টাকা ক্যাশ হতো। সরকার যদি ফিরে তাকায়, আমরা আবার ব্যবসা শুরু করতে চাই। ’

ছেলেদের বিভিন্ন পোশাক বিক্রি করতেন মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী মো. জসিম। দুটি দোকানে প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। পানিতে ভিজে তার চার ভাগের তিন ভাগই নষ্ট হয়েছে। জসিমের মতে, যা হারিয়েছি তা আল্লাহ না চাইলে আর কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। একদিনের মধ্যে ফকির হয়ে গেলাম। আমাদের মাল প্রচুর লুটপাট হয়েছে। বের করার সময় যে যেভাবে পেরেছে সরিয়ে নিয়ে গেছে।  

নিউ সুপার মার্কেটের সাবেক সভাপতি সিরাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মার্কেটটির তিন তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু আর অবশিষ্ট নেই। দ্বিতীয় ও নিচ তলায় পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কেটের সব ব্যবসায়ী আজ পথে বসেছেন। এক ২৪৮টি দোকান মার্কেটে। কোটি কোটি টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন সরকার যদি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দিকে নজর দেয়, তাহলেই ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
এইচএমএস/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।