ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঊর্ধ্বমুখী মাছ-মাংসের বাজার, নাভিশ্বাস ক্রেতাদের 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
ঊর্ধ্বমুখী মাছ-মাংসের বাজার, নাভিশ্বাস ক্রেতাদের 

ঢাকা: দেশের বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংস, দেশি ও ব্রয়লার মুরগি এবং ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মাংসের সঙ্গে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মাছের দামও।

 

ফলে আমিষের চাহিদা মেটাতে এক প্রকার হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা।  

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে প্রতিকেজি গরুর মাংস গত এক বছর আগেও ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার মতো। এক বছরে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে গরুর মাংস বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। কোনো কোনো বাজারে যা ৮০০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে।  

টিসিবির হিসেবে, বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি  ১৮৫ থেকে ২১৫ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও এ দামে বিক্রি হচ্ছে না। বর্তমানে বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজিতে। এক বছরের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়।  

খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। দেশি মুরগির ডিম প্রতি হালি ৭৫ টাকা। এবং হাঁসের ডিমের হালি ৭০ টাকা।  

শুক্রবার (১২ মে) রাজধানীর মেরাদিয়া হাট, গোড়ান বাজার, খিলগাঁও রেলগেট বাজার, মহাখালী বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

অন্যদিকে খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। এক বছরে পণ্যটির ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। যা এক বছর আগেও বিক্রি হতো ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকায়।  

মাংসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নানা যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন বিক্রেতারা। বলছেন, বর্তমানে সবকিছুর দামই বেড়েছে। গোখাদ্য ও পল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম। ফলে খরচও আগের থেকে অনেক বেড়েছে। তাই মাংসের দামও বাড়তি।  

সরকারি হিসেবে, খোলা আটা, প্যাকেট ও খোলা ময়দা, ঘোলা এবং বোতল জাত সয়াবিন তেল, খোলা পাম অয়েল, ছোট মশুর ডাল, আলু, দেশী ও আমদানি পিয়াজ, দেশি ও আমদানি আদা, আমদানি রসুন, জিরা, ধনে, গরু, দেশি মুরগি, ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে দেশি রসুন, ব্রয়লার মুরগির মূল্য হ্রাস পেয়েছে। অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তীত রয়েছে।

বাজারে, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়৷ প্রতিকেজি গরুর কলিজা বিক্রি হচ্ছে একই দামে। শুধু মাত্র গরুর ফেফসা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।  

মেরাদিয়া হাটে গরুর মাংস বিক্রেতা মো. কবির ব্যাপারী বাংলানিউজকে বলেন, মাংসের বেচা-কিনি কমে নাই। বাঙালির মতন ভালো খাওইয়া পৃথিবীতে নাই। তবে গরিব ক্রেতা যারা আছে তারা কেউ মাংস খেতেই পারছে না। গরুর মাংসের দোকানের সামনে আপনি কোন গরিব মানুষ দেখতে পাবেন না। গরুর মাংসের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। প্রতিটা গরুর দামে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মতন বেড়েছে। ফলে আমরা এ দামে মাংস বিক্রি করেও পোষাতে পারি না। পাশাপাশি যারা কিনতেছে তাদেরও খুব চাপ হয়ে যাচ্ছে৷ 

তিনি বলেন, ভারত থেকে যদি গরু মাংস প্রসেস করে না এনে সরাসরি গরু নিয়ে দেশের বাজারে বিক্রি করা হয় তাহলে গরুর মাংসের দাম কমতে পারে। বর্তমানে বাজারে ১ কেজি ভূষির দাম ৭৫ টাকা। আর একটা গরু দিনে সর্বনিম্ন চার থেকে পাঁচ কেজি ভুসি খায়। প্রতিদিনে একটা গরুর পিছে খরচ ৫০০ টাকা, সে হিসেবে মাসে ১৫০০ টাকা খরচ। আর একটা গরু খাবার উপযোগী হইতে দুই বছর সময় লাগে। তাহলে চিন্তা করেন সেই গরুর দাম কত গিয়ে পড়বে।  

মুরগির বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছুদিন আগে ব্রয়লার মুরগির দাম কমে হয়েছিল ১৯০ টাকা কেজি। সেখানে কেজিতে ২০- ৩০ টাকার মতো বেড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। পাকিস্তানি ছোট সাইজের কক মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। আর বড় সাইজের কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা। লাল মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫০ টাকায়।  

এবিষয়ে খিলগাঁও বাজারের বিসমিল্লাহ ব্রয়লারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যারা মুরগি ব্যবসায় আছি আড়তে গেলে আড়তদাররা আমাদের কাস্টোমারই মনে করে না। তারা বলে যে দাম আছে নিলে নেন নাইলে চলে যান।  আমাদের যদি কাস্টমার ধরে রাখতে হলে তাদের থেকে মাল আনতেই হবে। আমরাও নিরুপায়।

বাজারে মুরগি কিনতে এসেছেন বেসরকারী চাকরিজীবী মো. রাশেদ।  তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক সপ্তাহ পরে বাজারে আসলাম এসে দেখি সবকিছুই বাড়তি দাম। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকার মতন বাড়ছে। সরকারি উচিত এ সকল পণ্যের দামের ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো। নাহলে আমরা সাধারণ ক্রেতা আছি তাদের খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  

মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাছ ১ কেজি ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ প্রতি কেজি ২৮০০ টাকায়। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকায়। দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের রুই মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০-৩৫০ টাকায়। শোল মাছ প্রতিকেজি ৬৫০ টাকা। শিংমাছ, বাইলা মাছ প্রতিকেজি ৬০০ টাকায়। আকার ভেদে প্রতিকেজি চিংড়ি ৬০০-৭৫০ টাকা।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
ইএসএস/এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।