ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

একাধিক গাড়ি থাকলেই গুণতে হবে ‘কার্বন কর’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
একাধিক গাড়ি থাকলেই গুণতে হবে ‘কার্বন কর’

ঢাকা: একাধিক গাড়ি থাকলেই বাড়তি করের আওতায় আসবে সেই গাড়ি। ‘কার্বন কর’ নামে অবিহিত হবে এই কর।

 

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটেই এই ‘কার্বন কর’র প্রস্তাব আসতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে এমনই তথ্য।

সরকারের বাড়তি করের যোগান, কার্বন নিঃসরণ কমানো, শহরের যানজট সমস্যার নিরসন এবং গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী অর্থবছর থেকেই প্রথমবারের মতো এ ‘কার্বন কর’ চালুর চিন্তা করছে সরকার।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এতে বলা হয়, এই কর ব্যবস্থার ফলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।

গত কয়েক বছর ধরে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যপূরণ হচ্ছে না। কিন্তু সরকারের উন্নয়ন অভীষ্ট বড় হচ্ছে। এ সময় কর বৃদ্ধির নানা রকম উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে; কর নেট সম্প্রসারণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কার্যত দৃশ্যমান ফল আসছে না। নতুন করে যোগ হয়েছে জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ।

এসব বিষয় মাথায় রেখেই রাজস্ব আদায়ের নতুন ক্ষেত্রের সন্ধানে এনবিআর। এ চিন্তা থেকেই রাজস্ব বাড়াতে নতুন ক্ষেত্রের চিন্তা-ভাবনা। সর্বোচ্চ ইঞ্জিন সক্ষমতার গাড়ির ভিত্তিতে কার্বন করের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ একাধিক গাড়ি থাকলে যে গাড়ির সিসি ক্ষমতা বেশি হবে, সেটির ওপর কার্বন কর ধার্য করা হবে।

যানজট ও কার্বন নিঃসরণ কমানোই এ করের অন্যতম লক্ষ্য।  

শহরের সড়ক বাড়ছে না, কিন্তু প্রতি বছর বিপুল হারে গাড়ি বাড়ছে। সেটাও আবার প্রাইভেট গাড়ি। তাই দ্বিতীয় প্রাইভেট গাড়ির ওপর বাড়তি কর বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে, যাতে গণগরিবহনের চাহিদা বাড়ে।

প্রস্তাবটি অনুমোদেনের জন্য রোববার (১৪ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করা হবে বলে জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়রে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

কার্বন নিঃসরণ কমাতে কার্বন কর বসানো একটি ভালো প্রস্তাব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্বব্যাংকও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের উদ্দেশ্য যদি হয় কার্বন নিঃসরণ কমানো, তাহলে এটা একটি ভালো প্রস্তাব। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় গাড়ি নয়, প্রথম গাড়িটিই কার্বন করের আওতায় আনা যেতে পারে। যদি সেটি হয় বেশি কার্বন নিঃসরণ করা গাড়ি; অর্থাৎ যদি হয় ডিজেল চালিত গাড়ি।

সরকারের রাজস্ব দরকার। তাই এটি রাজস্ব বৃদ্ধির জন্যও একটি বড় খাত হতে পারে।

কার্বন নিঃসরণ কমানো ও রাজস্ব বাড়ানো- এ কর বসানোর উদ্দেশ্য দুটিই হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বাংলাননিউজকে বলেন, কার্বন ট্যাক্সের আইডিয়াটা ভালো। কার্বন নিঃসরণ যদি এই ট্যাক্সের উদ্দেশ্য হয়, তাহলে দেখতে হবে কোন ধরণের গাড়িতে বেশি কার্বন নিঃসরন হয়। সেই গাড়িটি যদি ডিজেল চালিত হয়, তাহলে বেশি কার্বন নিঃসরণ করবে। পরিবেশের বেশি ক্ষতি করবে। এক্ষেত্রে যদি প্রথম গাড়িটিই হয় বেশি কার্বন নিঃসরণকারী ডিজেল চালিত গাড়ি হয়, সেটাতেই বাড়তি কর বসাতে হবে।

আর যদি দ্বিতীয় গাড়িতে বাড়তি কর বসানোই লক্ষ্য ঠিক করা হয়, সেটি যদি হয় ইলেট্রিক চালিত; আর প্রথমটি হয় ডিজেল চালিত, তাহলে তো সেটি কার্বন ট্যাক্সের আওতায় আসবে না। তেমনটা হলে বেশি কার্বন নিঃসরণ করা গাড়িটি বাড়তি ট্যাক্স থেকে অব্যাহতি পেলো। আর কম কার্বন নিঃসরণ গাড়িটি বেশি কর দিতে বাধ্য হলো। এমনটা হলে, কার্বন কর না হয়ে সম্পদ কর হয়ে গেলো; যোগ করেন বিশ্বব্যাংকের এই সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ।

ড. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, কার্বন ট্যাক্স নিঃসন্দেহে একটি ভালো আইডিয়া। বিশ্বের খুব বেশি দেশে এটা হয়নি। বাংলাদেশে এই ট্যাক্স কার্যকর হলে পরিবেশের ভাবনা থেকে একটি ভালো উদ্যোগ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
জেডএ/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।